কুলাউড়া পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান

মাহফুজ শাকিল : কুলাউড়া পৌরসভায় জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে কয়েকটি দাবি জানিয়েছেন পৌর নাগরিকবৃন্দ একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার ১৭ জুন দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মো: মহিউদ্দিন বরাবরে স্মারকলিপিটি জমা দেন পৌর এলাকার বাসিন্দা খন্দকার আব্দুস সোবহান, মাহমুদুর রহমান ইমরান, কাজী ফখরুল ইসলাম, খন্দকার নূর এ জামান, হোসাম উদ্দিন আহমদ, আব্দুল্লাহ আল মাহবুব, মাওলানা অজিউর রহমান আসাদ, মুহাইমিনুর রহমান, হারুনুর রশীদ, আব্দুস ছালাম, জাহের আলম চৌধুরী, খন্দকার লিটন, মিশকাত মজিদ রুহিন, জাকির হোসেন, ফরহাদ মাহমুদ, সৈয়দ আবুল হোসেন, নাজির আহমদ, মো. ইমরান, আব্দুল মান্নানসহ প্রায় শতাধিক ব্যক্তি। এছাড়া অনুলিপি দেয়া হয়েছে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে।
স্মারকলিপিতে সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছরের বর্ষা মৌসুমে বন্যায় কুলাউড়া পৌর এলাকায় বন্যা দেখা দেয় এবং দীর্ঘ জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। ২০২২ ও ২০২৪ সালের বন্যায় পৌর এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ি পানির নিচে নিমজ্জিত থাকে। পৌর এলাকার ইয়াকুব তাজুল মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, কুলাউড়া দারুস সুন্নাহ মডেল দাখিল মাদরাসা, জামিয়া মুহাম্মদিয়া আহমদাবাদ মাদ্রাসা, রাবেয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সী-বার্ড কিন্ডার গার্টেন, আল হেরা স্কুল, মুহিবুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এছাড়া পৌর এলাকার রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠে বছরের ৩ থেকে ৪ মাস পর্যন্ত। ফলে দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাহত হয় কার্যক্রম। শহরে যাওয়ার একমাত্র বাহন হয়ে উঠে নৌকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ট্রলি, ভ্যানগাড়ি যা রাস্তার উপর দিয়ে চলে শহরের উত্তরবাজার পর্যন্ত। দীর্ঘস্থায়ী ও বৃহৎ জলাবদ্ধতার ফলে পৌরবাসীকে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। এমনকি ফসলি জমি দীর্ঘদিন পানিতে তলিয়ে থাকায় কৃষকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন। প্রতি বছর হাওর এলাকায় ও পৌর এলাকায় প্লাবিত জমিতে ধানসহ ফসল চাষ করা সম্ভব হয়না। বন্যার পানি দীর্ঘদিন জমে থাকায় রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এবং পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া, চর্মরোগ সহ বিবিধ রোগের প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। কৃষি, মৎস্য ও পশুসম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হওয়ায় দরিদ্রতা বাড়ছে।
রাস্তাঘাট উচুঁকরণের দাবিঃ পৌরসভার ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ড সম্পূর্ণ, ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড আংশিক প্লাবিত হয়ে রাস্তাঘাট পানির নিচে চলে যায়। ফলে রাস্তা চলাচলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় নাগরিকদের। জরুরী প্রয়োজনে কিংবা চিকিৎসার জন্য যাতায়াত করা দুষ্কর হয়ে পড়ে। এছাড়া প্রায় ৪ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী পাঠদান থেকে বঞ্চিত থাকে। পৌর এলাকার রাস্তাগুলো ২০২২ ও ২০২৪ সালের ফ্লাড লেভেল পর্যন্ত উচুঁ করলে পৌর নাগরিকদের এই সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করেন নাগরিকরা।
বুড়িকিয়ারী বাঁধ অপসারণের দাবি ঃ সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বুড়িকিয়ারী বাঁধের কারণে হাকালুকি হাওরের পানি কুশিয়ারা নদীতে স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হতে পারছে না। পানি প্রবাহের যে গতিপথ সেদিকে উভয়পাশে দুটি ব্রিকস ফিল্ড থাকায় পানির প্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। পলি জমে ও ব্রিকস ফিল্ড এর অবশিষ্ট অংশ এই প্রবাহ পথে ফেলায় ও নিয়মিত ডেজিং না হওয়ায় পানির প্রবাহ আরো কমছে। এর ফলে পানি জমে পৌরসভাসহ হাকালুকি পাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্থ। এই বাধের ফলে পানির প্রবাহে বাধা, হাওরের জীববৈচিত্র্য যেমন হুমকির মুখে, একই সাথে জলাবদ্ধতায় সৃষ্টি হয় অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত বিভিন্ন সমস্যার। তাই দীর্ঘ জলাবদ্ধতা নিরসনে সেই বুড়িকিয়ারী বাঁধটি আপসারণ করে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
নদী ড্রেজিং ও সংস্কার ঃ কুশিয়ারা, ধলাই ও মনু নদীর গভীরতা ও প্রবাহ বাড়াতে নিয়মিত ড্রেজিং না করার ফলে উজানের পানি দ্রুত নিষ্কাশিত হয় না। উল্লেখিত নদীগুলো ড্রেজিং, খনন ও দখল মুক্ত করলে উজানের পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ফলে বন্যার আশংকা কমবে বলে আশা করা যাচ্ছে যা বিভিন্ন হাইড্রলজিক্যাল স্টাডিতেও প্রমাণিত।
উপরোক্ত সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের জন্য কুলাউড়া অঞ্চলকে সরকারি ভাবে দূর্যোগ কবলিত এলাকা ঘোষণা করে পৌরসভার পক্ষ থেকে জরুরি প্রকল্প হাতে নেওয়াসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগের সাথে সমন্বয় করে তা বাস্তবায়নের জন্য দাবি জানিয়েছেন নাগরিকবৃন্দ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মো. মহিউদ্দিন বলেন, কুলাউড়া পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে কয়েকটি প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা নিরসনে আরো বেশ কিছু প্রকল্পের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পৌর নাগরিকদের দেয়া স্মারকলিপিটি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
মন্তব্য করুন