কুলাউড়ায় কোটা আন্দো*লনের অনুদান ঘিরে ফুঁসছে ছাত্রজনতা

May 10, 2025,

কুলাউড়া প্রতিনিধি : ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঢেউ লেগেছিল কুলাউড়া উপজেলাতেও। ছাত্রজনতার বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করলেও, আন্দোলন সমাপ্তির প্রায় সাড়ে ৯ মাস পর সরকার ঘোষিত আর্থিক অনুদান বিতরণকে ঘিরে কুলাউড়ায় উঠেছে তীব্র অনিয়মের অভিযোগ।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আহত না হয়েও অনেকে সরকারি আর্থিক অনুদান হিসেবে ১ লাখ টাকা করে পেয়েছেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

জানা যায়, গত ৮ মে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এর আওতায় আহতদের মধ্যে চেক বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক মো: ইসরাইল হোসেন। জেলার বিভিন্ন উপজেলার সঙ্গে কুলাউড়া উপজেলার ২৮ জন ব্যাক্তি এ অনুদান পান।

তবে কুলাউড়ার একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, আন্দোলনের সময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া প্রকৃত আন্দোলনকারীরা তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। বরং যারা আন্দোলনের সময় উপস্থিতই ছিলেন না তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ‘আহত’ হিসেবে।

আন্দোলনকারীদের দাবি, কুলাউড়ায় বড় কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি, তেমন কেউ গুরুতর আহতও হননি। তবে কিছু শিক্ষার্থী পুলিশের মামলার শিকার হয়েছেন। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে আহতদের তালিকা কীভাবে তৈরি হলো?

জানা গেছে, সরকার ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন করে আন্দোলনে আহতদের সুচিকিৎসার লক্ষ্যে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। ফাউন্ডেশনের উপজেলা পর্যায়ে আহবায়ক ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সদস্য সচিব হিসেবে ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা মইনুল ইসলাম ও আরমান রফিক।

অভিযোগ উঠেছে, তালিকায় প্রকৃত আন্দোলনকারীদের নাম না থাকায় ছাত্র প্রতিনিধিদের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তবে মইনুল ইসলাম দাবি করেন, আমরা সাতজনকে আহত হিসেবে শনাক্ত করে তাদের তথ্য হাসপাতালে জমা দিয়েছি।

এদিকে ৮ মে বিকেলে অনুদানপ্রাপ্তদের তালিকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছেন বঞ্চিতরা। অনেকেই ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে প্রমাণ তুলে ধরছেন- অনেকে আন্দোলনে উপস্থিতই ছিলেন না, অথচ তারা অনুদান পেয়েছেন।

কয়েকজন আন্দোলনকারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জুলাইয়ের বিক্ষোভে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি, মামলার শিকার হয়েছি, এখন দেখি যারা সেসময় দূরে ছিলেন তারাই অনুদান পাচ্ছেন! প্রশাসন কাদের পুরস্কার দিচ্ছে? এই অনিয়মের নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত আহতদের যেনো সম্মান ও অনুদান দেওয়া হয় এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে অনুদান নেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন তারা।

অনুদানপ্রাপ্তদের মধ্যে কয়েকজন দাবি করেছেন, তারা গত বছরের ৪ আগস্ট মৌলভীবাজারে আয়োজিত আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় আহত হয়েছিলেন।

আন্দোলন চলাকালে গ্রেপ্তার হওয়া কুলাউড়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মৌলভীবাজার জেলা শাখার অন্যতম সমন্বয়ক ওসমান গণি জানান, আমার জানামতে, কুলাউড়ায় তেমন কোনো বড় ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেনি। শুধুমাত্র মৌলভীবাজার জেলা সদর ও জুড়ী উপজেলায় শিক্ষার্থীরা হামলার শিকার হয়েছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাকির হোসেন বলেন, আমরা আহতদের একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছি। পরে যাচাই-বাছাই করে উপযুক্তদের অনুদান দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শাহ জহুরুল হোসেন বলেন, এই তালিকা ছাত্র প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এখানে উপজেলা প্রশাসনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com