চীনে পড়াশোনা শেষে বাড়ি না ফিরে মৌলভীবাজারের দূর্গম পাহাড়ের জঙ্গি আস্তানায় দুই প্রকৌশলী
বিশেষ প্রতিনিধি॥ চীনের ইয়াংজু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক পাস করেছেন দুই প্রকৌশলীা। তারা চীনেই থাকতেন। সম্প্রতি দু’জন কয়েকদিনের ব্যবধানে দেশে ফিরেন।
তবে বিমানবন্দর থেকে বাড়ি না ফিরে সোজা চলে যান মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ের টাট্রিউলী এলাকার জঙ্গি আস্তানায়।
১৪ আগষ্ট ওই দুই ব্যক্তি ২৪ বছর বয়সী রাহাত মণ্ডল ও ২৩ বছরের মেহেদী হাসান ওরফে মুন্নাকে স্থানীয়রা আটক করে আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়।
পরে পুলিশের কাউন্টার টেরিরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট অধিক তদন্তের জন্য এদের নিয়ে যায়।
কাউন্টার টেরিরিজম ইউনিট জানিয়েছে, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে নেমে শুরুতে সিরাজগঞ্জে জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র অন্যতম সদস্য চিকিৎসক সোহেল তানজিমের কাছে যান তারা।
পরে যান জঙ্গি আস্তানায়। সোহেল তানজিম সিরাজগঞ্জের খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ছিলেন।
তিনি সিরাজগঞ্জ সদরের পোড়াবাড়ি এলাকার বাসিন্দা হেলাল উদ্দিনের ছেলে। রাহাত গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রহিম মণ্ডলের ছেলে। আর মেহেদী মাদারীপুর সদর উপজেলার পূর্ব চিরাইপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল করিমের ছেলে।
স্থানীয় জেলা পুলিশ জানায়, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নে ১৪ আগস্ট জঙ্গি আস্তানা ছেড়ে পালানোর চেষ্টাকালে স্থানীয় লোকজন রাহাত মণ্ডল, মেহেদী হাসান, চিকিৎসক সোহেল তানজিম ও এক পঙ্গু জুয়েল মাহমুদ সহ তাদের সংগঠনের মোট ১৭ জনকে আটক করেন।
পরে তাদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর ঢাকা থেকে আসা কাউন্টার টেরিরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট এসে তাদের মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ লাইনসে নিয়ে যায়।
১৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে সিটিটিসি, সোয়াট, মৌলভীবাজারের গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ ও কুলাউড়া থানা-পুলিশের দল কর্মধার দুর্গম কালাপাহাড় এলাকায় নতুন জঙ্গি আস্তানার সন্ধানে অভিযান চালায়।
এ সময় অভিযানকারী দলের সঙ্গে রাহাত মণ্ডল ও আগের অভিযানে আটক হওয়া জঙ্গি সংগঠনটির আরেক সদস্য জামিল ছিলেন।
অভিযানকারী দলে থাকা সিটিটিসির উপ-কমিশনার এস এম নাজমুল হক বলেন, ‘রাহাত ও মেহেদী হাসান মেধাবী শিক্ষার্থী।
চীনে লেখাপড়ার সময় জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তারা কোনোভাবে জড়িয়ে পড়েন। চিকিৎসক সোহেল তানজিমের সঙ্গে আগে থেকেই তাদের যোগাযোগ ছিল।
রাহাত ১০-১৫ দিন আর মেহেদী হাসান মাসখানেক আগে বিমানের ফ্লাইটে দেশে ফেরেন। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে নেমে দুজন প্রথমে সোহেল তানজিমের বাড়িতে যান। পরে সোহেলের সঙ্গে কুলাউড়ার পূর্ব টাট্রিউলী এলাকার আস্তানায় চলে যান।’
দুই তরুণের দেয়া তথ্যের বরাত দিয়ে এস এম নাজমুল হক বলেন, ‘চীন থেকে ফেরার খবর তাদের স্বজনেরা জানেন না।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চিকিৎসক সোহেল তানজিম জানিয়েছেন, স্বাধীন নামের পাবনার এক যুবক তাকে এ সংগঠনে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করেন। সোহেল সংগঠন থেকে মাসে এক লাখ টাকা বেতন পেতেন।’
তিনি আরও বলেন, আটক ১৭ জনের মধ্যে এক কিশোর রয়েছে। যশোরের কোতোয়ালি থানার মোল্লাপাড়া আমতলা এলাকায় তার বাড়ি।
সে যশোর জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে ঢাকার নটর ডেম কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়। দ্বাদশ শ্রেণিতে উঠে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে যায়।এর পর স্বজনদের ছেড়ে জঙ্গি আস্তানায় চলে আসে।
সিটিটিসির উপ-কমিশনার প্রাথমিক তদন্তে শেষে এস এম নাজমুল হক বলেন, ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ সংগঠন পরিচালনায় অর্থের জোগান আসত মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে।
সংগঠনের সদস্য জামিল একসময় ওমানে থাকতেন। তার সঙ্গে কর্মধার পূর্ব টাট্রিউলির বাসিন্দা কাতার প্রবাসী রাশিদ আলীর পূর্বপরিচয় ছিল।
সেই সূত্রে রাশিদের কাছ থেকে পূর্ব টাট্রিউলীতে ৫০ শতক সরকারি খাসজমি কিনে সেখানে টিনসেড দিয়ে জঙ্গি আস্তানা করা হয়। তবে স্থানীয়রা বলছেন ওই কালাপাহাড় সহ দূর্গম পাহাড়ী এলায় অপরিত লোকজন দেখা যাচ্ছে।
একটি নিরর্ভযোগ্য সূত্রে জানা গেছে ওই এলাকা বা আশপাশের উপজেলায় আরও জঙ্গি থাকতে পারে। এটি নিশ্চিত হতে পারলে আবারও অভিযার চালাবে কাউন্টার টেরিরিজম ইউনিট।
মন্তব্য করুন