কুলাউড়ার মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্রাসায় এখনও আওয়ামীলীগের কবজায় ব্যবস্থাপনা কমিটি

কুলাউড়া প্রতিনিধি : কুলাউড়া উপজেলার হাকালুকি হাওর তীরবর্তী গ্রামে ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাদে ভুকশিমইল মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্রাসা। পিছিয়ে পড়া এজনপদে ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে ভুমিকা রাখছিল এ প্রতিষ্ঠান। ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসারপর মাদ্রাসা দখলে নেয় এবং শিক্ষকদের বের করে তাদের মতাদর্শের শিক্ষক নিয়োগ দেয়। বর্তমান পরিচালনা কমিটি’র সকলই আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী। তথ্য গোপন করে জেলা প্রশাসকের চিঠি জালিয়াতি করায় সম্প্রতি সভাপতি ও সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন জেলা প্রশাসক। স্বৈরাচার পরিবর্তনের পর স্থানীয়রা উদ্যোগ নিলেও স্বৈরাচারের দোসররা সুযোগ দেয়নি। বরং স্থানীয় মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করার চেষ্টা করছে। এতো কিছু হওয়ার পরেও কার্যকরি উদ্যোগ নিচ্ছেনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বাদে ভুকশিমইল মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে রয়েছেন কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য যুক্তরাজ্য প্রবাসী ফজল আহমদ ফজলু, শিক্ষানুরাগী সদস্য মো: আব্দুল জলিল তুলা, যার মধ্যে শিক্ষার কোন প্রকার আলো নেই। তিনি কুলাউড়া উপজেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক এবং বৈষম্যবিরোধী একাধিক মামলার আসামি। দাতা সদস্য হিসেবে রয়েছেন সভাপতি ফজল আহমদ ফজলু’র আপন চাচা তনজব আলী। সুপারের পদ শূন্য থাকায় তিনি সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিও শিক্ষার আলোহীন। এলাকার সচেতন ও শিক্ষিত লোকদের পরিচালনা কমিটি কিংবা মাদ্রাসার কাছেই আসতে দেননি। যার কারণে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থী কমছে। বর্তমানে মাদ্রাসার ১০ ক্লাস মিলে ৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। এভাবে চললে মাদ্রাসা এক পর্যায়ে শিক্ষার্থী শুন্য হয়ে পড়বে বলে আশষ্কা এলাকাবাসীর।
এ সিন্ডিকেটের অদক্ষতা ও অযোগ্যতার কারণে মাদ্রাসা ৪৯ বছরেও এমপিওভুক্ত হয়নি। প্রবাসীদের অনুদানে চলছে। বিগত ১৫ বছরের আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব নেই। এলাকার মানুষের কাছেও তারা কোনো হিসাব দিতে চায় না। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের নীতিমালা অনুযায়ী মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি করা হয়নি। আওয়ামী সিন্ডিকেট ইচ্ছামাফিক মাদ্রাসা পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের চিঠি জালিয়াতি করে একটি ভুয়া কমিটি করে এবং বিষয়টি জেলা প্রশাসকের দৃষ্টিগোচর হলে তিনি পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো: ফজল আহমদ ফজলু ও সম্পাদক তনজব আলী’র বিরুদ্ধে গত ২০ মে কুলাউড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং ২৪)। জালিয়াতি চক্রের মূলহুতা মাদ্রাসার সুপার মো: মাছুম আহমদকে পুলিশে সোপর্দ করেন।
এদিকে সুপার মো: মাছুম আহমদ একই সাথে বাদে ভুকশিমইল মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে সরকারি অনুদান নেয়ার পাশাপাশি চৌধুরী বাজার দারুসুন্না মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত। সেখান থেকেও সরকারি বেতন নিচ্ছেন। বাদে ভুকশিমইল মাদ্রাসার ব্যাংক একাউন্ড তার স্বাক্ষরে পরিচালিত হয়।
একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, দীর্ঘ ২৫ বছর যাবত দাখিলের পাঠদান চলে আসলেও প্রতারক শিক্ষক মো: মাছুম আহমদ সহ আওয়ামী ঘরনার কয়েকজন শিক্ষক গ্রামের মানুষের অগোচরে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী এমপিওভুক্ত করতে চাচ্ছেন। ইতিমধ্যে তালিকায় নাম এসেছে। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী করতে তারা গোপনে প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন।
এমন প্রেক্ষাপটে এসেও গত ২৬ জুন গ্রামের মানুষকে উপেক্ষা করে এবং জালিয়াতি মামলা থাকার পরেও নীতিমালা বহির্ভুতভাবে এম আই হাসান শাকিল’কে সুপার ও মাওলানা ইকবাল হোসেনকে সহ-সুপার পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ দু’জনের বিরুদ্ধে ফ্যাসিষ্ট সরকারের সাথে সহযোগীতার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়োগে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কোনো নীতিমালা মানা হয়নি।
স্থানীয়রা বলেন, শিক্ষানুরাগী সদস্য মো: আব্দুল জলিল তুলা প্রতি বছর বাদে ভুকশিমইল গ্রামে ওরুসের নামে উলঙ্গ মহিলা এনে নাচ ও গানের আসর বসান। এরকম বিতর্কিত ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের দিয়েই এই মাদ্রাসা পরিচালনা করা হচ্ছে। এলাকার তরুণ শিক্ষিত যুব সমাজ মাদ্রাসার উন্নয়নে এগিয়ে আসলে তাদেরকে নানা প্রভাব খাটিয়ে দুরে রাখা হয় এবং অনেককে অপমান, অপদস্ত এমনকি হুমকিও দেয়া হয়।
গ্রামের প্রবীণ মুরব্বি ইসলাম উদ্দিন বলেন, বর্তমান পরিচালনা কমিটি সুযোগ না দেয়ায় এলাকার সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে বসা হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান কমিটি সুযোগ না দিলে কেউ ঝামেলা করতে পারবে না।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য সাহেদ আহমদ বলেন, মাদ্রাসা এখনও আওয়ামীলীগের লোকজনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আওয়ামীলীগ থেকে বের করে এলাকার সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছিল যুব সমাজ। বর্তমান সভাপতি আওয়ামীলীগ নেতা ফজল আহমদ ফজলু সহ একটি মহল এর পিছনে কাজ করছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাদ্রাসার যেকোনো উন্নয়নে আমি পাশে থাকব।
মৌলভীবাজার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: ফজলুর রহমান বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন ও সংস্কারের জন্য উপজেলা শিক্ষা কমিটি আছে, তারা এটা দেখবে। বিশেষ করে এ মাদ্রাসার বিষয়ে ইউএনও মহোদয় উদ্যোগ নিতে পারেন।
এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মহিউদ্দিন বলেন, নীতিমালা দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য করুন