স্বৈরাচারী হাসিনা দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর জিয়া পরিবার ও বিএনপি’র ওপর চরম জুলুম নির্যাতন চালিয়েছে : কুলাউড়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ
মাহফুজ শাকিল/এস আর অনি চৌধুরী॥ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র জনতা বিতাড়িত করেছে। ইতিহাস বলে কথিত স্বৈরাচার কখনো ফিরে আসেনি। তাই বাংলাদেশে স্বৈরাচার হাসিনার প্রত্যাবর্তন দিবাস্বপ্ন। বিএনপি এমন কোন সংগঠন নয়, যাকে আপনি ইচ্ছে করলে ধাক্কা দিলে কিছু হয়ে যাবে। ওই স্বৈরাচারী হাসিনা দীর্ঘ ১৫ বছর জিয়া পরিবার ও বিএনপি’র ওপর চরম জুলুম নির্যাতন চালিয়েছে। বিনা অপরাধে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সাড়ে ৬ বছর জেলে রেখেছিলেন। বিনা চিকিৎসায় তাঁর জীবন প্রায় আশঙ্কাজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। মহান আল্লাহ পাকের অশেষ মেহেরবানিতে ও দেশের জনগণের দোয়ায় আজ তিনি (খালেদা জিয়া) দেশে আছেন আর স্বৈরাচারী হাসিনা ভারতে পালিয়ে জীবন বাচিয়েছেন। এটাই নিয়তির খেলা।
বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর বিকেলে কুলাউড়া ডাকবাংলো মাঠে উপজেলা ও পৌর বিএনপি আয়োজিত বিশাল কর্মীসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য উপরোক্ত কথাগুলো বলেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ভারতকে ইঙ্গিত করে বলেন, আজকে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে, বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তি বিনষ্ট করার জন্য উসকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে, তারা কি কখনো আয়নায় নিজের চেহারা দেখেছে। আপনারা গুজরাটে কি করেছেন, আপনারা পাঞ্জাবে কি করেছেন, আপনারা আজমীরে কি করার চেষ্টা করেছেন, আপনারা ত্রিপুরায় কি করতেছেন, আপনারা আসামে কি করছেন। একটা বার আপনারা আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখেছেন। আপনারা অন্যের চেহারার মাঝে দোষ খুঁজে বেড়ান। আজকে বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক। এই মৌলভীবাজার ও আখাউড়ায় হিন্দু-মুসলমান, খ্রিস্টান-বৌদ্ধ কোন ভেদাভেদ নাই। আমরা বিশ্বাস করি, আমরা হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান নয়, আমরা সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু নয়, আমাদের পরিচয় আমরা বাংলাদেশী। আমরা সকলে শহীদ জিয়ার উত্তরসূরী ও আদর্শের সৈনিক। আমরা আন্দোলনে ছিলাম, আছি, থাকবো।
আমাদের নেতা তারেক রহমান দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে নির্দেশনা হলো, মানুষের ভালোবাসা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে কাজ করতে হবে। সুখে-দুঃখে মানুষের পাশে থাকতে হবে। বিএনপি যে ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছে, তা বাংলাদেশের গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি সুসংহত ও সময়োপযোগী নীতিমালা হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই প্রস্তাবনায় গণতন্ত্রের বর্তমান সংকট নিরসন এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাগুলো নিয়ে একটি সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ৩১ দফা এক গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা হিসেবে উঠে এসেছে। ৩১ দফাকে জনগণের দফায় রুপান্তিত করতে পারলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে জনগণ তার অধিকার ফিরে পাবে, ভোটাধিকার ফিরে পাবে। সব বিপদ আপদে বিএনপি সবার আগে জনগণের পাশে দাঁড়ায় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বিএনপির নেতৃত্ব তারাই দিবে যারা সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। সবাইকে শহীদ জিয়ার সৈনিক হতে হবে। কোনো ব্যক্তির লোক না হয়ে শহীদ জিয়ার লোক হতে তিনি নেতাকর্মীদের আহবান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে লড়াই করেছে বিএনপি। বিএনপি এবং দুর্নীতি, বিএনপি এবং অন্যায় একসাথে চলবে না। ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ৩১ দফার ভিত্তিতেই আগামী দিনের বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবো।
মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহবায়ক সাবেক পৌর মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূনের সভাপতিত্বে ও আহবায়ক কমিটির সদস্য আনিসুজ্জামান বায়েছের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিলেট বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতা সিদ্দিকী, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য এম নাসের রহমান, সদস্য ভিপি মিজানুর রহমান মিজান, এ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শওকতুল ইসলাম শকু, জেলা আহবায়ক কমিটির সদস্য এবং কুলাউড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির সমন্বয়ক মোশাররফ হোসেন বাদশা, জেলা আহবায়ক কমিটির সদস্য ফখরুল ইসলাম প্রমূখ।
কুলাউড়া বিএনপির নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদীন বাচ্চু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদ, রেদোয়ান খান, সাইফুল আলম চৌধুরী, শামীম আহমদ চৌধুরী, বদরুজ্জামান সজল, সহ-সভাপতি আজিজুর রহমান মনির, কমর উদ্দিন আহমদ কমরু, যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, মইনুল হক বকুল, সাংগঠনিক সম্পাদক সুফিয়ান আহমদ, আব্দুল মুক্তাদির মুক্তার, দেলোয়ার হোসেন, আব্দুস সালাম, আব্দুল মন্নান, পৌর বিএনপি নেতা শামীম আহমদ, গাফফার চৌধুরী, ফয়জুর রহমান গোলাপ, হারুনুর রশীদ, কায়সার আরিফ, জেলা মহিলা দলের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সুফিয়া রহমান ইতি, উপজেলা যুবদল নেতা জুবের আহমদ খান, কাওসার আহমদ নিপার, আব্দুল মুহিত বাবলু, সিরাজুল ইসলাম রাজু, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রেজাউল আলম ভূঁইয়া খোকন, মুসা আহমদ সুয়েট, গিয়াস উদ্দিন মোল্লা, ছাত্রদল নেতা সুলতান আহমদ টিপু, তানজিল হাসান খান, সাইফুর রহমান, আতিকুল ইসলাম আতিক, সালমান হোসাইন, মৌসুম সরকার, হাবিবুর রহমান টিপু প্রমুখ।
দীর্ঘদিন পর কুলাউড়া ডাকবাংলো প্রাঙ্গনে বিএনপির কর্মীসভায় উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে এক জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
মন্তব্য করুন