দুর্যোগ মোকাবেলা করেও দেশে এবার চায়ের রেকর্ড উৎপাদন

বিকুল চক্রবর্তী॥ করোনা মোকাবেলা করেও অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করে চায়ের বাম্পার ফলন হয়েছে। যা প্রমান করে দেশে চা শিল্পের সক্ষমতা বৃ্দ্িধ পেয়েছে। ১৯ জানুয়ারী বুধবার সন্ধায় বাংলাদেশ চা বোর্ড প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সঠিক ব্যবস্থাপনার ফলে করোনাকালেও ২০২১ সালে দেশের ১৬৭টি চা বাগান এবং ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান থেকে রেকর্ড পরিমাণ মোট ৯৬.৫০৬ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে যা গত বছরের (২০২০) চেয়ে ১০.১১১ মিলিয়ন কেজি বেশি। এ বছর (২০২১) চায়ের উৎপাদন অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে। পাশাপাশি শুধুমাত্র উত্তরাঞ্চলে সমতলের চা বাগান ও ক্ষুদ্র চা চাষ থেকেও এ বছর (২০২১) রেকর্ড পরিমাণ ১৪.৫৪ মিলিয়ন কেজি চা জাতীয় উৎপাদনে যুক্ত হয়েছে; যা গত বছর (২০২০) ১০.৩০ মিলিয়ন কেজি ছিল।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো: আশরাফুল ইসলাম, এনডিসি, পিএসসি জানান, কোভিড পরিস্থিতিতেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশের সকল চা বাগানের সার্বিক কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। সরকারের আর্থিক প্রণোদনা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ চা বোর্ডের নিয়মিত মনিটরিং ও পরামর্শ প্রদান, বাগান মালিক ও শ্রমিকদের নিরলস প্রচেষ্টা, সঠিক সময়ে ভর্তুকি মূল্যে সার বিতরণ, স্বাস্থ্য বিধি মেনে চা নিলাম কেন্দ্র চালু রাখা, চা শ্রমিকদের মজুরি, রেশন এবং স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণের ফলে ২০২১ সালে দেশের চা উৎপাদন অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িছে।
তিনি বলেন, কোভিড পরিস্থিতিতেও উৎপাদনের এ ধারাবাহিকতা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, চা শিল্পের সক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. রফিকুল হক জানান, চা বোডের বর্তামান চেয়ারম্যান নিদের্শনায় বেশ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ তাদের এ সফলতার পিছনে অনেকাংশেই কাজ করেছে। এ উৎপাদন ধরে রাখতে চা বোডের বর্তামান চেয়ারম্যান নিদের্শনায় চা বাগান গুলোতে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে চা চাষীদের ‘ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুলে’র মাধ্যমে চা আবাদ বিষয়ে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহের ফলে শুধুমাত্র সমতলের চা বাগান ও ক্ষুদ্র চা চাষ থেকে এ বছর (২০২১) গত বছরের (২০২০) তুলনায় ৪১ শতাংশ বেশি চা উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশ চা গবেষনা কেন্দ্রের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী বলেন, ২০২০ সালে দেশে ৮৬.৩৯৪ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। এবছর ১০ মিলিয়নের কিছু বেশি চা অতিরিক্ত উৎপাদন হয়েছে। তিনিও এর কারণ হিসেবে বর্তমান চেয়ারম্যানের সঠিক নেতৃত্ব ও দিক নির্দেশনা গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে জানান।
বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট ব্রান্স চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী জানান, এ বছর চায়ের উৎপাদন আরো বেশি হতো যদি উৎপাদন মৌসুম শুরুর দিকে চা শিল্প খড়ার মূখে না পড়তো। এর আগে ২০১৯ সালে দেশে রেকর্ড পরিমাণ ৯৬.০৬৯ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছিল। প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও করোনা মহামারির শুরুর বছর ২০২০ সালে উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছিলো। তিনি বলেন, চায়ের উৎপাদন অনেকটা প্রকৃতির উপর নির্ভর করতে হয়। এখন প্রায় বছরই তাদের প্রাকৃতিক দূর্যোগে পড়তে হয়। এই দূর্যোগ মোকাবেলা করেও তারা চেষ্টা করেন উৎপাদন ঠিক রাখার।
শ্রীমঙ্গল জেরিন চা বাগানের উপ-মহাব্যবস্থাপক সেলিম রেজা জানান, এবছর তুলনা মাফিক বৃষ্টির পরিমান ছিল কম। উৎপাদন ধরে রাখার জন্য কৃত্রিম সেচ দিতে হয়েছে। তবে পরিশ্রমের পর আশানুপ উৎপাদন হওয়ায় তারা খুশি।
মন্তব্য করুন