সব বাঁধা পেরিয়ে লক্ষ্য পূরণের স্বপ্ন বড়লেখায় এগিয়ে চলার প্রত্যয়ে ১১২ বাইসাইকেল বালিকা

May 13, 2017,

আবদুর রব॥ বড়লেখার সীমান্তবর্তী শাহবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফাহিমা।
১১ মে বৃষ্টি¯œাত সকালে দাঁড়িয়েছিল উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে। চোঁখে মুখে আত্মবিশ্বাসের ছাপ। তার মত আরো ১১১ জন ছাত্রী একই উদ্দেশ্যে সমবেত। সবার মনে উৎসবের আনন্দ। এ আনন্দ পরীক্ষার ফলাফল প্রাপ্তি কিংবা উৎসবের নয়। এ আনন্দ ভিন্ন স্বাদের, লক্ষ্য পুরণে প্রতিকুলতাকে জয় করে এগিয়ে চলার বাহন বাইসাইকেল প্রাপ্তির। এখন থেকে প্রতিদিন মাধ্যমিক স্তরের এই ১১২ ছাত্রী বাইসাইকেল চড়ে বিদ্যালয়ে যাবে। এ যেনো স্বপ্ন পূরণের পথের মাইলফলক।
‘শিক্ষা নিয়ে গড়বো দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে মৌলভীবাজারের বড়লেখায় নারীর ক্ষমতায়নে উপজেলা পর্যায়ে মেয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাইসাইকেল বিতরণ প্রকল্পের আওতায় ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম আবদুল্লাহ আল মামুনের উদ্যোগে ১১২ জন ছাত্রীর হাতে এ বাইসাইকেল তুলে দেয়া হয়। যা সিলেট বিভাগের ৩৮ উপজেলার মধ্যে বিরল ঘটনা। প্রতিটি সাইকেলে রয়েছে আলাদা আলাদা পরিচিতি নম্বর।
উপজেলার দক্ষিণভাগ এনসিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের আদিবাসী (খাসিয়া) ছাত্রী লিলি খংলা, ওয়ান টেম্পাং পঃথমী ও কৌশল সুঙং জানায়, বন্ধের দিনে সাইকেল পেয়েছে। রোববার থেকে নতুন সাইকেলে চড়ে স্কুলে যাবে। পাহাড়ি দুর্গম এলাকা ৭নং খাসিয়া পুঞ্জিতে তাদের বসতবাড়ি। প্রতিদিন অটোরিকশায় (সিএনজি) স্কুলে যাওয়া আসা করতে ১৫০-২০০ টাকা লাগতো। সরকারীভাবে বাইসাইকেল পাওয়ায় এখন অনেক টাকা বাঁচবে এবং স্কুলও মিস হবে না।
সিলেট বিভাগে প্রথমবারের মতো এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার ড. নাজমানারা খানুম। ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ১০টি করে ১০০টি ও পৌরসভায় ১২ টিসহ মোট ১১২টি বাইসাইকেল ২৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানস্থলে কথা হয় শাহবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী লিজা আক্তারের সাথে। সে জানায় ‘সাইকেল পেয়ে তাহার খুব ভাল লাগছে। স্কুলে যেতে এখন গাড়ির অপেক্ষা করতে হবে না। গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে এত দিন স্কুলে যেতে দেরি হত। মাঝে মাঝে গাড়ি না পেলে স্কুলে যাওয়াও বন্ধ থাকত। চোখে মুখে এগিয়ে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস নিয়ে কথাগুলো বলছিল ফাহিমা।’


বড়লেখা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী সামিয়া সুলতানা। বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাসের সাথে নতুন সাইকেলটি সহপাঠীদের নিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছিল। সে জানায়, ‘আমি আনন্দিত। নারীর ক্ষমতায়নে এ সাইকেল প্রাপ্তি আমাদেরকে এগিয়ে নেবে সামনের দিকে। স্বপ্ন বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।’ ৭ম শ্রেণীর আরেক শিক্ষার্থী শামীমা আক্তার উর্মি জানায়, ‘আমি সদর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল ডিমাই থেকে আসি। প্রতিদিন অনেক টাকা গাড়ি ভাড়া দিতে হয়। সাইকেল পাওয়ায় স্কুলে যাতায়াতে সুবিধা হবে। এখন নিয়মিত স্কুলে যেতে সমস্যা হবে না।
সাতকরা কান্দি গ্রামের ফরিদা জান্নাত পিসি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীতে পড়ে। সে জানায়, ‘বৃষ্টির দিনে বিদ্যালয়ে আসতে কষ্ট হত। গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে হত। সিএনজি চালিত অটোরিকশায় আসতে হত। ৫জন যাত্রী না হলে ছাড়ত না। কোন সময় চালক অতিরিক্ত যাত্রী তুলতো। এখন গাড়ীর জন্য অপেক্ষার অধ্যায়ের সমাপ্তি হল।
জনপল জুনিয়র হাইস্কুলের ছাত্রী তামান্না বেগম বলে ‘আমি ভাবতেই পারছি না একটি সাইকেল পাব। একই স্কুলের ছাত্রী পলিনা বেগম বলে, ‘আমি ৫০ মিনিট পায়ে হেঁটে প্রতিদিন স্কুলে আসি, আবার হেঁটে বাড়ি যাই। সাইকেল পাওয়ায় হাঁটার কষ্টের অবসান হলো।
বাইসাইকেল বিতরণ অনুষ্ঠানে আসা উপজেলার ১ নম্বর বর্ণি ইউপি চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন জানান, ‘প্রত্যেক ইউনিয়নের যখন ১০জন মেয়ে বাই সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাবে তখন আলোড়ন সৃষ্টি হবে। একে অন্যকে অনুসরণ করবে এবং এটা নারীর ক্ষমতায়নে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করবে। এছাড়া এদের দেখাদেখি সক্ষম অভিভাকদের কাছ থেকে সাইকেল পেয়ে অন্যরাও এ অভিযাত্রায় অংশিদার হবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com