একটি হ ত্যা কাণ্ডের পর সং ঘর্ষের আশংকা, রাজনগরে একবছরেও সচল হয়নি ‘মধুরবাজার’

শংকর দুলাল দেব : রাজনগরে গত বছরের ৭ আগস্ট দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও বন্দুক যুদ্ধে উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ছানা গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। রাজনগর-বালাগঞ্জ সড়কের মধুরবাজার নামক স্থানে এ ঘটনাটি ঘটে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে হামলা-পাল্টাহামলা চালিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাটের আশঙ্কা দেখা দেয়। এমন অবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ওই বাজারটি বন্ধ করে দেয়। ওই সময় দোকান মালিকরা মালামাল দ্রুত সরিয়ে নেন। কিন্তু এ ঘটনায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এই বাজার চালু না হওয়ায় ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের গ্রামীণ জনপদ “মধুরবাজার” সূচনা হয় ষাটের দশকের শুরুর দিকে। এই বাজারে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের রয়েছে শতাধিক দোকানপাট। মধুরবাজারের আওতাধীন নোয়াগাঁও, রক্তা, কেওলা, ধুলিজোড়া, ঢেউয়েরবন, সারমপুর সহ চারপাশের ১০/১২টি গ্রামের মানুষ বাজার-সদাই সারেন এই হাটেই। কিন্তু বাজারটি একেবারে বন্ধ করে দেওয়ায় স্থানীয় শতাধীক ব্যবসায়ী সহ অসংখ্য মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বিগত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাষ্ট্রীয় পট পরিবর্তনের পর ৭ আগস্ট মধুরবাজারে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বাকিতে মালামাল নেয়াকে কেন্দ্র করে ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় উভয় পক্ষ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে। ওই সময় প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হন স্থানীয় পাঁচগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ছানা। এ ঘটনায় আহত হন উভয় পক্ষের প্রায় ২০/২৫ জন। পুলিশ যখন অকার্যকর ছিল তখন খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে আসে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে। ওই সময় পরিস্থিতি শান্ত রাখতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা করে ব্যবসায়ীদের দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পর থেকেই এখন পর্যন্ত বাজারটি বন্ধ রয়েছে।
নোয়াগাঁওয়ের মানিক লাল দাশ জানান, বাজারে তাঁর একটি মুদি দোকান ছিল। সপ্তাহের সব দিন হাট বসতো। প্রতিদিন হাজার তিনেক টাকার মালামাল বিক্রি হতো। এই আয় দিয়ে চলত তার ও এক কর্মচারীর পরিবার। সংঘর্ষের ঘটনায় বাজারটি অচল হয়ে পড়ায় এক বছর ধরে উভয়েই বেকার জীবনযাপন করছেন। এভাবে আরও অনেক পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তি বেকার হওয়ায় চরম দুর্দশায় পড়েছেন। কেওলা গ্রামের মাওলানা আব্দুল মতিন বলেন, এ বাজারটি জমজমাট ছিল। আশপাশের ১০/১২টি গ্রামের মানুষ এখানে বাজার-হাট করতেন। নিকটবর্তী কাউয়াদীঘি হাওর থেকে জেলেরা মাছ ধরে এনে এবং স্থানীয় সবজি চাষিরা নিজেদের উৎপাদিত পণ্য এ বাজারে বিক্রি করতেন। অনেকের জীবিকা এখান থেকেই নির্বাহ হতো। কিন্তু এখন দোকানপাট বন্ধ থাকায় তারা দুঃসহ জীবন যাপন করছেন।।
এ বিষয়ে রক্তা গ্রামের আব্দুল হেকিম জানান, তাঁর দাদা আবুল কাশিম বাজার প্রতিষ্ঠার জন্য কিছু ভূমি দান করলেও মধু দাশ নামে একজন ব্যবসায়ী প্রথম ব্যবসা শুরু করেন বলে “মধুরবাজার” নামে এটি অধিক পরিচিতি লাভ করে। বাজারে দু’পক্ষের সংঘর্ষে চেয়ারম্যান হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।
পাচগাঁও ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান জুবেল আহমদ রাসেল বলেন, আসলে বাজারটি সচল না থাকায় সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে এবং সরকারও রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।
রাজনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: মোবারক হোসেন খান জানান, অচল বাজারকে সচল করার এখতিয়ার পুলিশের নয়। বাজার কমিটি, জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন সহ সকলে মিলে আলোচনার মাধ্যমে বাজারটি সচল করা যেতে পারে। এতে পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা থাকবে।
মন্তব্য করুন