পৃষ্টপোষকতা অভাবে বিপর্যয়ের মুখে শেরপুরের অতিত ঐতিহ্য

February 27, 2018,

স্টাফ রিপোর্টার॥ সিলেট বিভাগের ৪টি জেলার মিলনস্থল ও নৌ-সড়ক পথে এলাকার প্রায় লক্ষাধিক বাসিন্দার একমাত্র ট্রানজিট পয়েন্ট শেরপুর। মূলত শেরপুর এলাকাটি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার অন্তগর্ত হলে এর চর্তুরপাশে জড়িয়ে রয়েছে সিলেটের ওসমানীনগর-বালাগঞ্জ ও হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ ছাড়াও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার একাধিক এলাকা। অপার মহিমায় ছোট এ শেরপুরের অনেক পরিচিতি থাকলেও সরকারী পৃষ্টপোষকতা সমাজ সচেতন নেতৃত্বের অভাবের ও বিত্তবানদের অবহেলার কারণে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় পঞ্চাৎমুখী হচ্ছে শেরপুর। বিপর্যয়ের মুখে পরেছে অতিত ঐতিহ্য। বর্তমান সরকারের শেরপুরে ইকোনোমিক জোন ঘোষনা দেয়ায় শেরপুর বাসির মনে আশার সঞ্জার হয়েছিল কিন্তুু বাস্তবে রুপান্তরিত হতে ধীর গতি থাকায় বিষয়টি নিয়ে হতাশার মধ্যে রয়েছেন এলাকাবাসী।

জানা যায়, কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী ৪টি জেলার মধ্যখানে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সর্বশেষ প্রান্তে শেরপুর অবস্থিত। বৃটিশ শাসনামলে পূর্বকাল থেকে কুশিয়ারা নদী আন্তর্জাতিক স্টিমার রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। জনতা, সুইপট, লার্ক নামক পন্যবাহী স্টিমারগুলো কুশিয়ারা নদী দিয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ যাতাযাত করত। যাতাযাতকারী স্টিমারগুলোর পন্য ওঠা নামানোর একটি স্টেশন ছিল শেরপুর। আসা যাওয়ার পথে শেরপুর স্টেশনে স্টিমার নোঙ্গর করে পন্য সামগ্রী খালাস ও উঠাত। কালের পরিবর্তনে কুশিয়ারা নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় স্টিমার চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কুশিয়ারা নদী হারায় আন্তর্জাতিক নৌপথের খ্যাতি। শেরপুর স্টেমার স্টেশন পরিনত হয় লঞ্চ ও ইঞ্জিন চালিত নৌকা ঘাট। সরকারী পৃষ্টপোষকতায় কুশিয়ারা নদী খনন করলে কুশিয়ারা হারাতো না আন্তর্জাতিক রুটের খ্যাতি, শেরপুর অর্জন করত নদীবন্দরের প্রসিদ্ধি। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে শেরপুরের নাম-ডাক দেশজুড়ে। সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই, শাল্লা ও জগন্নাথপুর, সিলেটের বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, হবিগঞ্জের নবিগঞ্জ, আজমিরীগঞ্জ ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বিশাল জনসমষ্টি শেরপুরকে স্থল ও নৌপথের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসাবে ব্যবহার করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়ত করত।

ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে, এশিয়ান হাইওয়ে ও নৌপথের  কল্যাণে শেরপুরের জৌলোস চাকচিক্য বৃদ্ধি পেলেও শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তেমন কোন উন্নতি সাধিত হয়নি। যা আধুনিক  জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতির যোগে বেমানান। প্রসাদমোদ বাড়ি,ইমারত বিশালাকৃতির মার্কেটের কমতি নেই এই শেরপুরে বিপুল জনসংখ্যক অধ্যুষিত শেরপুরে একটি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুইটি ব্যক্তি মালিকানাধিন কে জি স্কুলও একটি ছোট পরিশরে ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত ক্যাডেট মাদ্রাসা রয়েছে।মাধ্যমিক স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে আর্থিক ও সামাজিক নিরাপওাজনিত কারনে অনেক অভিবাভক ছাত্র-ছাত্রীদের দূরবর্তী জেলা ও বিভাগীয শহরের কলেজে ভর্তি করতে পারেন না। ফলে অনেক ছাত্রছাত্রী অকালে ঝরে পড়ে। সমাজের বৃওবান সমাজ সচেতন, সংস্কারমনা ব্যক্তিরা এগিয়ে এসে শেরপুর এলাকায় ভাল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  স্থাপনে ব্রতি হলে এলাকার শিক্ষা, সংস্কৃতি, মেধার বিকাশে ভুমিকা পালন করত। অন্যদিকে এখানে নেই কোন স্বাস্থ্য কেন্দ্র। স্বাস্থ্যসেবা বলতে হাতুড়ে চিকিৎসকের সেবা গ্রহন। জটিল রোগ ব্যাধিতে ২৫কিমি.ও ৩৮কিমি. দূরত্বে অবস্থান করা মৌলভীবাজার শহর নয়তো সিলেট শহরে যেতে হয়। শেরপুর বাজারে রয়েছে কমপক্ষে ২৫টি ফার্মেসি। এ ফার্মেসিগুলোতে ডাক্তার হিসেবে যারা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেন তারা কেউ এমবিবিএস(এ), কেউ এল এম এফ,কেউ বা ডিএমএফ। এসব চিকিৎচকের মধ্যে দুই একজন ছাড়া কেউ কোন সরকারী কিংবা বেসরকারী মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করা ডাক্তার নয়। 

অভিযোগ রয়েছে, চিকিৎসকদের মধ্যে অনেকেই এম, আর, আই থেকে শুরু এলাকায়  একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সব রকমের অনৈতিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারি উদ্যেগে শেরপুর এলাকায় একটি সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন সহ এসব ভুয়া ডাক্তারদের অপসারনে প্রশাসন একটু উদ্যোগী হলে এলাকার মানুষ অপচিকিৎসকদের হাত থেকে রেহাই পেত বলে জানান স্থানীয়রা।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com