ময়লার ভাগারে তালা, এখন পুরো শ্রীমঙ্গল শহরই ভাগাড়
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি : শ্রীমঙ্গলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জনবহুল এলাকা থেকে ময়লার ভাগার সরানোর দাবীতে ভাগারে তালা দিয়েছে এলাকাবাসী। এদিকে তিনদিন ধরে ময়লা না নেয়ায় পুরো শ্রীমঙ্গল শহর পরিনত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। এতে চরম দূর্ভোগে পড়েছেন শহরবাসী ও শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসার হাজার হাজার পর্যটক। বিষয়টি সমাধানে পৌর কর্তৃপক্ষ, উপজেলা প্রশাসন সর্বশেষ সেনাবাহিনীও বেঠক করেছেন।
শ্রীমঙ্গল পৌরসভার ময়লার ভাগাড়টি বাংলাদেশ স্বাধীনের পূর্ব থেকেই শহরতলীর ভাড়াউড়া সড়কের পাশে বর্তমান কলেজ রোডে করা হয়েছিল। ময়লার ভাড়াড়টির সন্মুখে ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্টিত হয় শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজ। পর্যায়ক্রমে এখানেই গড়ে উঠে শ্রীমঙ্গল দি বার্ডস রেডিডেন্টশিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ ও গাউছিয়া শফিকিয়া সুন্নীয়া দাখিল মাদ্রাসা নামে আরো দুটি প্রতিষ্টান।
শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এ. বি. এম. মোখলেছুর রহমান বলেন, শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। পরীক্ষার সময় অনান্য উপজেলা থেকে শিক্ষার্থীরা পরিক্ষা দিতে আসনে। ময়লার দুর্গন্ধে শিক্ষার্থীরা খুবই কষ্ট করে ক্লাস করে ও পরীক্ষা দেয়। এর জন্য বার বার তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কশন করেও কোন সুরাহা হয়নি।
শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন দরজা জানালা বন্ধ করে দিনের বেলা লাইট জ্বালিয়ে ক্লাস করতে হয়। অনেক সময় ছাত্ররা ক্লাসে বমি করে দেয়। বেশি সমস্যা হয় পরীক্ষার সময়। তখন ক্লাস থেকে বের হওয়া যায়না। টানা তিন ঘন্টা ক্লাসে থাকতে হয়। এটা যে কত কষ্টকর তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা এখানে এসে অনুধাবন না করলে বুঝতে পারবেন না।
ময়লার ভাগাড়ের পাশের বসতি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্ধা সংগীত শিল্পী তারেক ইকবাল চৌধুরী বলেন, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজ, দি বার্ডস রেসিডেন্টসিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ ও গাউছিয়া শফিকিয়া সুন্নীয়া দাখিল মাদ্রাসায় প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী ছাড়াও তাদের অভিভাবকরাও আসা যাওয়া করেন। প্রত্যেকেই দূভোগে পড়েন। তিনি বলেন, এটা নিয়ে আমরা আজ ৩০ বছরেরও অধিক সময় ধরে আন্দোলন করছি। আমাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শ্রীমঙ্গল পৌরসভা ২০১৩ সালে শ্রীমঙ্গল পৌরসভা শ্রীমঙ্গল ভাড়াউড়া এলাাকার জেটি রোডের শেষ মাথায় হাইল হাওওে জমি ক্রয় করে। কিন্তু জমি ক্রয়ের একযুগ অতিবাহিত হলেও আজো তা স্থানান্তরিত করতে পারেনি।
স্থানীয় মুরব্বী কলেজ রোডের বাসিন্ধা নুরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, শ্রীমঙ্গল পৌরসভার ময়লার ভাগাড়ের গাঁ ঘেসেই এই তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দুটি মসজিদ এবং কলেজ রোড, বিরাইমপুর ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা। দুগর্ন্ধে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে পারেন না। বাসা বাড়িতেও ঠিকা দায়। আর স্কুলের বাহিরে খোলা খাবার নিয়ে বসে হকাররা যা খেয়ে অসুস্থ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
গাউছিয়া শফিকিয়া সুন্নীয়া দাখিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, প্রায় ১২ বছর আগে শ্রীমঙ্গল পৌরসভা শহরতলীর হাইল হাওর এলাকায় জমি ক্রয় করলেও হাই কোটের রিটের কারনে সেখানে স্থানন্তরিত করা য়ায়নি। তবে অনেক আগেই সে রিট বাতিল হলেও অধ্যাবদি তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় রবিবার সকালে ময়লার ভাগার বন্ধ করে দিয়ে শ্রীমঙ্গল চৌমুহনী চত্তরে ঢাকা-মৌলভীবাজার সড়ক অবরোধ করে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা।
এ ব্যাপাওে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, পূর্বের রিট বাতিল হলেও আবার নতুন করে রিট হয়েছে। বর্তমানে ভাড়াউড়া এলাকার মৃত ফিরোজ আলীর ছেলে ফয়েজ উদ্দিন এর আবেদনের প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট। ১২ ফ্রেব্রুয়ারী ২০২৪ থেকে ১২ ডিসেম্বও ২০২৫ পর্যন্ত স্থিতাদেশ দেন।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালে এটি স্থানান্তরের লক্ষে ১ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা দিয়ে ২ একর ৪৩ ডিসিমেল জায়গা ক্রয় করে কার্যক্রম শুরু করতে গেলে এলাকাবাসীর বাঁধার মূখে তা করা যায় নি।
আর পৌরসভার মেয়রের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইসলাম উদ্দিন জানান, ২১ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা ব্যায় নির্ধারণ করে স্যানেটারী ল্যান্ড ফিল্ড এন্ড ফেকাল স্লাজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নামে
একটি বর্জ রিসাইকেলিং প্রজেক্ট জমা দেয়া হয়েছে। যা অনুমোদন হলে কেটে যাবে এ সমস্যা। তিনি বলেন, তারা চেষ্টা করছেন এই প্রকল্পের প্রজেক্ট অনুমোদন করানোর। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দুর্গন্ধ থাকবে না পাশাপাশি ওই প্লান্টের মাধ্যমে যে জৈব সার তৈরী হবে তা এই এলাকার চা বাগান থেকে শুরু করে কৃষকদের উপকারে আসবে।
এদিকে একাধিক বৈঠক করে সময় দেয়ার প্রস্তাব দিলেও এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা তা মানতে রাজী নন। আলোচনার ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার রাতে এলাকাবাসী, পৌর ও উপজেলা প্রশাসনকে নিয়ে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার হল রোমে জরুরী বৈঠকে বসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি টিম। সভায় শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন হাবিব শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের কাছে অনুরোধ করেন নতুন স্থানে প্রজেক্ট বাস্তাবায়ন না হওয়া পর্যন্ত পৌরসভাকে সময় দিতে। এ ব্যাপারে তাদের সরজমিনে আসার কথা রয়েছে।
এদিকে ময়লার ভাগাড় বন্ধ করে দেয়ায় শহরের ময়লা নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা পৌর কর্তৃপক্ষের। এতে শহরের বিভিন্ন সড়কে রাস্তার পাশে জমে আছে ময়লার স্তুপ। এতে পুরো শহর পরিনত হয়েছে দুর্গন্ধময় শহরে। শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসা পর্যটকরা নাকে হাত দিয়ে শহরে চলাচল করতে দেখা যায়।
এর আগে রবিবার সকালে ময়লার ভাড়ার বন্ধ করে শিক্ষার্থীরা শহওে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে তারা কলেজের পাশ থেকে দ্রুত সরানোর দাবীতে ঢাকা-মৌলভীবাজার সড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল যান চলাচল।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের দৃষ্টি আর্কশন করেছেন ভুক্তভোগীরা।



মন্তব্য করুন