নির্বাচনী প্রচারণার মাঝেই মানবিকতায় মন জিতে নিলেন এম নাসের রহমান
স্টাফ রিপোর্টার : নির্বাচনী ব্যস্ততা, জনসংযোগ, মানুষের ভিড়—সবকিছুর মাঝেও কখনো কখনো এমন কিছু দৃশ্য ঘটে যা রাজনৈতিক আয়োজনকে ছাপিয়ে মানুষের হৃদয়ে স্পর্শ ফেলতে পারে। মৌলভীবাজার-৩ (মৌলভীবাজার সদর রাজনগর) আসনের বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী জননেতা এম নাসের রহমানের নির্বাচনী প্রচারণার সময় এমনই এক ঘটনার জন্ম হয় রাজনগরের মুনসিবাজারে।
আযান পড়তেই ছুটলেন সবাই, থমকে গেলেন একজন: ঘটনা দুই দিন আগের। বিকেলের শেষপ্রহরে প্রচারণা শেষে নাসের রহমান তাঁর দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মুনসিবাজারের ভিড় পেরোচ্ছিলেন। ঠিক তখনই বাজারজুড়ে মাগরিবের আযানের ধ্বনি বেজে উঠলো। তিনি বাজারের মসজিদের দিকে রওনা হন। মসজিদের দরজায় পৌঁছানোর আগেই একটি দৃশ্য তাঁর চোখ আটকে দেয়।
এক ব্যক্তি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাঁর হাঁটা ছিলো ধীরগতির, কিন্তু ঈমানের টানে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য তিনি সর্বশক্তি দিয়ে এগোচ্ছিলেন। মসজিদের ভেতরে ইতোমধ্যেই জামাত দাঁড়িয়ে গেছে। তবু তিনি থেমে নেই—ব্যথাকে অগ্রাহ্য করে জামাতে পৌঁছাতে চাইছেন।
নাসের রহমান কিছুক্ষণ স্থির হয়ে দৃশ্যটি দেখলেন। তাঁর পাশেই গিয়ে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করলেন।
নামাজ শেষে এক মানুষের গল্প উন্মোচিত, নামাজ শেষে ওই ব্যক্তির সঙ্গে একটি সেলফি তোলেন তিনি। সাধারণ, নিরীহ, নিঃশব্দ মানুষটির চোখে লাজুক দৃষ্টি—যে দৃষ্টিতে খ্যাতির নেই, অতৃপ্তির নেই; আছে শুধু টিকে থাকার সংগ্রাম আর ঈমানের শক্তি।
মসজিদ থেকে বের হয়ে নাসের রহমান স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির নেতাদের ছবিটি দেখিয়ে জানতে চান মানুষটিকে কেউ চেনেন কিনা। নেতারা সঙ্গে সঙ্গে চিনে ফেলেন। তখনই বেরিয়ে আসে তাঁর জীবনের কঠিন বাস্তবতা—তিনি অত্যন্ত গরিব। মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী বলেও এলাকায় পরিচিত।
বাজারে ট্রাক থেকে দোকানিদের মালামাল বয়ে দিনমজুরির মতো কাজ করে জীবিকা চালান।
কিন্তু নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করেন—কাজের ব্যস্ততার মধ্যেও নামাজ কখনও বাদ দেন না।
প্রার্থী নয়, একজন মানুষ হিসেবে ডেকে নিলেন তাঁকে। ব্যক্তিটির কষ্টের গল্প শুনে নাসের রহমান তাকে ডাকতে বলেন। বাজারের কয়েকজন দোকানি তাকে নিয়ে আসেন প্রার্থীর সামনে।
ভীষণ লাজুক, মুখ নিচু, নিজের অভাবের কথা বলতে সংকোচ— এমন অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। নাসের রহমান তাঁর সঙ্গে কথা বলেন, শোনেন তাঁর কাজের গল্প, তাঁর কষ্টের কথা। ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাঁকে আর্থিক সহায়তাও দেন।
সহায়তা পাওয়ার পর সেই মানুষটি দুই হাত তুলে সালাম করে ধীরে ধীরে আবার বাজারের ভিড়ে মিলিয়ে যান—যেভাবে এসেছিলেন—খুঁড়িয়ে, তবু দৃঢ় ভাবে, নিজের ছোট্ট জীবনের লড়াইয়ে ফিরে।
মানুষটির ঈমান আমাকে নাড়া দিয়েছে-নাসের রহমান
এই ঘটনার বিষয়ে নাসের রহমান বলেন, রাজনীতি, প্রচারু এসবের বাইরে গিয়ে মানুষের বাস্তব জীবন ছুঁয়ে যায়। এই মানুষটি—তার অভাব, তার সীমাবদ্ধতা—কিছুই তাকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ থেকে দূরে রাখতে পারে না। এটা আমার হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সমাজে এমন মানুষ প্রচুর—যাদের সংগ্রামের গল্প কখনো শিরোনামে আসে না। কিন্তু এরা আমাদের মানবিকতার আয়না।
গ্রামাঞ্চলে নির্বাচনী প্রচারে মানবিকতার একটি স্মরণীয় মুহূর্ত: গ্রামের প্রচারণায় হাজারো মানুষের সঙ্গে প্রতিদিন দেখা হয়। কেউ সমস্যার কথা বলে, কেউ ভোটের কথা তোলে। কিন্তু এমন নীরব, অদৃশ্য সংগ্রামী মানুষের কাহিনী—যে কাহিনী কেউ তুলে ধরতে চায় না—তা হৃদয়ে ভিন্নভাবে জায়গা করে নেয়।
বাস্তবে রাজনীতি যতই গোলমেলে হোক, এই ছোট ছোট মানবিক মুহূর্তগুলোই অনেক সময় মানুষের প্রতি নেতাদের দায়বদ্ধতার পরিচয় হয়ে দাঁড়ায়।
মুনসিবাজারের সেই খুঁড়িয়ে হাঁটা মানুষটি হয়তো জানেন না, তাঁর ওপর লেখা হবে এমন একটি প্রতিবেদন। কিন্তু তাঁর অনাড়ম্বর, নিঃশব্দ জীবন—আর ঈমানের প্রতি তাঁর দৃঢ়তা—এই নির্বাচনী মৌসুমে একটি স্মরণীয় মানবিক গল্প হিসেবে থেকে যাবে।



মন্তব্য করুন