মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় হাজার হাতের দুর্গা প্রতিমা
স্টাফ রিপোর্টার॥ মৌলভীবাজার জেরার কুলাউড়া উপজেলায় রয়েছে দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীর আকর্ষণীয় মন্দির। এই কারুকার্যখচিত মন্দিরটি কাদিপুর-শিববাড়ি নামে পরিচিত। এবার সেই কাদিপুরের শিববাড়িতে পাথরের তৈরি এক হাজার হাতের দুর্গা প্রতিমার পূজা হবে। এই মন্দির পূণ্যার্থীদের কাছে একটি তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। দুর্গাপূজার সময় দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসেন দর্শনার্থীরা।
মন্দিরের প্রধান পুজারি আচার্য্য পুলক সোম জানান, বেশকয়েক বৎসর পূর্বে স্বপ্নাদিষ্টে পাওয়া সহস্রভুজা (এক হাজার হাত) দুর্গা প্রতিমা নির্মাণ শুরু হয় ২০১৮ সালে। কিন্তু বিগত করোনাকালীন সময়ে কাজে বিলম্ব হয়। ৪ বৎসরব্যাপী এই কাজে ২০ জন নির্মাণ শিল্পী গত মাসে প্রতিমার কাজ শেষ করেন। এই প্রতিমা নির্মাণে পাথর, সিমেন্ট, রড ও বালু ব্যবহৃত হয়।
‘প্রায় ২৩ফুট উঁচু তপ্তকাঞ্চন বর্ণের সহস্রভুজা প্রতিমায় এখন রঙের কাজ চলছে। মহাষষ্ঠীর দিন দুর্গাপূজার মূল আচার অনুষ্ঠান শুরু হবে ও সেদিনই স্থায়ী প্রতিষ্ঠা হয়ে পূজিত হবেন দেবীমা।’
শিববাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে লোকমুখে শোনা যায়, এই বাড়ির স্বর্গীয় অনঙ্গ কুমার সোম ছিলেন জমিদারবংশীয়। এই বংশের কোন এক বংশধর তাঁদের দীঘিরপাড়ে বেলগাছের নিচে নিয়মিত শিবের সাধনা করতেন। সাধনা করলেও তখনো এ বাড়িতে কোন শিবলিঙ্গ ছিলনা। পরে অনঙ্গ কুমার সোমের পুত্র স্বর্গীয় অজিত কুমার সোমের পরবর্তী বংশধর পুলক সোমের তপস্যায় ১৪০৫ বঙ্গাব্দের (১৯৯৮ খ্রিঃ) শ্রাবণের ১৮ তারিখ শিবলিঙ্গটি পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় সেই শিবলিঙ্গটি ১৫০ বছর পূর্বেকার। পরে পুরনো মন্দিরটি সংস্কার করে সেখানেই শিবলিঙ্গটি স্থাপন করা হয়।
জানা যায়, শিববাড়ির জমিদারী প্রথার বিলুপ্তি ঘটলে একসময়ের দোর্দ- প্রতাপশালী জমিদার পরিবার চরম আর্থিক সংকটে পরে। ফলে প্রায় ৩১ বৎসর ঘটপুজা তারা করেন। তখন সেই বনেদী পূজা-পার্বণে আকাশছোঁয়া জৌলুস হারিয়ে গেলেও তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে একবিন্দু ঘাটতি পড়েনি। পরবর্তীতে ২০০১ সালে মন্দিরটি আগের জৌলুস ফিরতে শুরু করে। যা আজও চলমান আছে।
প্রতিবছর পূজার সময় লাখো ভক্তদের ভিড়ে মুখর হয়ে উঠে ঐতিহাসিক অনিন্দ্যসুন্দর এ মন্দিরটি।
মন্তব্য করুন