সালিশ না মানায় পঞ্চায়েত কর্তৃক সমাজচ্যুত করেছে অসহায় এক পরিবারকে

August 24, 2025,

এহসান বিন মুজাহির  : শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৬ নম্বর আশীদ্রোন ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মোহাজেরাবাদ গ্রামে প্রভাবশালী সমাজপতিদের চাপিয়ে দেওয়া বিচারের রায় না মানায় এক পরিবারকে সমাজচ্যুত করার অভিযোগ ওঠেছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কর্তৃক উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। এর প্রেক্ষিতে ইউএনও মোঃ ইসলাম উদ্দিন অভিযোগকারী হাসিম মিয়া ও অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সভাপতি আহাদ মিয়াকে ইউএনও অফিসে ডেকে আনেন। সে সময় মো. আহাদ মিয়া বিষয়টি শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির জন্য দুই দিনের সময় চেয়ে নেন। এদিন বিকেলেই মরিয়ম বাদি হয়ে আমিনুল ইসলাম বাবুকে আসামী করে যৌতুক নিরোধ আইনে মৌলভীবাজার আদালতে পিটিশন মামলা দায়ের করেন। রবিবার ২৪ আগস্ট দুপুরে জেলার শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সস্মেলনে এমন অভিযোগ করেন সমাজচ্যুত হওয়া ওই গ্রামের দিনমজুর মো: হাসিম মিয়া।

লিখিত বক্তব্যে হাসিম মিয়া অভিযোগ করেন ২০২০ সালে তার ছেলে ঠেলাগাড়ি চালক আমিনুল ইসলাম বাবু ও একই এলাকার রমজান মিয়ার মেয়ে মরিয় আক্তারের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠায় দুই পরিবারের সম্মতিতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের সময় বাবু ও মরিয়ম অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের বিয়ের কাবিননামা হয়নি। তবে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে উভয় পরিবারের সম্মতিতে মৌখিকভাবে বিয়ের কাবিন ধার্য করা হয় ৭০ হাজার টাকা। বিয়ের দুই বছর পর তাদের ঘর আলো করে আসে এক কন্যা সন্তান।

চলতি বছরের ৫ জুন আমিনুল ইসলাম বাবু ভোর রাতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফল বোঝাই ঠেলাগাড়ি নিয়ে শহরে চলে আসেন। এ সুযোগে তার স্ত্রী মরিয়ম তারই (বাবুর) খালাতো ভাই নাজমুল ইসলামের সাথে নিজ ঘরে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হন। বিষয়টি হাসিম মিয়া হাতেনাতে ধরে ফেলেন। পরে নাজমুল ও মরিয়ম তার পায়ে ধরে ক্ষমা চায়। বিষয়টি আমিনুল ইসলাম বাবু শুনার পর তার কাছেও ক্ষমা চান তার স্ত্রী মরিয়ম। মাত্র তিন বছরের কন্যা সন্তানের কথা চিন্তা করে তিনি স্ত্রীকে শেষবারের মতো সুযোগ প্রদান তথা ক্ষমা করে দেন। কিন্তু বিষয়টি এলাকায় প্রচার হলে এলাকাভিত্তিক বিচার বসে। সেই বিচারে মরিয়ম ও নাজমুল অবৈধ সম্পর্কের কথা সবার সামনে স্বীকার করে। পরবর্তীতে পুনরায় বিচার বসলে নাজমুল বিষয়টি নিয়ে উচ্চবাক্য প্রদর্শন করেন। এর প্রেক্ষিতে আমিনুল ইসলাম বাবু তার স্ত্রী মরিয়মকে ওই বিচারেই মৌখিকভাবে তালাকের কথা বলেন।

পরবর্তীতে গত ৪ জুলাই পুরো গ্রাম নিয়ে বিচারের আয়োজন করা হয়। ওই বিচারে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ও শ্রীমঙ্গল সাব রেজিষ্ট্রার অফিসের মোহরার মো. আহাদ মিয়া কারো কোন বক্তব্য না শুনে বা প্রমাণাদি না দেখে রায় দেন মরিয়মকে ২ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা দিতে হবে। কিন্তু হাসিম মিয়া এ রায় মানতে রাজি নন বলে জানান। এর এক সপ্তাহ পর বিচারকরা পুনরায় হাসিম মিয়াকে ডেকে রায়ের টাকা পরিশোধ করতে চাপ প্রয়োগ করেন। কিন্তু তিনি এবারও অন্যায্য রায় মানতে রাজি নন বলে জানালে মো: আহাদ মিয়া সকলের সামনেই হাসিম মিয়া ও তার পরিবারকে সমাজচ্যুত ঘোষণা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে হাসিম মিয়া বলেন, সালিশী বৈঠকে আমাকে একঘওে (সমাজচ্যুত) ঘোষণার পর পর থেকে আমি এবং আমার পরিবারকে ধর্মীয় ও সামাজিক সকল কর্মকান্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। আমি স্থানীয় মসজিদ কমিটির সহসভাপতি হলেও আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদেরকে মসজিদে নামাজ পড়তেও বাধা দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে গত ৫ আগস্ট সমূদয় বিষয়াদি উল্লেখ করে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ করি। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১১ আগস্ট সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিযোগকারী আমি ও পঞ্চায়েত সভাপতি মো. আহাদ মিয়াকে ইউএনও অফিসে ডেকে আনেন। সে সময় মো: আহাদ মিয়া বিষয়টি শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির জন্য দুই দিনের সময় চেয়ে নেন। এদিন বিকেলেই মরিয়ম বাদি হয়ে আমার ছেলে আমিনুল ইসলাম বাবুকে আসামী করে যৌতুক নিরোধ আইনে মৌলভীবাজার আদালতে পিটিশন মামলা দায়ের করেন।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘সমাজচ্যুত করার অভিযোগ প্রাপ্তির পর আমি মো. আহাদ মিয়া ও অভিযোগকারীকে আমার অফিসে ডেকে আনা হয়। এসময় আহাদ মিয়া আমাকে বলেছিলেন দুই দিনের মধ্যে বিষয়টি তিনি সুন্দরভাবে সমাধান করে দেবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত উভয় পক্ষের কেউই আমাকে আর কিছু জানায়নি। আমি উভয় পক্ষকে আবার ডেকে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করব। তবে ভুক্তভোগী পরিবারও চাইলে আইনের শরনাপন্ন হতে পারেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com