কুলাউড়ায় অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে সেই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর মানববন্ধন

September 21, 2022,

মাহফুজ শাকিল॥ কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ বক্স বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও ঘুষবাণিজ্য, ৭ ইউপি সদস্যদের সাথে অসদাচরণ ও ইউনিয়নের নাগরিকদের হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগীরা।
বুধবার ২১ সেপ্টেম্বর দুপুরে উপজেলার হাজীপুরের কটারকোনা বাজারে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে গত ২৮ ও ২৯ আগস্ট গণমাধ্যমে ‘চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
মানববন্ধনে ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান রুমেলের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন প্যানেল চেয়ারম্যান (১) নুর আহমদ চৌধুরী বুলবুল, প্যানেল চেয়ারম্যান (২) আব্দুল মুকিদ, ২ নং ওয়ার্ডের সদস্য শাইস্তা মিয়া, ৭নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল মুনিমসহ স্থানীয় বাসিন্দা ও অন্যান্য ভুক্তভোগীরা।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া ভুক্তভোগী নেওয়ারুন বেগম (৬১), কনিজা বেগম (৬৮) বলেন, গত ৫ বছর ধরে ১০ টাকা কেজি দরে সরকারের বরাদ্দকৃত স্বল্পমূল্যের চালের কার্ডধারী ছিলাম। ওয়াদুদ বক্স চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর নতুন তালিকা থেকে আমাদের নাম বাতিল করা হয়েছে। চেয়ারম্যানকে টাকা না দেওয়ায় একাধিকবার ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে কোন কাজ হয়নি। উল্টো চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজন আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. শাহজাহান (৫৫), রেনু মিয়া (৫৬), আলতাফ হোসেন (৪০), আকবর আলী (৫৫) সহ একাধিক ভুক্তভোগী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্মসনদ নিবন্ধন ও নাগরিক সনদ নিতে গেলে চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্সের হাতে জনপ্রতি নগদ ৪০০ টাকা করে দিতে হয়। এছাড়া অনলাইন নিবন্ধনে আরো বাড়তি টাকা দিতে হয়। মেম্বারদেরকে বললে তাঁরাও চেয়ারম্যানের নির্ধারিত টাকা ছাড়া কিছুই করতে পারেন না। চেয়ারম্যান নিজ হাতে টাকা না পেলে কোন সনদেই স্বাক্ষর করেন না।
ভুক্তভোগী ইউপি সদস্যরা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, জনগণের ভোটে আমরাও নির্বাচিত হয়েছি। অথচ চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্স কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ও ইউপি সদস্যদের নিয়ে সভা না করে নিজের মনগড়া সিদ্ধান্তে ইউনিয়নের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। নাগরিক সনদ, জন্মসনদ ও ট্রেড লাইসেন্সেসহ সকল সনদে সরকার নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত চার থেকে পাঁচশ টাকা নির্ধারণ করেন। এসব ফি’র টাকা তিনি কোন রশীদ ছাড়া নিজ হাতে গ্রহণ করেন। উনার কাছে টাকা না দিলে কোন সনদে তিনি স্বাক্ষর দেননা। আমরা কিছু বলতে গেলে উল্টো আমাদের সাথে অসদাচরণ করেন। তাঁরা আরো বলেন, নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে চাল ক্রয়ে সুবিধাভোগীর নতুন তালিকা তৈরীতে ও ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ বন্টনে ইউপি সদস্যদের কোন মতামত ছাড়াই নিজের ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে সব তালিকা করেন এবং বন্টন করেন।
আমরা ৭ ইউপি সদস্য উনার প্রতি অনাস্থা জানিয়ে গত ২৮ আগস্ট মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা বরাবরে জমা দেই। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খতিয়ে দেখার কথা থাকলেও প্রায় তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্সের এসব অনিয়মের তদন্তের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি এখনো। যা নিয়ে জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্স বুধবার বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে সেটি ষড়যন্ত্রমূলক। ইউপি সদস্যরা আমার সাথে যা করছেন তা সম্পূর্ণ অন্যায়। ইউপি সদস্যরা জেলা প্রশাসকের কাছে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দিয়েছেন সেটার তদন্তে আমি যদি দোষী সাব্যস্ত হই তাহলে কর্তৃপক্ষ যে শাস্তি দিবেন সেটা আমি মেনে নিবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুর রহমান খোন্দকার বুধবার বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন পাওয়ার পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com