কুশিয়ারায় সেতু নির্মাণে ধুঁয়াশা, মৌলভীবাজার-রাজনগর-খেয়াঘাট সড়কের বেহাল দশা
স্টাফ রিপোর্টার : মৌলভীবাজার-রাজনগর-খেয়াঘাটবাজার সড়কটি সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কটির ধারণ ক্ষমতা ও চলাচলের মেয়াদ অনেক আগে শেষ হলেও তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই সংশ্লিষ্টদের। রাজনগর সদর থেকে মাত্র ১৭ কিমি দৈর্ঘ্য এ সড়কটি এলজিইউডি থেকে ২০১৯ সালে সড়ক বিভাগকে হস্থান্তর করা হলেও সংস্কারের মুখ দেখেনি এখনো। সড়কটি সংস্কারে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় গেলেও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তসহ দেশে বাজেট সংকোচ থাকায় সংস্কার কাজ না হতে পারে এমনটা জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের এক সূত্র।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের বহু অংশ নীচু থাকায় বিগত বছরের ভয়ানক বন্যা ও চলতি বছরের বন্যায় মনূ নদের বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে সড়কের পাশ^বর্তী কাওয়াদিঘী হাওরে পানি প্রবেশ করে সড়কের রাজনগর সদর,পাচগাঁও ও ফতেপুর ইউনিয়নের বহু জায়গা তলিয়ে যায়। ভারি যানবাহন চলাচল করে বহু জায়গা দাবিয়ে গেলে এতে যানবাহন চলাচল প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ভাঙ্গনের ফলে সড়েক দূর্ঘটনা কেবল বেড়েই চলেছে।
মৌলভীবাজার সড়ক বিভাগ জানায়, ২০১৯ সাল থেকে এলজিইডির কাছ থেকে মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগকে হস্থান্তর করা হলে উল্যেখযোগ্য কোন বড় বাজেট না আসায় তারা কেবল মাত্র ইট সলিং ছাড়া আর কোন সংস্কার কাজ করেননি।
সরেজমিনে গিয়ে আরও দেখা যায়, সড়কের প্রায় ৯০ ভাগ জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। এছাড়াও লাগাতার বৃষ্টি দেখা দিলে সড়কের রাজনগর সদর, মোকামবাজার,আজাদের বাজার, মধুরদোকানসহ বহু জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এছাড়ার সড়েক’র বিভিন্ন বাজার অংশে জবরদখল থাকায় সড়কটি দিন দিন আরও ছোট হয়ে আসছে। এতে প্রতিনিয়িত যানঝট লেগে থাকায় স্বাভাবিক নিয়মে সড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে পারে না। এই কারণে সড়ক এলাকার রাজনগর ও সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৩ লাখ মানুষ উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ব্যবসা-বানিজ্য থেকে পিছিয়ে পড়েছেন। সম্প্রতি সিলেটের সাথে মৌলভীবাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ করতে ওই সড়কের কুশিয়ারা নদীতে ফেরি চলাচলের প্রস্তাব পাঠানো হলেও সেটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ফেরি চলাচল ব্যবস্থা না থাকায় কুশিয়ারায় নৌকা নিয়ে যান চলাচলে নানা দূর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। ১৭ কিমি’র সড়কটি দুই লেনসহ আঁকা-বাঁকা জায়গা কেটে ভূমি অধিগ্রহণসহ সোজা করে সড়ক নির্মাণ ও কুশিয়ারায় সেতু তৈরি করতে ইতিমধ্যে সেতুর নকশাসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট দফতরে দুই জেলা মিলে ফাইল পাঠায় সড়ক বিভাগ। এতে খরচ ধরা হয় ১ হাজার কোটি টাকা।
সড়কের কিনারায় অবস্থিত কুশিয়ারা নদীর কয়েক স্থানকে সেতু নির্মাণের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলে শেষমেশ রাজনগর অংশের হামিদপুর ও নদীর ওপারের বালাগঞ্জ অংশের রাধাকোনা গ্রামের উপর দিয়ে সেতু নির্মিত হবে এমনটা চূড়ান্ত করা হয়। সড়ক বিভাগ’র প্রকৌশলীরা সরকারি উর্ধ্বমহল থেকে অনুসন্ধানসহ সেতুর নকশা তৈরি করেন। বর্তমানে সেতুর ডিজাইন কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও রাজনগর উপজেলা অংশের সেতুর সংযোগ সড়ক সংস্কার’র জন্য পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে। ওই প্রজেক্টটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে চূড়ান্ত হবার কথা থাকলেও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন আসলে আলোর মুখ দেখছেনা সড়কটি।
রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রার্থী আমীর আলী বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ সড়ক সংস্কার না হওয়াতে গাড়ি চলাচলে প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যার কারণে অটোরিক্সা ভাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে এবং বাস ঠিকমত চলাচল করতে পারছে না।
রাজনগর উপজেলা জামায়াতের আমীর আবুর রাইয়ান শাহীন বলেন, ওই সড়ক দিয়ে কুশিয়ারা পাড়ের দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করেন। সংস্কারের অভাবে দেশের বৃহত্তম পূজা মন্ডব “পাঁচগাও” এলাকায় পূজা উপলক্ষে সড়কের এক অংশ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এতে মৌলভীবাজার-ও বালাগঞ্জগামী যাত্রীরা গাড়ি নিয়ে মারাত্মক সমস্যায় পড়েন। সড়কটি সংস্কার করা এখন সময়ের দাবী।
জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও ফতেপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জামি আহমদ বলেন, ওই সড়কটি সংস্কারের অভাবে অচল হয়ে পড়েছে। দুই উপজেলার ব্যস্থতম সড়কটি অচিরেই সংস্কার করা প্রয়োজন।
এদিকে মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কায়সার হামিদ এ প্রতিবেদককে বলেন, সড়কটি মেরামতের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছে। “এডিশনাল সিলেট জোন থেকে এই দরপ্রত্র আহবান করা হয়েছে। বাজেট সংকোচ না হলে সংস্কার হবার সম্ভাবনা বেশি।
মন্তব্য করুন