খাদ্যে ভেজাল ও প্রচলিত ভেজাল নির্ণয় করার কৌশল
স্টাফ রিপোর্টার॥ যে পদার্থ খাদ্যকে অনিরাপদ, নিকৃষ্টমানের বস্তুর বাহক করে তুলতে ব্যবহার করা হয় তাকে ভেজাল বলা যায়। খাদ্যে ভেজাল মিশানো হলো এমন একটি কাজ যেখানে ইচ্ছাকৃত ভাবে খাবারে নি¤œমানের বস্তু মিশানো হয় অথবা কিছু মূল্যবান খাদ্য উপাদান অপসারন করে খাদ্যের গুনগতমান কমিয়ে বিক্রি করা হয়। ভেজাল মিশানো খাদ্য বিপদজনক। কারণ এটা খাদ্যকে বিষাক্ত করে এবং স্বা¯েহ্যর উপর বিরুপ প্্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।ভেজাল খাদ্য পরিমানে বৃদ্ধি ও তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থেকেও বঞ্চিত করতে পারে। সাধারণতঃ ভেজাল মিশানো হয়, এমন খাদ্যগুলি হলো দুগ্ধজাত খাদ্য, দানাদার শস্য, আটা, ডাল, বেসন, ভোজ্যতেল, মশলা(আস্ত এবং গুঁড়া), কফি, চা, মিষ্টান্ন(কনফেকশনারি), বেকিং পাউডার, অন্য পানীয়, ভিনিগার এবং কারি পাউডার।
বালি, মার্বেলকুচি, পাথর, মাটি, অন্যান্য ময়লা, কাঁচের মত পদার্থ, চকের গুড়া, পানি, খনিজ তেল, ফর্মালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ক্ষতিকারক রং ইত্যাদি ভেজাল খাদ্যে অসৎ উদ্দেশ্যে মিশানো হয়। আবার রোগ ও পোকা দমনকারী ঔষধের অবশেষ, ইঁদুরের বর্জ্য, লার্ভা ঘটনাচক্রে খাদ্যে ভেজাল হিসাবে মেশানো হয়। সাথে থাকে ধাতব ধূষক অর্থাৎ পানির মধ্যে থাকা সীসা, দস্তার খেলনা, রং, রাসায়নিক কারখানার বর্জ্যপানি ইত্যাদি।
ওজন বৃদ্বির জন্য সুজিতে মেশানো হয় লৌহচূর্ণ। একটি চুম্বক সুজির মধ্যে ঘুরালে লৌহকণা চুম্বকের গায়ে উঠে আসবে। ডালে ভেজাল হিসাবে মেশানো হয় লেড ক্রোমেট। ৫ গ্রাম ডাল ৫ গ্রাম পানির সাথে মিশিয়ে ভালো করে নাড়াতে হবে। তারপর , কয়েক ফোঁটা হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড যোগ করতে হবে। মিশানোর পর রং গোলাপী হলে বুঝতে হবে ডালে লেড ক্রোমেট আছে। গুড়ে মেশানো হয় মেটানিল ইয়োলো এবং চকের গুঁড়া। গুড়ের দ্রবনে কয়েক ফোঁটা হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড যোগ করলে দ্রবনের রং ম্যাজেন্টা (লাল-নীল) হলে মেটানিল ইয়োলোর অস্তিত্ব থাকে এবং একটি টেস্ট টিউবে গুড় অল্প পরিমানে দ্রবীভূত করতে হবে, চকের গুঁড়া থাকলে টেস্ট টিউবের তলায় থিতিয়ে পড়বে।
ঘি / মাখনে ভেজাল হিসাবে মেশানো হয় বনস্পতি (ডালডা জাতীয়)। ১ চা চামচ চিনি, ১০ মিলি হাইড্রোক্লোরিক এসিড দ্রবীভূত করতে হবে। তারপর ১০ মিলি ঘি গলিয়ে তার মধ্যে যোগ করে ১ মিনিট ভালোভাবে নাড়াতে হবে। মিশ্রণটি ১০ মিনিট ঝাঁকাতে হবে। মিশ্রণটিকে ১০ মিনিট রেখে দিলে জলীয় অংশ যদি লাল রং ধারণ করে তাহলে বুঝতে হবে বনস্পতি আছে। দুধে মেশানো হয় পানি এবং ফর্মালিন। ল্যাক্টোমিটারের সাহায্যে দুধের আপেক্ষিক গুরুত্ব মাপতে হবে। সাধারণতঃ দুধের আপেক্ষিক গুরুত্ব = ১.১০৩০ থেকে ১.০৩৪। আবার একটি টেস্ট টিউবে ১০ মিলি দুধ নিয়ে তাতে ৫ মিলি গাঢ় সালফিউরিক এসিড টেস্টটিউবের ভিতরের গা বেয়ে ধীরে ধীরে এমনভাবে ঢালতে হবে যেন টেস্ট টিউব না নড়ে। যদি দুটি তরলের সংযোগ স্থলে নীল বা বেগুনী রংয়ের বলয় সৃষ্টি হয় তাহলে বুঝতে হবে দুধে ফর্মালিন মিশানো হয়েছে।
বিভিন্ন মশলাও বাদ যায়নি ভেজাল মেশানো থেকে। এলাচি থেকে তেল বের করে এলাচির উপর ট্যালকম পাউডার ছিটিয়ে দেয়া হয়। এলাচের ত্বকের উপর আঙ্গুল ঘষলে ট্যালকম আঙ্গুলে লেগে থাকবে। ঘ্রান নিলে যদি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সুগ›ধ না পাওয়া যায়, তাহলে বুঝতে হবে অপরিহার্য তৈলাক্ত পদার্থ সরিয়ে নেয়া হয়েছে। দারচিনি গাছের ছাল থেকে দরিচিনি পাওয়া যায়। অনেক সময় অন্য গাছের ডাল মেশানো হয় যা দারচিনি ছাল থেকে শক্ত এবং দারচিনির মত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সুগন্ধ থাকে না। এমনকি লবঙ্গ থেকে তেল বের করে নেয়া হয় এবং গোলমরিচের সাথে পেঁপের বীজ মেশানো হয়। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে পেঁপের বীজগুলো শুকনো, ডিম্বাকৃতি এবং ধূসর বাদামী রংয়ের। আবার কালোজিরা হাতের তালুতে ঘষলে যদি হাতের তালু কালো হয়ে যায় তবে বুঝতে হবে ঘাসের দানা ও কয়লার গুড়া মেশানো হয়েছে।
মরিচের গুড়ায় মেশানো হয় লাল রং ্ও কাঠের গুড়া। একটি পাত্রে পানি নিয়ে তার মধ্যে মরিচের গুড়া ছড়িয়ে দিলে কাঠের গুড়া ভেসে থাকবে এবং রং মেশানো থাকলে সেই রং ধারণ করবে। হলুদে মেশানো হয় মেটানিল ইয়োলো ও স্টার্চ। যখন হলুদের দ্রবনে গাঢ় হাইড্রোক্লোরিক এসিড মেশানো হয় তখন এটা ম্যাজেন্টা রংয়ে পরিনত হবে যদি হলুদের গুড়াতে মেটানিল ইয়োলো মেশানো থাকে। আবার হলুদের দ্রবনে আয়োডিন মেশানো হলে এটি বেগুনী রং ধারণ করবে যদি তােেত স্টার্চ মেশানো থাকে। সাদা পাউডার যুক্ত এক চামচ সাধারন লবণ এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে নাড়াচাড়া করলে যদি দ্রবনের রং সাদা হয় তবে বুঝতে হবে লবণে সাদা পাউডার মেশানো আছে। আয়োডিন যুকÍ লবণে মেশানো হয় সাধারন লবণ। একটি আলুর টুকরাতে সামান্য লবণ ছিটিয়ে ১মিনিট পর যদি এটি নীল বর্ণ ধারণ করে তবে বুঝতে হবে লবণে আয়োডিন যুক্ত করা আছে।নীল রং না হলে বুঝতে হবে লবণে আয়োডিন নাই।
প্রতিদিন বাংলাদেশের বেশীর ভাগ মানুষ অনেক রকম অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করছে। খাদ্যের এই অনিরাপদ অবস্থা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভয়ানক ভাবে প্রভাবিত করছে যা অনেক দীর্ঘ¯হায়ী রোগ যেমন ক্যান্সার, কিডনী নষ্ট, ডায়রিয়াজনিত অপুষ্টি ইত্যাদির সৃষ্টি করছে। তাই নিরাপদ খাদ্য প্রয়োজন। তথ্যসূত্র: খাদ্যভিত্তিক পুষ্টি (বারটান)
আছিয়া বেগম,
প্রধান শিক্ষক,
উত্তরসুর কুলচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,
শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার।
ফোন নং: ০১৭২৫-৮৬৭৩৩৩
ইমেইল: achiabd81@gmail.com
মন্তব্য করুন