১০৮.৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড, শ্রীমঙ্গলে আমন ধান ও শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি, কৃষকেরা দিশেহারা

এহসান বিন মুজাহির॥ শ্রীমঙ্গলে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলির’ প্রভাবে দিনভর বৃষ্টিপাতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষিজমিতে পাকা রোপা আমন ধান, রবি বীজতলা ও শীতকালীন নানা ধরণের সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তা ছাড়া প্রভাব পড়েছে হাওর এবং চা জনগোষ্ঠী এলাকার মানুষের জনজীবনে। শনিবার (১৮ নভেম্বর) শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের টিকরিয়া, শংকরসেনা, কালাপুর ইউনিয়নের বরুণা, সিন্দুরখান ইউনিয়নের সাইটুলা এলাকায় সরজমিন ঘুরে দেখা যায় গত শুক্রবার ভোর থেকে টানা বৃষ্টিপাতে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে শীতকালীন শাকসবজি ও বীজতলায়। বৃষ্টির পানি এবং বাতাসে নষ্ট হয়েছে মাঠের পাকা আমন ধান ও মৌসুমি শাক-সবজি। এবিষয়ে সিন্দুরখান ইউনিয়নের সাইটুলা গ্রামের কৃষক ফজর মিয়া (৪৮) বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিল। আজ রোববার থেকে ধান কাটা শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ দিনভর বৃষ্টি ও বাতাসে আমন ধান শুয়ে পড়েছে, ঝরে পড়েছে ধান। এতে প্রচুর ক্ষতি হয়ে গেলো। ফসল ঘরে তোলা নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় আছি।
আশিদ্রোন ইউনিয়নের শংকরসেনা গ্রামের কৃষক কামাল হোসেন জানান, আমি ৪ একর জমিতে আমন ধান চাষ ও
৫ একর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করেছিলাম। কিন্তু দিনব্যাপী বৃষ্টির পানি ক্ষেতে জমে আমার আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হলে। প্রচুর ধান ঝরে পড়ে গেলো। বিশেষ করে শীতকালীন সবজি আলু ক্ষেত, লাল শাক, লাই শাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, ধনেপাতা ও টমেটোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে খুব বেশি।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার অশিদ্রোন ইউনিয়নের খোশবাস গ্রামের কৃৃষক মোঃ শাকির আহম্মেদ জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র প্রভাবে সোনালী আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকদিন পর আমি আমন ধান কাটার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এবার রোপা আমনের বাম্পার ফলনও হয়েছিল। আশা করেছিলাম বিগত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ ফসল ঘরে তুলতে পারবো। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে যে বৃষ্টি ও বাতাস শুরু হয়েছিল শুক্রবার সারাদিনই বৃষ্টি ঝরছে। প্রবল বাতাসে পাকা ধান নুয়ে পড়ছে এবং ঝরে পড়েছে অনেক ধান। এছাড়া পাকা ধান ক্ষেতে পানি জমে গেছে। এখন ধান কাটা যেমন কষ্েেটর তেমনি ধান কাটা শ্রমিকদের দিতে হবে তিন গুণ মজুরি। প্রচুর ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কাঙ্খিত ফসল ঘরে তোলা নিয়ে আমি খুব চিন্তিত।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মহিউদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলির’ প্রভাবে শ্রীমঙ্গলে আমন ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে ঠিক, তবে খুব একটা ক্ষতি হয়নি। কারণ অধিকাংশ এলাকায় ধানে পেকে চাল হয়ে গেছে। আবার অনেক এলাকার কৃষকেরা ধান কেটেও ফসল ঘরে তুলেছেন। তবে বৃষ্টির কারণে রবি সবজির বীজ তলার ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আলু চাষি ও শীতকালীন সবজির।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের
পর্যবেক্ষক বিভলু চন্দ্র দাশ দৈনিক খবরপত্র-কে বলেন, গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা থেকে শনিবার (১৮ নভেম্বর)
বিকেল ৫টা পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ১০৮.০৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এসময় বাতাসের গতি ছিল মাঝেমধ্যে ২ ন্যাটিকেল, মাঝেমধ্যে ৬ ন্যাটিকেল, সর্বোচ্চ ৮ নটিক্যাল মাইল। শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায় উপজেলায় আজ বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।
মন্তব্য করুন