কানাডার প্রাদেশিক নির্বাচনে ডলির জয় উচ্ছ্বসিত মৌলভীবাজার

স্টাফ রিপোর্টার॥ সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের স্থানীয় নির্বাচনে বাংলাদেশী বংশদ্ভোত ২০জন কাউন্সিলর নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার আনন্দ সংবাদের পর এখন নতুন করে যুক্ত হয়েছে ডলির বিজয়ে আনন্দ। এমন সুংবাদে ৩ জুন শুক্রবার সকাল থেকে তার পরিবার ও স্বজনদের সাথে আনন্দে উচ্ছ্বেসিত এজেলাবাসীসহ পুরো দেশ। কারণ তিনিই প্রথম বাংলাদেশী বংশদ্ভোত নারী যিনি কানাডার জনগণের বিপুল ভোটে ২য় বারের মতো জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। ডলি ২য় বারের মতো কানাডার প্রাদেশিক নির্বাচনে এমপিপি (মেম্বার অব প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্ট) নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েছেন। এমন খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন ডলিকে অভিনন্দন জানিয়ে তার প্রশংসা করছেন।
কানাডা প্রবাসী বিশিষ্ট কমিউনিটি লিডার মো: কামরুল ইসলাম ও গিয়াস মিয়া বলেন ডলির বিনয়ী স্বভাব, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, দল ও কমিউনিটির প্রতি তার উদার আন্তরিকতা তাকে পুন:রায় বিজয়ী করেছে। তার বিজয়ে সে দেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হল। এতে প্রবাসে থাকা নতুন প্রজন্ম সে দেশের স্থানীয় রাজনীতিতে অংশ নিতে উৎসাহবোধ করবেন। জানা যায় ডলি বেগম কানাডার ওন্টারিও প্রদেশের প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্ট নির্বাচনে টরেন্টো এলাকার স্কারবোরো সাউথ ওয়েস্ট আসন থেকে এমপিপি নির্বাচিত হয়েছেন। ২ জুন অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে তিনি নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) এর মনোনয়নে নির্বাচন করেন।
এর আগে কোনো বাঙালী কানাডার নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারেননি। তিনি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মনুমুখ ইউনিয়নের বাজরাকোনা গ্রামের সন্তান ডলি বেগম। তার দাদা মোঃ সোনা মিয়া। তিনি মনুমুখ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম মোঃ সুজন মিয়ার নাতনী (ভাগ্নার) মেয়ে। ডলির বাবা মোঃ রাজা মিয়া ৩ ভাইয়ের মধ্যে মেঝো। ডলির বড় চাচা আব্দুল মজিদ স্বপরিবারে লন্ডন প্রবাসী। আর ছোট চাচা আব্দুশ শহীদ দেশে থাকেন। তার নানা বাড়ি রাজনগর উপজেলার হরিনাচংগ্রামে। ডলি বেগম রাজা মিয়া ও জবা বেগম দম্পত্তির বড় সন্তান। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে ডলি বেগম বড়। তার ছোট ভাই মহসিন আহমদ সে দেশে ব্যবসা করছেন। ডলির স্বামী কানাডা প্রবাসী রেজুওয়ানুর রহমান। ১৯৯৮ সালে ডলি তার বাবা মায়ের সাথে কানাডায় পাড়ি জমান। অবশ্য তার বাবা এর আগে থেকে কানাডা প্রবাসী ছিলেন।
ডলি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মনুমুখ বাজরাকোনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখা পড়া করেন। এরপর মনুমুখ পিটিআই বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে অধ্যায়ণরত থাকা অবস্থায় কানডা চলে যান। সেখানে কানাডার গর্ডন এ ব্রাউন মিডল স্কুল ও ডব্লিউ এ পোর্টার কলিজিয়েট ইনস্টিটিউট কৃত্বিত্তের সাথে উত্তীর্ণ হন। এরপর ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো (সেন্ট জর্জ) থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অনার্স সম্পন্ন করেন। এরপর লন্ডনের বিশ্বখ্যাত ইউসিএল বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডেভেলপমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এন্ড প্লানিং বিষয়ে মাস্টার্স করেন। ছাত্রজীবনে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন ডলি। তিনি স্কুল জীবন থেকে নানা বিষয়ে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতির প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তাই ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির মাধ্যমে মানুষের কল্যাণেও নিবেদীত হন এবং অতি অল্প সময়ে সবার পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন। তিনি স্কারবোর হেলথ এলায়েন্সের কো-চেয়ারম্যান হিসেবেও কাজ করেছেন। কমিনিটির কল্যাণেও নিবেদীত ছিলেন তিনি। ডলি প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভ পার্টির (পি.সি) ব্রেট স্নাইডারকে প্রায় ৬ হাজার ৫শ ১৮ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। ওই আসনে ৩৩৮৭৮ বোটের মধ্যে ডলির পান ১৫৯৫৪ ভোট (৪৭.১ শতাংশ)। ৩য় হন ভারতীয় বংশদ্ভোত লিছা প্যাটেল এলআইবি দলের হয়ে পান ৬৩৫৬ ভোট। শুক্রবার সকাল থেকে মৌলভীবাজারসহ মনুমুখ বাজরাকোনা গ্রামে চলছে উৎসবের আমেজ। তারা ডলির এমন বিজয়ে আনন্দে উদ্বেলিত। ডলি বেগমের ছোট চাচা মুনমুখ ইউনিয়নের বাজরাকোনার বাসিন্দা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সদর উপজেলার ডাইরেক্টর মো: আব্দুস শহিদ মানবজমিনকে বলেন ডলি বেগম কানাডার জনপ্রনিধি নির্বাচিত হওয়ায় তার দল, দেশ ও প্রবাসীদের মতো তিনিও আনন্দিত। এই প্রথম বাংলাদেশী একজন নারীকে ২য় বারের মতো সে দেশের এমপিপি নির্বাচিত করার সম্মানিত ভোটারদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন ডলি তার বাবা মা ও ভাই প্রায়ই দেশে আসেন। দেশে আসলে তারা গ্রামের বাড়িতেই বসবাস করেন। ডলিরও জন্মমাটি ও দেশের প্রতি যথেষ্ট টান রয়েছে। তিনি দেশ ও প্রবাসে থাকা বাংলাদেশী ও মৌলভীবাজারের নাগরিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ডলির জন্য সবার কাছে দোয়া চান।
মন্তব্য করুন