৩৩ বছরেও শ্রীমঙ্গলে শেখ রাসেল শিশু উদ্যানটির উন্নয়নে কেউ এগিয়ে আসেননি
বিকুল চক্রবতী॥ আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষত। কথাটি মন্ত্রী, এমপি, ডিসি, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবারই জানা। কিন্তু শিশুদের উন্নয়নে শিশুদের বিনোদনের যোগান দিতে খুব জোড়ালো ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়না। শ্রীমঙ্গল একটি পর্যটন এলাকা হলেও এখানে নেই শিশু বান্ধব কোন স্থাপনা। এই পেক্ষিতে ১৯৮৪ সালে শিশু পার্ক প্রতিষ্টার জন্য শহরের জয়নগর পাড়ায় ১.৭০৮১ একর এনেমি প্রপাটিকে চিহ্নিত করা হয়। তখন এটি ছিলো একটি নিচু জায়গা। ১৯৮৫ সালে উপজেলা পরিষদ গঠন হওয়ার পর উপজেলা পরিষদ থেকে এর চারদিকে দেয়া হয় বাউন্ডারী। তৈরী করা হয় বসার কিছু ব্রেঞ্চ। এক পাশে মাটি খনন করে এর চার পাশ ভরাট করা হয়। কয়েক বছর পর এর নাম করণ করা হয় শেখ রাসেল শিশু উদ্যান। উদ্যানটি ঘোষনার এক বছরের মাথায় বাউন্ডারী ও কয়েকটি ব্রেন্স ছাড়া বিগত ৩৩ বছরে এর উন্নয়নে কেউই এগিয়ে আসেননি। বলাচলে দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে অভিভাবকহীন এতিমের মতো অনাদর আর অবহেলায় পড়ে আছে এটি।
শ্রীমঙ্গলের জয়নগর আবাসিক এলাকার গাঁ ঘেঁসে ও ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ সংলগ্ন ১.৭০৮১ একর জায়গা নিয়ে শেখ রাসেল শিশু উদ্যানের অবস্থান। তবে এটি শুধু নামেই শিশু উদ্যান। শিশু-কিশোরদের উপযোগী কিছুই নেই এখানে। সরকারি সহযোগীতা আর রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে উদ্যানটি একটি পরিত্যাক্ত ময়লার ভাগার হিসেবে পড়ে আছে।
শ্রীমঙ্গল সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেন মামুন বলেন, প্রতিবছর বিজয় মেলার নামে এই শিশু উদ্যানটি ব্যবহার করা হয় পুরো এক থেকে দেড় মাসের জন্য। সরকারের রাজস্ব আয় ফাঁকি দিয়ে এখান থেকে আসা লক্ষ লক্ষ টাকা গোটা কয়েক ব্যক্তিদের পকেটে গেলেও শিশু উদ্যানের কাজে ব্যয় হয় না এক টাকাও। বরং তাদের কুড়াকুড়িতে ও ময়লায় মাঠ আরও নষ্ট হয়ে পড়ে। পরবর্তিতে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সময় সাংস্কৃতিক কর্মীরা এটি ঠিক করেন।
এখানে শিশুদের জন্য শিশু একাডেমী করা যেতে পারে। এর এক পাশে হতে পারে শিল্প কলা একাডেমীর একটি ভবন। শ্রীমঙ্গল এর সংস্কৃতিকর্মীরা মিলে এখানে একটি মুক্তমঞ্চ তৈরী করেছেন। অবশ্য এটি প্রতিষ্টার সময় এক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য।
প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান করা হয় এর এক পাশে। উপজেলার সকল শিশুকিশোররা এখানে এসে বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় অংশ নেয় এবং বৈশাখী মেলায় আনন্দ করে। কিন্তু এই জায়গার অবস্থা এতই খারাপ যে সামান্য বৃষ্টি হলেই মাঠ পানিতে নিমজ্জি¦ত হয়। ফলে এখন প্রায় বছরই এখানে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়না।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আছকির মিয়া বলেন, তার সময়ে তিনি এর বাউন্ডারী করে দেন। এক পাশ থেকে মাটি কেটে অন্যপাশ ভরাট করে দেন। তবে বর্তমানে এর উন্নয়নের দাবীও রাখেন তিনি। তিনি বলেন, ১৯৮৪ সালে এই জমিটি দখলে আসছিলো কিছু লোক। সে সময় সার্বজনীন প্রচেষ্টায় তারা এটি দখল মুক্ত করেন এবং শিশু পার্কের জন্য এই স্থানটিকে নির্ধারণ করেন।
বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার জেলা সভাপতি অগ্নীরুদ্ধ দাশ টিটু বলেন, ‘প্রশাসন কিংবা ক্ষমতাশীল রাজনৈতিক দল ইচ্ছে করলেই শেখ রাসেল শিশু উদ্যানকে শিশুদের উপযোগী করতে গড়ে তুলতে পারেন। এখানে স্থাপন করা যেতে পারে শিশুদের বিনোদনের জন্য কিছু রাইডস।
এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের সদিচ্ছা প্রয়োজন। এখানে পুর্নাঙ্গ রুপে শিশু উদ্যান তৈরী হলে শিশুদের খেলাধুলা থেকে শুরু করে প্রতিদিনের বিনোদনের একটি নিদিষ্ট ঠিকানা হতো এটি। সাংস্কৃতিক কর্মীরা বলেন, প্রতিবছর মেলার নামে পকেট ভারি হয় দু’একটি মহলের, সংস্কার হয় না উদ্যানের।
বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, শেখ রাসেল এর নামে এই উদ্যানটি তৈরী করা হলেও এর তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। শ্রীমঙ্গলে শিশুদের জন্য একটি পার্ক খুবই প্রয়োজন। এই জায়গাটিতে শিশু উপযোগী একটি পার্ক করার জন্য জোড় দাবী জানান তিনি।
বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি সিমেন্টের বেঞ্চ ভাঙ্গা অবস্থায় রয়েছে, আর কয়েকটি কচু ও ঘাসে ঢেকে আছে। এক পাশে জঙ্গলাকৃত ঘন তৃণ। আর সংস্কৃতিকর্মীদের তৈরী মুক্তমঞ্চটি জরাজির্ন অবস্থায় পড়ে আছে। উদ্যানের ভিতরে রয়েছে একটি পরিত্যক্ত গর্ত যেটি মাঠকে সংর্কীণ করে রেখেছে। যেখানে কচুরিপানা আর ময়লা পানির দূর্গন্ধে আশেপাশের বাসিন্দারাও নাজেহাল। সীমানা প্রাচীরটির এক পাশ কিছু যায়গায় হেলে পরে গেছে। উদ্যানের প্রবেশদারটি সর্বদা তালাবদ্ধ থাকে। ফলে শিশুরা দেয়াল বা প্রবেশদার বেয়ে ঝুঁকি নিয়ে ভিতরে ঢোকে। কিছু কিছু শিশু দেয়াল ছিদ্র করেও এর ভিতরে প্রবেশ করে। উদ্যানের ভিতরে সাময়িক সময়য়ের কথা বলে তৈরী করা হয়েছে উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ কলেজের টিনসেডের একটি স্থাপনা। ভেতরে চড়ানো হয় গবাদি পশুও।
এবিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবাশশেরুল ইসলাম জানান, এটি ডিসি খতিয়ানের জায়গা(খাস জমি) । শেখ রাসেল শিশু উদ্যানের নামে আছে। পৌরসভার ভিতরে পড়ায় তারা কাজ করতে পারছেন না। তবে এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মহসীন মিয়া মধু বলেন, উপজেলা পরিষদ যদি পরিত্যক্ত শিশু উদ্যানটিকে পৌরসভাকে দিয়ে দেয় তাহলে পৌরসভার অর্থায়নে এ উদ্যানটিকে শিশুদের উপযোগী ডিজিটাল পার্ক হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন।
এ ব্যাপারে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পৃষ্টপোষকরা বলেন, বর্তমান সরকার সংস্কৃতি বান্ধব। এর উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন শুধু উদ্যোগ। এখানে যে কোন উদ্যোগ নিলে পাওয়া যাবে সরকারী সাহায্য, তার পাশাপাশি শ্রীমঙ্গলের মানুষও এর উন্নয়নে এগিয়ে আসবেন। তাই এই আগষ্টে শেখ রাসেলের প্রয়ানের মাসে শ্রীমঙ্গলের শেখ রাসেল শিশু উদ্যানটি সংরক্ষনে এগিয়ে আসার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যের দৃষ্টি আকর্শন করেন তারা ।
মন্তব্য করুন