চা স্টলেই সময় কাটছে নূরজাহানের

সাইফুল্লাহ হাসান॥ একদিকে মুয়াজ্জিন মসজিদে ফজরের আজান দিচ্ছেন। অন্যদিকে চায়ের স্টল খুলতে ব্যস্ত বৃদ্ধা নূরজাহান বেগম। ভোর থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত চা স্টলেই সময় কাটে তার।
মৌলভীবাজার পৌর শহরের বেরি লেকের পাশে চায়ের দোকান চালিয়ে আসছেন নূরজাহান বেগম। ১৯ বছর আগে স্বামী হারানো নূরজাহানের এখন এই চা স্টলই শেষ ভরসা। এই শেষ বয়সে এসে ৯ সদস্যদেরর পরিবারের হাল ধরতে হয়েছে তাকে। পরিবারটি মানবেতর জীবনযাপন করছে।
সম্প্রতি কথা হয় বৃদ্ধা নূরজাহান বেগম’র সাথে। তিনি জানান, ১৯ বছর আগে স্বামীকে হারিয়ে এক ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে পরিবার একাই চালাতে হয়। ছেলে পেশায় বাবুর্চি কিন্ত অসুস্থ থাকায় কাজ করতে পারে না। শহরের বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল সব কিছু আমার ছেলে একা পারছিলনা। তাই ছেলেকে পরিবার চালাতে কিছু সাহায্য করতেই এই চায়ের দোকন খুলেছি।
তিনি বলেন, কিছু দিন আগে আমার ছেলের বড় একটি অপারেশন হয়েছে। ছেলে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে এখন আমার পরিবারে ৯ সদস্য। আমার জীবনে অনেক কষ্ট করেছি।
শেষ বয়সে নিজের বাড়িতে বিশ্রাম নেয়ার কথা ছিল। সেই বয়সে চায়ের দোকান চালিয়ে পরিবারের সাহায্য করতে হচ্ছে নূরজাহান বেগমকে। পেটের দায়ে এসে দোকানে সময় দিচ্ছেন।
নূরজাহান বেগম মৌলভীবাজার পৌর শহরের কাজিরগাঁও এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। তার বাপের বাড়ি কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর এলাকার। পরিবার নিয়ে শহরের কাজিরগাঁও এ ভাড়া বাসায় থাকেন।
নূরজাহান বেগমের কাছ থেকে জানা যায়, দীর্ঘ ৮ বছর থেকে পাশে একটি দোকানে চা বিক্রি করে আসছিলেন তার ছেলে। গত দু’বছর আগে ভাড়া দিতে না পারায় দোকানটি ছেড়ে দিতে হয়। তার একমাত্র ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবার অস্বচ্ছলতা নেমে আসে। তাই পরিবার স্বচ্ছ করতে পেটের ধায়ে একটি চায়ের দোকান দেন। পরে এই টং দোকানেই চা বিক্রি শুরু করেন।
নূরজাহান বেগম বলেন, প্রতিদিন সকালে ফজর নামাজ পরে এসেই দোকান খুলি। আর সন্ধ্যা ৮ টায় দোকান বন্ধ করি। প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বিক্রয় হয়। এরমাঝে চা পাতা, চিনি, দুধ আনতে হয়।বেকারির জিনিসগুলো সকালে রেখে সারাদিন বিক্রয় করে সন্ধায় টাকা দেই।
এই জায়গায় যে চায়ের দোকার দেই, পৌরসভা আমায় কিছু বলে না। তাদেরকে কোনো টাকা দিতে হয়না। মেয়র আসলে আমাকে সব সময় এখানে দেখেন কিন্তু কিছু বলেন নি।
নূরজাহান বেগমের ছেলে জহির মিয়া বলেন, আম্মা অনেক আগে থেকে দোকান চালান আমি মাঝে মাঝে সাহায্য করি। আমার বাবুর্চি কাজ সবসময় থাকে না তাই পরিবার চালাতে কষ্ট হয়।
তিনি বলেন, আমার অপারেশন হয়েছে কিছু দিন আগে যার জন্য ভালো কোন কাজও করতে পারি না। পরিবারের হাল ধরে আছেন এটা একটি শান্তি মিলে।
কথা হয় স্থানীয় একটি বেকারির কর্মচারির সাথে। তিনি বলেন, দীর্ঘ ৪/৫ মাস থেকে ওই মহিলার ওখানে বাটার, কেক, বনসহ যাবতীয় বেকারির পণ্য দিয়ে আসছি। তিনি প্রতিদিনের টাকা প্রতিদিন দিয়ে দেন। কোনো বাকি টাকা রাখেন না। লেনদেনে কোনো সমস্যা হয় না।
মৌলভীবাজার পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফয়সল আহমদ বলেন, আপনার মাধ্যমে মহিলার কথা জানলাম। ওই বৃদ্ধা মহিলাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবো।
মন্তব্য করুন