পল্লী বিদ্যুতের কান্ড, ব্যবহৃত ইউনিট নেই তবুও বিল ৩১৫ টাকা

May 9, 2023,

মোঃ সালেহ আহমদ (লিপক) মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভুতুড়ে বিলে সয়লাব হয়ে গেছে শ্রীমঙ্গল উপজেলা। বিলের কাগজে ব্যবহৃত ইউনিট শূন্য দেখালেও মোট বিলের জায়গায় লেখা হয়েছে ৩১৫ টাকা। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ গ্রাহকরা।

অফিস কর্তৃপক্ষ বিলের কাগজ ঠিক করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও ভুতুড়ে বিলের কোন সুরহা হচ্ছেনা গ্রাহকের। উপজেলার সিন্দুরখান বাজারের বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. রতি কান্ত রায়ের বিলের কাগজে দেখা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের বিলের কাগজে বর্তমান ইউনিট ছিল ১০ হাজার ৩৮০ টাকা। ফেব্রুয়ারী মাসের ১৬ তারিখে বিল প্রস্তুতির দিনও বর্তমান ইউনিট লেখা হয়েছে ১০ হাজার ৩৮০ টাকা। পূর্ববর্তী ইউনিটও ১০ হাজার ৩৮০ টাকা। ব্যবহৃত ইউনিট ০ লিখা রয়েছে।

অথচ সর্বমোট বিদ্যুৎ ব্যবহার লিখা হয়েছে ৫৫ ইউনিট! আর বিলের কাগজে মোট বিল লেখা হয়েছে ৩১৫ টাকা! পরবর্তি মার্চ মাসে দেখানো হয়েছে সর্বমোট বিদ্যুৎ ব্যবহার লিখা হয়েছে ৬০ ইউনিট। আর ফেব্রুয়ারী মাসের লিখা হয়েছে ৪০ ইউনিট। অথচ ফেব্রুয়ারীর বিলের কাগজে লিখা রয়েছে ব্যবহৃত ইউনিট ০, মোট বিদ্যুৎ ব্যবহার ৫৫ ইউনিট আর মোট বিল ৩১৫ টাকা! এমন তালবেতাল ভুতুরে বিলে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে গ্রাহকরা।

ব্যবহৃত ইউনিট থেকে অতিরিক্ত মিটার রিডিং লিখে বিদ্যুৎ বিল প্রদান করা প্রসংঙ্গে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার বরাবরে ২০২২ সালের ২৫ এপ্রিল  বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. রতি কান্ত রায় স্বাক্ষরিত এক আবেদনের বিবরণে জানা যায়, ডা. রতি কান্ত রায়ের নিজ নামে একটি আবাসিক বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে সিন্দুরখান বাজারস্থ বাসায়। যার হিসাব নং ১২২/১০৭০, মিটার নং-০০০৫৮৪৩৫।

মিটারটিতে ময়লার আবরনে অস্পষ্ট থাকায় মিটার রিডার গুরুত্ব সহকারে দৃষ্টি না দিয়ে তার মনগড়া বিল লিখে নেয়। বিষয়টি তাঁর নজরে আসলে রিডিংটা ভালো করে দেখার চেষ্টা করে তিনি বুঝতে পারেন, ব্যবহৃত ইউনিটের চেয়ে আনুমানিক ৭০০ ইউনিটের মতো অতিরিক্ত ইউনিট লিখে বিল দেয়া হচ্ছে এবং তিনিও সেসব বিল পরিশোধ করে আসছেন।

পরবর্তী মাসে যখন বিল লিখতে আসে তখন মিটার রিডারকে বিদ্যুৎ বিলের হিসাবে গড়মিল বললে, সেও মিটার ভালো করে দেখে এবং সততা পায়। অতিরিক্ত অব্যবহৃত ইউনিটগুলি হিসাব থেকে কর্তন করা এবং মিটারটি পরিবর্তন করার মৌখিকভাবে তাকে সহ বিদ্যুৎ অফিসের বিভিন্নজনকে বললে তাৎক্ষনাৎ তারা তা আমলে নেয়নি বা কোনপ্রকার পরামর্শও দেয়নি।

হঠাৎ করে গেল বছরের সালের জানুয়ারি মাসের ২২ তারিখ সিন্দুরখান পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন এসে পুরাতন মিটারটি খুলে একটি নতুন মিটার বসিয়ে দিয়ে যায়। সিন্দুরখান অফিসে গিয়ে অতিরিক্ত প্রায় ৭০০ ইউনিট বেশি লিখা বিল এর সমাধান না দিয়ে মিটারটি খুলে নিয়ে আসলেন কেন জানতে চাইলে তারা বলে শ্রীমঙ্গল অফিসে যোগাযোগ করার জন্য। বর্তমানে যে নতুন মিটারটি বসানো হয়েছে তার মিটার নং-১৩২৫৬৪৫।

ইতিপূর্বে ২০১৬ সালে এই মিটারেই অতিরিক্ত অনেক ইউনিট বেশি লিখে নিয়ে যায়। যা নজরে আসলে বিদ্যুৎ অফিসকে অবহিত করা হয় এবং পরবর্তীতে অতিরিক্ত ইউনিটের টাকাগুলি পরের কয়েকটা বিলে সমন্বয় করে দেওয়া হয়।

অতিরিক্ত ও অব্যবহৃত লিখা ইউনিটগুলিকে সমন্বয় করে না দিয়ে এবং কোন ধরণের সমাধান না করে উপরন্তু বিগত ২৫ জুন ২০২২ইং এজিএম (অর্থ-রাজস্ব) অঃ দাঃ মোঃ আবদুর রহিম স্বাক্ষরিত ২৭.১২.৫৮৮৩.৫০৬.০৪.০১৩.২২.৩৫৫২ স্মারক মূলে এবং গেল বছরের ১৪ ডিসেম্বর  সিন্দুরখান সাব জোনাল অফিসের এজিএম (ওল্ডএম) তারেক মাহমুদ স্বাক্ষরিত ২৭.১২.৫৮৮৩.৫০৬.০৪.০১৩.২২.৬৭৭০ স্মারক মূলে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরনের নোটিশ প্রেরণ করা হয়। শুধু বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. রতি কান্ত রায়-ই নয়। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষও পল্লী বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিল নিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. রতি কান্ত রায়ের ছেলে রিপন রায় বলেন, বিলের কাগজ ঠিক করে দিতে বললে অফিস কর্তৃপক্ষ বলেছে তাদের দেয়া বিলই পরিশোধ করতে হবে। ২০২৩ সালের একই বিলে কোথাও ০ ইউনিট, কোথাও ৫৫ এবং কোথাও ৪০ ইউনিট লিখে দিয়েছে।

কোনটা সঠিক? এর সমাধান না হলে আমরা কিভাবে বিল পরিশোধ করবো। এ রকম অবস্থা দেখে এজিএম সহ অফিস কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা এর কোন সুরাহা করে দেয়নি। এরকম ভাবে চলতে থাকলে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়বো। খুব দ্রুত কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমি এব্যাপারে পুরোপুরি জানি না। তবে অফিসে গিয়ে খোঁজ নিয়ে বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। অতিরিক্ত বিল আসলে পরবর্তী মাস থেকে অবশ্যই সমন্বয় করা হবে তদন্ত সাপেক্ষে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com