বট গাছটির নিচ যেন প্রাকৃতিক এয়ারকন্ডিশন

May 8, 2021,

সাইফুল্লাহ হাসান॥ চারিদিকে হাওর। নেই কোনো বাড়ি। দেখা মিলে না গাছগাছালিরও। উত্তপ্ত রোদে কৃষকরা মাঠে কাজ করে যখন ক্লান্ত হন, তখন তাদের একটু বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। আর এই বিশ্রাম নেন পেখম মেলে থাকা একটি বট গাছের নিচে। আশ্রয় নেয়া কৃষকরাও বট গাছের যত্ন নিতে কমতি করেন না।
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার আমতৈল এলাকার হাকালুকি পারের দৃশ্য এটি। শুধু মানুষই নয়। পাশাপাশি গরু, ছাগল, ভেড়া অন্যান্য পশু পাখিরা প্রচন্ড রোদ্রের সময় এখানেই আশ্রয় নেয়। হাওরের ঠান্ডা বাতাস আর পাখির কোলাহলিতে মুখরিত থাকে বিশাল জায়গা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই বটতলা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের দিকে ওই এলাকার ইউপি সদস্য করুণাময় দাশ গাছটি রোপণ করেছিলেন। ক্ষেতের সময় হাকালুকি হাওরে যখন বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষরা আসতেন, তখন তাদের অনেক কষ্ট হতো। সবাই তখন খাওয়া দাওয়াও টিকটাক মতো করতে পারতো না রোদের জন্য। এই উদ্দেশ্য থেকেই তিনি বট গাছটি রোপণের চিন্তা করেন। যাতে গাছটির ছায়ায় বসে শান্তি পেতে পারে মানুষসহ পশু পাখিরাও। এখন চলছে বোরো মৌসুম। জেলার বিভিন্ন জায়গা থেতে মানুষরা আসছেন ধান কাটতে। প্রতিদিন দুইশো থেকে আড়াইশো মানুষ এই বট গাছটির নিচে আশ্রয় নেন।
স্থানীয় কৃষক আব্দুল হান্নান বলেন, ধান মাড়াই- খড় শুকানো থেকে শুরু করে সব কিছুই এই গাছের নিচেই আমরা করি। প্রচুর গরমের মধ্যে রোজা রেখে আমরা ধান কাটি, এই গরম সহ্য করার মতো নয়। এক নাগাড়ে ধান কাটার পর দুপুর ২ টার দিকে এসে এই গাছের নিচে সবাই মিলে বসে গল্প করি। প্রতিদিন দুইশো থেকে আড়াইশো মানুষ বট গাছের নিচে এসে একত্র হই। এই বট গাছটি ছাড়া আশেপাশে আর কোনো গাছ নেই।
আরেক কৃষক ফজলু মিয়া। তিনি বলেন, আমাদের মনে হয় আমরা প্রাকৃতিক এয়ারকন্ডিশনে আছি। পাঁচ মিনিট এই গাছটির নিচে বসলে আমাদের ঘুম চলে আসে। তাই আমরা সবাই মিলে গাছটি যত্ন করে রাখি। যাতে করে আগামীতে মানুষ এসে এই গাছের নিচে আশ্রয় নিতে পারে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য করুণাময় দাশ বলেন, গাছটির জাত কাঠালি বট। এখানে জায়গা আছে ২১ শতক। প্রায় ১৫ শতক জায়গা জুড়ে এই বট গাছটি। আনুমানিক ২০১০ সালে গাছটি আমি নিজেই রোপন করেছি। গাছটি রক্ষা করার জন্য প্রতি বছর আমরা সবাই মিলে নিচে বাধ দেই , যাতে বন্যা বা ঝড় তুফানে গাছটির কোনো ক্ষতি না হয়। প্রতিদিন প্রচুর লোক এখানে এসে আশ্রয় নেয়, দেখে আমার ভালো লাগে। বিশেষ করে বোরো মৌসুমে রোদের সময় সবচেয়ে বেশি কৃষকরা গাছটির নিচে আসে।
তিনি বলেন, বর্ষার সময় কৃষকরা মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাত হয়, তখন এই গাছটির নিচে এসে তারা আশ্রয় নেয়। গত ২ বছর আগে এখানে সরকারিভাবে একটা টিউবওয়েল দেয়া হয়েছে। এটা থেকেও মানুষ অনেক উপকৃত হচ্ছে।
স্থানীয় পরিবেশকর্মী খোরশেদ আলম বলেন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও প্রকৃতি সংরক্ষনের জন্য এরকম উদ্যোগ অত্যন্ত প্রসংশনীয়। আমি এই মহৎ উদ্যোগকে সাম্মান জানাই। বর্তমানে গাছপালা অভাবে উষ্ণতা দিন দিন বাড়ছে।
যেখানে অনেক গাছপালা থাকার কথা সেখানে গাছগুলো প্রায় বিলুপ্তির পথে, প্রাণীকোলকে বাঁচাতে গাছের ভূমিকা অপরিসিম। গাছ আমাদেরকে অক্সিজেন দেয়, ছায়া দেয়ে, পশুপাখি ফল খায়, ছায়ায় বিশ্রামের বিনিময়ে একটু যত্ন নেয়া প্রতিটা মানুষের দায়িত্ব।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com