স্কুলের নিজস্ব জমি বাহিরে রেখে সীমানা প্রাচীর তৈরি, স্থানীয়দের ক্ষোভ

মাহফুজ শাকিল : কুলাউড়ায় গৌরীশংকর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্ধারিত নিজস্ব জায়গা রেখে স্থানীয় তিনটি পরিবারকে সুবিধা দিয়ে সীমানা প্রাচীর (বাউন্ডারি ওয়াল) নির্মাণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ নিয়ে বুধবার ২১ মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবরে পৃথক লিখিত অভিযোগ দেন স্থানীয় বাসিন্দা জব্বার মিয়া, আবুল কালাম, আব্দুস সামাদ, খালেদ আহমদ, এনামুল হক, মাহিদুল ইসলাম, মুজাহিদুল ইসলাম, বখতিয়ার খা, আব্দুল মছব্বির, হারুন মিয়া, কামাল হোসেনসহ প্রায় ২৫ জন ব্যক্তি।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত গৌরীশংকর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সড়কের পাশে অবস্থিত বিদ্যালয়ে শিশুরা যাতে দুর্ঘটনার শিকার না হয় সেজন্য সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে এলজিইডি। প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় কামাল আহমদ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তবে কাজটি করছেন ঠিকাদার মনসুর আহমদ চৌধুরী। স্থানীয় হরিহরপুর গ্রামের বাসিন্দা ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বিদ্যালয় কমিটির সদস্য ডা. মোহাম্মদ রহমত আলী ও নিষিদ্ধ সংগঠন উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা শুকুর আলম ও ফারুক মিয়ার পরিবারের লোকজনের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিদ্যালয়ের জায়গা রেখে সীমানা প্রাচীরের কাজ করা হচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের উত্তরপাশের্^ ২ ফুট প্রস্থ ও আনুমানিক ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য পরিমাণ জায়গা বাহিরে রেখে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরের কাজ চলছে। অথচ যে কয়েকটি পরিবারের সুবিধার জন্য বিদ্যালয়ের জায়গা দিয়ে রাস্তা করার সুবিধা দেয়া হচ্ছে তাদের চলাচলের জন্য বিকল্প ১২-১৫ ফুট প্রস্থের একটি রাস্তা বিদ্যালয়ের পশ্চিম অংশে রয়েছে। বিদ্যালয় কমিটির সদস্য আব্দুল মালিক, জয়চন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রব মাহাবুবসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশে বিদ্যালয়ের জায়গা রেখে সীমানা প্রাচীরের কাজ করা হচ্ছে।
এদিকে গত ১৫ মে স্থানীয় লৈয়ারহাই গ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল মালিক, তার ছেলে মাসুম বিন আব্দুল মালিক, বিদ্যালয় কমিটির সদস্য ডা. মোহাম্মদ রহমত আলী ও নিষিদ্ধ সংগঠন উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা শুকুর আলম জোরপূর্বক বিদ্যালয়ের সরকারী জায়গা দখল করেন বলে অভিযোগ উঠে। বিষয়টি নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও জায়গা উদ্ধারের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি লাইভ করেন স্থানীয় গৌরীশংকর গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী ইয়াকুব আলী। এরপর উল্লেখিত ব্যক্তিরা তাদের ফেসবুক আইডিসহ বিভিন্ন ফেইক আইডি দিয়ে প্রবাসী ইয়াকুব আলীকে একজন চাঁদাবাজ উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালান। প্রবাসী ইয়াকুব বিষয়টির প্রতিবাদ করলে গত ১৭ মে বিবাদীরা প্রবাসী ইয়াকুবকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। পরে নিরাপত্তা চেয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে কুলাউড়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন প্রবাসী ইয়াকুব আলী। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়ের জমি রেখে সীমানা প্রাচীরের কাজ করার বিষয়টি বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি হাফিজ উদ্দিন মাস্টারের কাছে জানালে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের জমি রেখে সীমানা প্রাচীরের কাজের পক্ষে তিনি নন। আমরা খবর পেয়েছি, বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য আব্দুল মালিক, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রব মাহাবুব আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে স্থানীয় কয়েকটি পরিবারের লোকদের সুবিধা দিতে বিদ্যালয়ের নির্ধারিত জায়গা ছেড়ে সীমানা প্রাচীর করার পরামর্শ দিয়েছেন।
ঠিকাদার মনসুর আহমদ চৌধুরী বলেন, স্থানীয়দের আপত্তির মুখে কাজ প্রায় ছয় মাস বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে স্কুল কমিটি ও স্থানীয় গন্যমান্যব্যক্তিরা স্কুলে বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে দিলে আমরা কাজ শুরু করি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রন্টু রঞ্জন দাসের সাথে আলাপ করলে তিনি জানান, বিদ্যালয় কমিটিসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দদের সাথে আলোচনা করে সীমানা প্রাচীরের বাইরের কাজ করার জন্য ও স্থানীয় কয়েকটি পরিবারের লোকদের চলাচলের সুবিধার্থে জায়গা রেখে সীমানা প্রাচীরের কাজ করা হচ্ছে। এখানে আমার কোন দায় নেই, কমিটির নেতৃবৃন্দরা সবকিছু জানেন। এখন স্থানীয়রা ফের আপত্তি তুলেছেন। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসকে অবগত করেছি।
অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য আব্দুল মালিক বলেন, বিদ্যালয়ের উত্তরপাশের্^ সীমানা প্রাচীরের কাজ করার জন্য দুই ফুট জায়গা রেখে কাজ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে স্থানীয় কয়েকটি পরিবারের চলাচলের সুবিধার্থে এলাকাবাসীর অনুরোধে রাস্তার জন্য জায়গা রাখা হয়। বিষয়টি নিয়ে একাধিক বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখানে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ সঠিক নয়।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: ইফতেখায়ের হোসেন ভূঁঞা বলেন, বিষয়টি প্রধান শিক্ষক আমাকে জানিয়েছেন। স্কুল কমিটির এখতিয়ার আছে স্থানীয়দের সাথে আলোচনা করে উন্নয়ন কাজ করানোর। এখন যদি স্থানীয়দের আপত্তি থাকে তাহলে সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হোসেন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।
মন্তব্য করুন