বনের ভেতরে ইটের স্থাপনা, উচ্ছেদে নিরীহ ভিলেজারের কাঁচা ঘর স’মিলের কাঠ জব্দে নেই মা*মলা!

প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ : কমলগঞ্জে কুরমা, আদমপুর ও কামারছড়া বনবিট নিয়ে রাজকান্দি বনরেঞ্জ গড়ে উঠেছে। এই রেঞ্জে গাছ, বাঁশ, পাহাড়, টিলা, খাসিয়া ও স্থানীয় ভিলেজারদের বসতি রয়েছে। সম্প্রতি রেঞ্জের আদমপুর ইউনিয়নের সাঙ্গাইসাফী এলাকায় নিরীহ এক ভিলেজারের কাঁচা ঘর উচ্ছেদ, স’মিল থেকে কাঠ জব্দের পর মামলা না হওয়া, স’মিল মালিকদের নোটিশ দিয়ে অফিসে নিয়ে সমঝোতাসহ বন বিভাগের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়াও মহালের বাঁশ, গাছ পাচার হওয়ার নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা ঘটছে। ফলে নিরবে, নিভৃতে বিলীন হচ্ছে মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী কমলগঞ্জের রাজকান্দি বন। স্থানীয়দের অভিযোগে এসব চিত্র বেরিয়ে আসছে।
স্থানীয় ভিলেজার ও বন সংলগ্ন বাসিন্দারা জানান, রাজকান্দি বনরেঞ্জে গাছ, বাঁশে ঘন অন্ধকারাচ্ছন্ন বন ছিল। বর্তমানে বনের সে চিত্র আর নেই। বনবিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা, কর্মচারীদের নানা কার্যক্রমের ফলে বন ধ্বংস হচ্ছে। বন বিভাগের ভিলেজার বাঙালি ও খাসিয়ারা রয়েছেন। বনের মধ্যে ইটের স্থাপনা তৈরি নিষিদ্ধ থাকলেও খাসিয়া সম্প্রদায়ের বেশকিছু ইটের বসতঘর তৈরি হলেও কোন আপত্তি হয়নি। অথচ চাহিত আর্থিক সুবিধা না দিলে বাঙালি ভিলেজারদের উচ্ছেদ করা হয়। গত ২৫ এপ্রিল কামারছড়া বনবিটের অধীন আদমপুর ইউনিয়নের সাঙ্গাইসাফী এলাকায় নিরীহ এক ভিলেজারের কাঁচা ঘর উচ্ছেদ করেছে বন বিভাগ। এই রেঞ্জে প্রশিক্ষণরত সহকারী বন কর্মকর্তা ও রাজকান্দি রেঞ্জ কর্মকর্তা প্রীতম বড়ুয়ার নেতৃত্বে ভিলেজার মৃত আরজান মিয়ার স্ত্রী মরিয়ম বিবির বাঁশের টিনসেড ঘরটি ভেঙ্গে উচ্ছেদ করা হয়েছে। ফলে নিরীহ ওই মহিলা আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং তার মাথা গোজার ঠাঁইটুকুও হারিয়েছেন। অথচ ওই মহিলা বনবিভাগকে অবহিত করেই ঘর তৈরি করেন।
তারা আরও বলেন, গত তিন মাসের মধ্যে কুমড়াকাপন ও সতিঝির গ্রামের মিলন মিয়ার দুই স’মিল থেকে সহকারী বন কর্মকর্তার নেতৃত্বে অবৈধ কাঠ উদ্ধার হলেও কোন মামলা হয়নি। সমঝোতার মধ্যদিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে। তাছাড়া আদমপুর ও কুরমা বন বিট এলাকার বাঁশ মহাল দীর্ঘ এক যুগ ধরে ইজারা হচ্ছে না। ফলে প্রতিনিয়ত বাঁশ পাচার হচ্ছে এবং মহালেও বিপুল পরিমাণ বাঁশ মরে বিনষ্ট হচ্ছে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে রেঞ্জ এলাকার বিভিন্ন ফাঁড়ি পথে নানা সময়ে গাছ চুরির ঘটনা ঘটে। গাছের খন্ডাংশগুলো কোন কোন সময়ে স’মিলে যায় আবার কোন সময়ে মৌলভীবাজার ও সিলেটে পাচার হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স’মিল মালিকরা জানান, রেঞ্জ অফিস থেকে আমাদের নোটিশ দেয়া হয়েছে এবং অফিসে গিয়ে এসব বিষয়ে সমঝোতা করে আসতে হচ্ছে। তাছাড়া প্রতি মাসে রেঞ্জ অফিসকে আর্থিক সুবিধা এবং বিভিন্ন জাতীয় দিবসের জন্য আমাদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়া হয়।
অভিযোগ বিষয়ে রাজকান্দি বনরেঞ্জ সহকারী বন সংরক্ষক ও রাজকান্দি রেঞ্জ কর্মকর্তা প্রীতম বড়ুয়া বলেন, সাঙ্গাইসাফী গ্রামে ভিলেজারের আগে কোন ঘর ছিল না। নতুন ঘর করছেন, তাই উচ্ছেদ হয়েছে। পাকা ঘর আমার সময়ে হয়নি। আগে হয়েছে। তাছাড়া স’মিল মালিকদের সাথে কোন সমঝোতার সুযোগ নেই এবং যতদুর সম্ভব স’মিল থেকে জব্দকৃত কাঠের মামলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে সোমবার সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: হুমায়ুন কবির এর মোবাইল ফোনে কয়েক দফা কোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন