৭১ থেকে ২৪ পর্যন্ত যারাই ক্ষমতায় ছিল তারা বৈ*ষম্য দূর করতে পারেনি- কুলাউড়ায় ইসলামী আন্দোলনের আমীর ফয়জুল করীম

May 10, 2025,

মাহফুজ শাকিল : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর (শায়খে চরমোনাই) মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন, ২০২৪ এর জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে বৈষম্য দূর হবে এই ভাবনায় আমরা সংগ্রাম করেছিলাম। রক্ত দিয়েছিল অনেকে, শাহাদাত বরণ করেছে, পঙ্গুত্ব বরণ করেছে অনেকে। ভেবেছিলাম এবার কোন বৈষম্য থাকবেনা, কিন্তু এবার কি দেখেছি, আবারো সেই চাঁদাবাজি, সেই জুলুম, সেই অত্যাচার, ডাকাতি, খুন-ধর্ষণ, আবারো নির্বিচারে মানুষ হত্যা এটাতো আমরা চাইনা। এজন্য মানুষ কি আন্দোলন করেছিল, জীবন দিয়েছিল। আমরা রক্ত দিচ্ছি, আন্দোলন-সংগ্রাম করার পরও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হচ্ছেনা কেন। এটা কেউ চিন্তা করেছে। কিয়ামত পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রাম করলেও বৈষম্য, চাঁদাবাজি, জুলুম বন্ধ হবেনা। এর কারণ কি? শুক্রবার ৯ মে বিকেলে কুলাউড়া ডাকবাংলো মাঠে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কুলাউড়া উপজেলা শাখা কর্তৃক আয়োজিত গণ সমাবেশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথাগুলো বলেন।

তিনি আরো বলেন, বিগত সময়ে অনেককে নমিনেশন দাখিল করতে দেয়া হয়নি, এই কাজ কিন্তু আওয়ামীলীগ করেছে, শেখ সাহেবও করেছিল। অনেককে নমিনেশন জমা দিতে দেয়নি, অনেককে ভোট কেন্দ্রে যেতে দেয়নি, ব্যালট চুরি, ভোট চুরি, বাক্স ছিনতাই এসব আওয়ামীলীগের পুরনো অভ্যাস। এটা কেউ জানতো না, না জেনে এজন্য তাদের ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। ৭১ এ ভোটের মর্যাদা না দেবার কারণে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম ঠিক শেখ সাহেব ক্ষমতায় বসার পর সেই কাজটা করেছেন। ভেবেছিলাম শেখ সাহেব বিদায় হলেও আমাদের শান্তি আসবে, আমরা মুক্তি পাবো, বৈষম্য দূর হবে কিন্তু আমরা কি দেখলাম ৭১-২৪ পর্যন্ত যারাই ক্ষমতায় ছিল তারা বৈষম্য দূর করতে পারেনি। মানুষের শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি, শ্রমিকদের মর্যাদা রক্ষা করতে পারে নাই, ছাত্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগ তৎকালীন সময়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছিল। তারা পুরো পাকিস্তানের ক্ষমতায় যাবে কিন্তু পাকিস্তানিরা তখন ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করছেনা, এই ভোটের অধিকার রক্ষা না করার কারণে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছিলাম। অথচও শেখ সাহেব ক্ষমতায় বসার পরেই সে মোস্তাক সাহেবকে (যে মোস্তাক সাহেবকে শেখ সাহেবের খুনি বলা হয়) সেই মোস্তাক সাহেবকে কে পাশ করিয়েছিল, কিভাবে পাশ করানো হয়েছে অধিকাংশ মানুষ আমরা জানিনা। কুমিল্লা থেকে হেলিকপ্টারে ভোটের বাক্স ঢাকায় নিয়ে তারপর তাকে নির্বাচিত করেছিল।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর ফয়জুল করীম আরো বলেন, ৭১ এ আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম, ভেবেছিলাম দুর্নীতি-বৈষম্য দূর হবে, জীবন থাকবেনা, অত্যাচার থাকবেনা, অবিচার থাকবেনা, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেই কিন্তু ৭১ এ আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম। বৈষম্য দূর করার জন্য আন্দোলন করলাম। ৭১ এর পরে আমরা আবার কি দেখলাম, আবারো বৈষম্য, জুলুম, চাঁদাবাজি, অত্যাচার বেড়েছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কুলাউড়া উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান, ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা আব্দুল মুক্তাদির ঢেউপাশী, মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, সহ-সভাপতি মাওলানা সোলাইমান আহমদ, সিলেট বিভাগীয় শ্রমিক আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আব্দুল মছব্বির, কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির  আহবায়ক রেদওয়ান খান, উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি বেলাল আহমদ চৌধুরী, জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ কুলাউড়ার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা নেজাম উদ্দিন, কুলাউড়া উপজেলা শাখার উপদেষ্ঠা হাফেজ মতিউর রহমান, জেলা যুব আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শাহি আলম, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ কুলাউড়া শাখার সভাপতি মুফতি শফিকুর রহমান, এনসিপি নেতা লিংকন তালুকদার, বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি জাহিদ আল ফেরদৌস, কুলাউড়া ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মুস্তাফিজুর  রহমান প্রমুখ।

উল্লেখ্য, কথিত নারী সংস্কার বিষয়ক কমিশন বাতিল, ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবে সংঘঠিত গণহত্যার বিচার, দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার, অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও তাদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষনা করা, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ভারতে ওয়াকফ আইন সংস্কারের নামে মুসলিম নির্মূলের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ এবং ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামী সমাজভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে এ গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com