মৌলভীবাজার জেলায় আমন ধানের বাম্পার ফলন, কৃষকদের মুখে হাসি
স্টাফ রিপোর্টার : মৌলভীবাজার জেলায় এ বছর আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসির ঝিলিক। তবে শ্রমিক সংকট ও ধানের ন্যায্য মূল্য নিয়ে হতাশায় রয়েছেন কৃষকরা। প্রতি বছর শ্রমিক সংকট থাকায় কৃষকরা সময়মতো মাঠ থেকে ধান ঘরে তোলতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন অনেক কৃষক। কৃষি বিভাগ বলছে কৃষকদের পূরোদমে যান্ত্রিক নির্ভর হলে খরচ কমার পাশাপাশি উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে।
আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় মহাখুশিতে গ্রাম-গঞ্জের কৃষক-কৃষাণীরা এক যোগে ধান সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। নতুন ধানের মৌ-মৌ গন্ধে যেন মূখরিত চারিপাশ। একদিকে মাঠ থেকে চলছে ধান সংগ্রহ এবং অপর দিকে বাড়ি বাড়ি চলছে মাড়াই কাজ। কৃষকরা মাঠ থেকে ধান কেটে বাড়ীতে নিয়ে আসছে। পুরুষরা ধান মাড়াই করছেন আর মহিলারা উঠান তৈরীসহ বাড়ীতে ধান সিদ্ধের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। আবার কেউ কেউ বোরো ধানের বীজ তলা তৈরী করে বীজ ফেলছেন। এই সময়ে গ্রামের প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে নতুন ধানের ঘ্রান। যাদের ক্ষেত নেই এমনকি তারাও কোন না কোনভাবে অংশিদারিত্ব পান নতুন ধানের। জেলার মাঠ জুড়ে এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
সদর উপজেলার আজমেরু গ্রামের বচ্চু মিয়া জানান, চলতি বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। পোকা মাকড়ের আক্রমন কম ছিল। ইঁদুরের আক্রমন বেশী থাকায় ঔষধ বেশী ব্যবহার করতে হয়েছে। কম্বান্ড হারভেস্টার দিয়ে ধান কর্তন করছি। এ পর্যন্ত ৬০ বিঘা জমির ধান কর্তন শেষ হয়েছে। কৃষি কাজে ব্যবহৃত হারভেস্টার, পাওয়ার টিলার ও ডিজেল ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশের দাম বেশী। হারভেস্টারের সামান্য কিছু সমস্যায় মেরামতের জন্য একটি কোম্পানী থেকে মেকানিক আসছিলেন। তারা কৃষকদের কাছে অত্যাধিক টাকা দাবী করেন ও নিয়ে যান।
ভূজবল গ্রামের কৃষক কাইয়ুম আবেদীন জানান, ৯ বছর ধরে তিনি নিয়মিত খেত করছেন। এবার প্রায় ৪৫ কিয়ার জমিতে আমনের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, প্রতি কিয়ারে ১৭ থেকে ১৮ মণ ধান আশা করছি। পোকা কিছুটা ছিল, ওষুধ দিয়েছি। তবে এবার ইঁদুরের উপদ্রব বেশি। তবে কয়েকনি আগা বৃষ্টির কারণে ধানগাল হেলে পড়েছে। এতে করে ধান কর্তনে সমস্যা হচ্ছে।
কৃষক রাজু মিয়া জানান, পোকা আক্রমন না থাকায় বিগত কয়েক বছরের মধ্যে জমিতে ভালো ফলন হয়েছে। ১০ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি দু’এক দিনের মধ্যে ধান কর্তন শুরু করবো। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে কয়েকদিনের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে ধান ঘরে উঠাতেও পারবো। ধান রাখার জায়গা না থাকায় মৌসুমের শুরুর ধান ৯‘শ থেকে সাড়ে ৯‘শ টাকার মধ্যে বিক্রি করে দিতে হয়। কিছু দিন পরে ধানের মূল্য বৃদ্ধি পায়।
আকরম মিয়া জানান, এ বছর তিনি কাঞ্জার হাওরে ৫ কিয়ার জমি বর্গা নিয়ে ছিলেন। আকস্মিক বৃষ্টিতে ৩ কিয়ারের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি জমিতেও আশানুরূপ ফলন হয়নি। এর কারণ হিসেবে জানান কুদালী ছড়া খনন না হওয়ায় পানি নিষ্কাশন হয়নি।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, আমন ধান চাষে এ বছর অনুকুল পরিবেশ ও পোকা মাকড়ের আক্রমন কম থাকায় ভাল ফলন হয়েছে। কৃষকরা যান্ত্রিক উপায়ে চাষাবাদ ও সময়মতো চারা রোপন করায় এ বছর ধানের উৎপাদন ভাল হয়েছে। এতে স্থানীয় কৃষকরাও খুশি। পর্যায় ক্রমে যান্ত্রিক নির্ভরশীল হলে শ্রমিক সংকট এক সময় থাকবেনা। পাশাপাশি উৎপাদন বাড়বে ও খরচ কমে যাবে।
মৌলভীবাজার কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: জালাল উদ্দিন বলেন, চলতি মৌসুমে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৮ হাজার ৩৫ হেক্টর। চাষাবাদও হয়েছে ৯৮ হাজার ৩৫ হেক্টর জমি। চলতি মৌসুমে পরিমিত বৃষ্টি হওয়ায় ধানের খাদ্যে ঘাটতি দেখা দেয়নি। এতে করে ফলন ভালো হয়েছে। পোকা মাকড়ের আক্রমন না থাকায় ধানে চিটা হয়নি। সার ও বীজ কৃষকরা সময়মতো পেয়েছেন। ফলন ভালো হওয়ায় ধান উৎপাদনের মাত্রা ঠিক থাকবে।
জেলায় আমন আবাদের এবার কৃষকেরা ব্রি-ধান ৪৯, ১০৩, ৫১ ও ৫২ জাতের বেশি চাষ করেছেন। এর মধ্যে শুধু ব্রি-ধান ৪৯ প্রায় ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এ ছাড়া বন্যার পানি মোকাবিলা করতে সক্ষম ব্রি-ধান, ২২ ও ২৩ জাতের ধান চাষ করেছেন অনেকে কৃষক। পূরোনো ব্রিআর-১১ ধান চাষ হয়েছে।
কৃষকদের দাবী সরকারি উদ্যেগে টেকসই ও উন্নতমানের ধান মাড়াই মেশিন, ডিজেল ইঞ্জিন, পাওয়ার টিলার সহ খুচরা যন্ত্রাংশ কম মূল্যে সরবরাহ করা। পাশাপাশি বিদেশ থেকে উন্নতমানের কম্বাইন হারভেস্টার, রাইস প্লান্টার মেশিন সরাসরি কৃষকদের মধ্যে কমমূল্যে সরবরাহ করলে উৎপাদন আরও বৃদ্ধি বাড়বে।



মন্তব্য করুন