কুলাউড়া অনুমতি ছাড়া চর খননের বালু অন্যত্র নেয়ার অভিযোগ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে

June 29, 2025,

মাহফুজ শাকিল : কুলাউড়ায় মনু নদীর চর খনন করার পর নিলামযোগ্য জব্দ করা বালু প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই সরকারি কাজে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে আরাধনা এন্টারপ্রাইজ নামে এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। জব্দকৃত ওই বালুর বাজার মূল্য প্রায় ২৫ লক্ষ টাকারও বেশি। জব্দ করা ওই বালু থেকে প্রায় ১২-১৩ লক্ষ টাকার বালু দিয়ে প্রায় দশ হাজার বস্তা জিওব্যাগ নদীর কাজে লাগানোর জন্য প্রস্তুত করে রেখেছে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এতে বড় ধরণের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার।

গত ২১ মে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রাজস্ব শাখা থেকে “মনু নদীর ভাঙ্গন থেকে মৌলভীবাজার জেলার সদর, রাজনগর, কুলাউড়া উপজেলা রক্ষা” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এবং ৬৪টি জেলার অভ্যন্তরস্ত ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন (প্রথম পর্যায়)” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় মনু নদীর চর খনন হতে উত্তোলনকৃত মাটি-বালু নিলাম প্রদানের জন্য শর্তাবলী মোতাবেক বিজ্ঞপ্তি আহবান করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চর থেকে খনন করার পর জব্দ করা বালু নিলাম হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। তন্মধ্যে তাজপুর চরে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৯ ঘনফুট বালু জব্দ করা হয়। কিন্তু নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ার আগেই মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আরাধনা এন্টারপ্রাইজ অনুমতি ছাড়াই উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের কটারকোনা মৌজার কটারকোনা বাজারের উত্তরপাশে তাজপুর চরের জব্দকৃত বালু নদীর কাজে লাগিয়েছে।

শনিবার ২৮ জুন বিকেলে উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের কটারকোনা এলাকায় গিয়ে মনু নদীর চরের একটি স্থান থেকে বালি নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা যায়।

এসময় স্থানীয় লোকজন জানান, গত দুই মাস ধরে জব্দ করা ওই বালু থেকে এরই মধ্যে প্রায় ১২-১৩ লাখ টাকারও বেশি বালু সরিয়ে নিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। হাজীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তার তদারকি অভাবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জব্দকরা ওই বালু অন্যত্র ব্যবহারের সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে সরাসরি বাঁধা দিতে সাহস পাচ্ছেন না এলাকার লোকজন।

এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আরাধনা এন্টারপ্রাইজের মালিক রিপন আহমদের ভাই সিপন আহমদ মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তিনি ফোন ধরেননি।

 এ বিষয়ে হাজীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মতিউর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকদের আপত্তি করেছি। তারা তখন আমাকে জানিয়েছে, জব্দকৃত ওই বালু নাকি তারা নিলামের মাধ্যমে ইজারা নিয়েছে। আমি তাদের বলেছি নিলাম পাওয়ার প্রমাণপত্র দেখাতে। বিষয়টি আমি এসিল্যান্ড স্যারকে অবগত করেছি।

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহরুল হোসেন বলেন, বিষয়টি জানার পর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তার মাধ্যমে ওই বালু নেয়া বন্ধ করা হয়েছে এবং যে বালু জিওব্যাগে  ভরা হয়েছে তা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। যদি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিলামের আগে বালু ফেরত না দেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, অনুমতি ছাড়া কোন অবস্থাতেই চর খননের জব্দকৃত বালু অন্যত্র ব্যবহারের সুযোগ নেই। এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, কুলাউড়ার বিভিন্ন স্থানে জব্দকৃত বালু নিলামের জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি আহবান করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই বালু নিলাম করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com