প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলতে অধির আগ্রহে মৌলভীবাজারের চা শ্রমিকরা

বিকুল চক্রবতী॥ আগামীকাল ৩ সেপ্টেম্বর শনিবার প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে চা শ্রমিকদের সাথে কথা বলবেন। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের পাত্রখলা চা বাগানে প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানান, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল- কমলগঞ্জ আসনের এমপি উপাধ্যক্ষ ড. আব্দুস শহীদ।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন মৌলভীবাজার জেলার চা শ্রমিকরা। ভূমি অধিকার, শিক্ষা ও চাকুরীতে কৌটা, তাদের সংস্কৃতি ও কৃষ্টি রক্ষায় একাডেমী স্থাপনসহ রয়েছে বেশ কিছু দাবী।
মৌলভীবাজার পুলিশসুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, জেলার বিভিন্ন চা বাগান থেকে দেড়হাজার চা শ্রমিককে পাত্রখলা চা বাগানের ধলই ভ্যালীক্লাব মাঠে আমন্ত্রন জানানো হয়েছে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রক্ষায় সকল পদক্ষেন গ্রহন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল- কমলগঞ্জ আসনের এমপি উপাধ্যক্ষ ড. আব্দুস শহীদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হৃদয় থেকেই চা শ্রমিকদের ভালোবাসেন। তিনি বলেন, চা শ্রমিকদের বিগত মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে সরাসরি ভূমিকা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই পরিস্থিতির সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন তিনি গণভবনের বৈঠক করবেন এবং ভিডিও কনফারেন্সে চা শ্রমিকদের সাথে কথা বলবেন। ইতিমধ্যে গণভবনে চা বাগান মালিকদের ডেকে চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করে দিয়েছেন ৫০ টাকা এবং প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সারাদেশের চা শ্রমিকদের সাথে শনিবার বিকেল ৪টায় কথা বলবেন।
ইতিমধ্যেই দেশের চারটি চা বাগানের শ্রমিকদের সাথে যথাক্রমে মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ ও চট্রগ্রাম মতবিনিময় এর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ বলেন, বঙ্গবন্ধু চা শ্রমিকদের ভালোবাসতেন আর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাও তাদের ভালোবাসেন। তার প্রমান চা বাগানের শ্রমিকদের প্রতিবছর বিশেষ বরাদ্দে ৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হচ্ছে। চা বাগানের শ্রমিকদের চলাচলের জন্য অনেক রাস্তা করে দেয়া হয়েছে। বলতে গেলে চা বাগানে শ্রমিক বসতিতে যাতায়াতের কাঁচা রাস্তা নেই বললেই চলে। এছাড়াও বয়স্ক ভাতা, বিধবাভাতা, ওএমএস এর চালসহ সরকারী সকল সুযোগ সুবিধা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করে দেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, ৪ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দে তাদের জন্য পাকা ঘর করে দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু বাগানে তা করে দেয়া হয়েছে। আরো প্রকৃয়াধিন।
তিনি বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য হিসেবে সব সময়ই চা শ্রমিকদের সাথে যোগাযোগ অভ্যাহত রেখেছেন। এলাকায় যখন আসেন কোন না কোন বাগানে প্রোগ্রাম করে থাকেই। চা শ্রমিকদের দু:খ দুর্দশার কথা তাঁর জানা রয়েছে। তাই চা শ্রমিকদের শিক্ষা, মজুরিসহ তাদের উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একাধিকবার সংসদের কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীরও সাথে আলোচনা করেছেন।
বর্তমানে চা শ্রমিক সন্তানদের জন্য একটি অত্যাধুনিক বিদ্যালয় করে দেয়া হচ্ছে বর্মাছড়া চা বাগানে। এছাড়াও ইতিমধ্যে শ্রীমঙ্গলের প্রত্যেকটি চা বাগানে সরকারী স্কুল করে দেয়া হয়েছে। অনান্য এলাকায়ও প্রকৃয়াধিন।
তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে চা শ্রমিকদের মজুরি ছিল ২৮ টাকা। কয়েক ধাপে তা ১২০ টাকা করা হয়। এবছর তা ১৭০ টাকায় এনে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়াও আরো অনান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্যও প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী যা বাস্তবায়িত হলে তাদের মজুরি ৪শত টাকার উপরে হবে।
এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রকলায় সভাস্থল পরিদর্শন করেছেন শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক চিফ হুইপ অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব উপাধ্যক্ষ ড.আব্দুস শহীদ এমপি । এ সময় উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব অধ্যাপক রফিকুর রহমান, মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, সিনিয়র পুলিশ সার্কেল শ্রীমঙ্গল কমলগঞ্জ শহিদুল ইসলাম মুন্সি, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন, কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ইয়ারদৌছ হাসান, মাধবপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জনাব আসিদ আলী সহ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
এদিকে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবিন্দ বৈঠক করে তাদের মনের কথা বলার জন্য শনিবারের অপেক্ষা করছেন। তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চা শ্রমিকরা তাদের ভুমি অধিকারসহ বিভিন্ন নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়ছেন। শুক্রবার বিকলে শ্রীমঙ্গলস্থ বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ ও বালিশিরা ভ্যালী নেতৃবৃন্দ বসে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক সফল করার বিষয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় অংশনেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাকন লাল কর্মকার, সহ সভাপতি পংকজ কন্দ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা ও কোষাধ্যক্ষ পরেশ কালিন্দিসহ অনান্য নেতারা।
আলোচনা সভাশেষে কোষাধ্যক্ষ পরেশ কালিন্দি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী দয়ার সাগর, তাঁর কাছে না চাইতেই অনেক কিছু পাওয়া যায়। তদুপরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের দাবী তাদরে ভূমি অধিকার, উচ্চ শিক্ষা ও চাকুরিতে কৌটা, মাতৃত্বকালীণ ছুটি ৪ মাস থেকে ৬ মাসে উত্তির্ণ করা, চকিৎসা ব্যবস্থার মান উন্নয়ন ও চা শ্রমিকদের জন্য একটি বিশেষ হাঁসপাতাল স্থাপন, চা জনগোষ্টীর রয়েছে সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ভাষা যা সংরক্ষনে একাডেমী স্থাপন করা, সরকারী সহায়তায় চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন করে দেয়া। এ ছাড়াও মালিক পক্ষের দাবী অনুযায়ী চা শ্রমিকদের প্যাকেজ মজুরি ৪শত টাকার উপরে পরে তা তদন্ত করে মজুরির বিষয়টির স্থায়ী সমাধান করে দেয়া।
এদিকে গতকাল সরজমিনে দেখা যায়, বিশাল বড় প্যান্ডেল করা হয়েছে। দেড় হাজারেরও অধিক আসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাটি কেটে ঠিক করা হয়েছে ধলই ভ্যালী মাঠে যাওয়ার রাস্তা।
মন্তব্য করুন