সরকারি হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার উপস্থিতি: বাস্তবতা ও প্রয়োজনীয়তা

বশির আহমদ : বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলো দেশের সাধারণ মানুষের শেষ ভরসাস্থল। প্রতিদিন হাজার হাজার বহিরাগত ও ভর্তিকৃত রোগী চিকিৎসার জন্য এসব হাসপাতালে আসেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, অধিকাংশ সময় এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাওয়া যায় না।
ফলে রোগীদের বেশিরভাগই চিকিৎসা পান জুনিয়র ডাক্তারদের কাছ থেকে। অনেক কষ্ট করে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ডাক্তার দেখার সুযোগ মিললেও চিকিৎসকের হাতে রোগীর জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকে না। তাই রোগী শুধুমাত্র প্রেসক্রিপশন নিয়েই ফেরেন, কিন্তু রোগের বিস্তারিত ব্যাখ্যা বা প্রয়োজনীয় পরামর্শ পান না। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা অনেক সময় দেরিতে আসেন, আবার সরাসরি তাদের কাছে রোগী পাঠানো হয় না। প্রথমে সবাইকে মেডিসিন ডাক্তারদের কাছে যেতে হয়, তিনি চাইলে রেফার করেন, না চাইলে নয়। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বহুগুণ বেড়ে যায়।
সমস্যা কোথায়?
১. ডিউটির স্বচ্ছতা নেই : কোন ডাক্তার কখন আসবেন, কোথায় বসবেন তা রোগীরা জানেন না।
২. বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সীমিত সময় : তাদের উপস্থিতি বেশিরভাগ সময়ই আংশিক বা অনিয়মিত।
৩. সকল ডাক্তার একসাথে উপস্থিত না থাকা : এতে রোগীদের অযথা ঘুরপাক খেতে হয় এবং ভিড় তৈরি হয়।
৪. তদারকির অভাব : নিয়মিত উপস্থিতি ও সেবার মান যাচাইয়ের কার্যকর ব্যবস্থা খুবি দুর্বল।
করণীয় কী?
১. ২৪ ঘণ্টা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ডিউটি নিশ্চিত করা, প্রতিটি বিভাগে পালাক্রমে শিফট ভিত্তিক ডিউটি চালু করতে হবে। বিশেষ করে জরুরি বিভাগে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার উপস্থিতি সবসময় বাধ্যতামূলক করতে হবে।
২. বিভাগভিত্তিক রোগী প্রেরণ ব্যবস্থা, চর্মরোগ, শিশু, গাইনী, সার্জারি, নাক-কান-গলা, চোখ, হৃদরোগ—এসব রোগীদের সরাসরি সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো উচিত। এতে সময় বাঁচবে এবং ভোগান্তি কমবে।
৩. ডিউটি চার্ট প্রকাশ, হাসপাতালের প্রধান ফটক, টিকিট কাউন্টার ও অপেক্ষা কক্ষে প্রতিদিনের ডিউটি তালিকা বড় বোর্ডে টানানো জরুরি। এতে রোগীরা সহজেই জানতে পারবেন কোন ডাক্তার কখন এবং কোথায় বসছেন।
৪. তদারকি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, হাসপাতালের পরিচালক ও সিভিল সার্জন নিয়মিতভাবে ডাক্তারদের উপস্থিতি ও সেবার মান পর্যবেক্ষণ করবেন। দায়িত্বে গাফিলতি করলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. রোগী সচেতনতা ও তথ্যসেবা, হাসপাতালে তথ্য ডেস্ক চালু করা প্রয়োজন। একটি হেল্পলাইন চালু থাকলে রোগীরা আগে থেকেই ডাক্তারদের ডিউটি ও সময়সূচি জেনে নিতে পারবেন।
শেষকথা, সরকারি হাসপাতালে যদি রোগীরা সময়মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা না পান, তবে তাদের কষ্ট বাড়বে, একই সঙ্গে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি আস্থাও নষ্ট হবে।
তাই এখনই প্রয়োজন—
২৪ ঘণ্টা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার উপস্থিতি
ডিউটি চার্ট প্রকাশ
বিভাগভিত্তিক রোগী সেবা
এসব কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে জনগণের ভোগান্তি অনেকাংশে কমবে এবং দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নতি হবে।
লেখক : বশির আহমদ, মৌলভীবাজার সদর।
মন্তব্য করুন