মিথ্যা মামলার ফাঁসিয়ে শ্রীমঙ্গলে ৩০ লাখ টাকার জমি দখল নেয়ার চেষ্ঠা সংবাদ সম্মেলন অভিযোগ

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি॥ ৩০ লাখ টাকা দামের ৫৭ শতক জমি দখলবাজদের কবল থেকে রক্ষা করতে ও নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা এবং মিথ্যা মামলার হয়রানী বাঁচতে প্রশাসনের কাছে সুবিচারের প্রার্থনা করেছে ভোক্তভোগী একটি পরিবার।
১৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপজেলার আশীদ্রোন ইউনিয়নের জিলাদপুর উদনারপাড় গ্রামের ফিরোজ আলী তোতার স্ত্রী তৈয়মুন নেছা (৬৫) এ দাবী করেন।
এ সময় তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন,আমাদের প্রতিবেশী মো.নফল মিয়ার (৫০) নেতৃত্বে মুনাফমিয়া (৭০), সালেকমিয়া (৩৫), লিটনমিয়া (৩০), খালিকমিয়া (৪০) রিপনমিয়া (২৫), মো. আয়ুবআলী (৬০), শহীদ মিয়া (৩৮), শফিক মিয়া (৩৫), দুলনমিয়া (৩৫) মিলন মিয়া (৩৩), মিলাদ মিয়া (৩০) সহ ৪/৫ সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমার পরিবারের নিজস্ব ৬শতক জমি (যার খতিয়ার নং-৬৮১, জেএল নং-৩৯, দাগ নং-১৩৯৪) অনাধিকার প্রবেশ জমির গাছপালা অবাধে কর্তন, ফসল বিনষ্ট করে। তখন আমি ও আমার স্বামী ফিরোজমিয়া বাধা দিলে আমাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে আমাদের উপর সন্ত্রাসীরা এলোপাথারি চড়থাপ্পর, কিলঘুষি মেরে আমার স্বামীকে আহত গুরুত্ব আহত করে। প্রাণেহত্যা করার হুমকি দেয়। আমাদের আত্মচিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসলে আমরা তাদের হাত থেকে রক্ষা পাই। এ ঘটনায় আমি বাদি হয়ে শ্রীমঙ্গল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে ১৬ সেপ্টেম্বর’ পর্যন্ত পুলিশ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে বাধ্য হয়ে বিষয়টি মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।
তিনি বলেন,প্রায় ৫০ বছর পূর্বে ১৯৭০ সালের ২৮ জানুয়ারি আমার শাশুড়ি হবিবুননেছা (স্বামী-মো.আমানউল্লাহ) জিলাদপুর মৌজায় ৪৫ শতকজমি ক্রয় করেন। তিনি ওই জমি ভোগ দখল করে আসা অবস্থায় মারা যায়। ফলে উত্তরাধীকারী সূত্রে জমির মালিক-দখলদার হন আমার স্বামী ফিরোজমিয়া ও দেবর নুরুজ আলী।
গত প্রায় অর্ধশতবছরধরে এ জমিটি মালিক সত্ত্বে আমাদের দখলে। বেশকয়েকবছর পূবের্ আমাদের গ্রামে (উদনারপাড়) বাড়ি করে বসবাস করছেন মৃত সিদ্দেক মিয়ার পুত্র মো. নফল মিয়া। তিনি ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে আকস্মিকভাবে দাবি করেন ওই ৪৫ শতক জমিটি নাকি তার। আমার কাছে যে দলিল রয়েছে তা অন্য জায়গার। এ নিয়ে স্থানীয় এলাকা এবং শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বিচার-শালিস হয়। বিচারে কাগজ পত্র পর্যালোচনা করে বিজ্ঞবিচারকগণ দাগ নাম্বার ভুল হলেও জমিটি আমাদের বলে রায় দেন। কিন্তু বিচারের রায় আমাদের পক্ষে যাবার পরপরই এরপরই আমাদের পরিবার নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করে।
সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত তৈয়মুন নেছার দেবরের স্ত্রী সুফিয়া বেগম বলেন,নফল একজন মাদকাসক্ত। এলাকায় যে কেউ খোঁজ নিলে এর সত্যতা পাবে। তিনি নফলের দ্বারা মিথ্যা মামলায় হয়রানী কথা বলতে গিয়ে হাইমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং বলেন, নফল মিয়া তার স্ত্রী ওয়াহিদা বেগমকে বাদী করে মিথ্যা ধর্ষনের চেষ্ঠা মামলায় (নারী ও শিশু নির্যতন দমন ট্রাইব্যুনাল মৌলভীবাজার) আদালতে ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী দায়ের পিটিশন মামলা (৮৯/২০১৭) করেন। তাতে তৈয়মুন নেছার ছেলে ফজলু ও আমার ১৭ বছরের ছেলে ফাহিম কে জড়িয়ে ১৭ দিন জেল খাটান। পরে তাদের উচ্চ আদালত থেকে অনেক টাকা ব্যয় করে জামিনে বের করে আনেন। তিনি বলেন, নফেল যে জমি নিতে চাচ্ছে এই ৫৭ শতক জমি আমার স্বামী ও তৈয়মুন নেছার স্বামীর মায়ের সম্পত্তি। এ জমির মূল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা। গত ১৩ সেপ্টেম্বর নফেল আমাদের জমিতে লাগানো সীমের ২০ ঝাড় ও গাছ কেটে ফেলে তান্ডব চালিয়েছে। গ্রামে দিনে ও রাতে তার কাছে সার্বক্ষণিক দা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তাকে ভয়ে কেউ কথা বলার সাহস পায় না। সে এমন লোক মাদকাসক্ত হয়ে সে নিজের বউ ছেলে সন্তানদেরও দা দিয়ে কেটে ফেলতে চায়।
সংবাদ সম্মেলনে আসা এলাকার মুরব্বী ধন মিয়া বলেন,৫০ বছর ধরে তৈয়মুন নেছার স্বামী ফিরোজ আলী তোতা ওই ৫৭ শতক জমিতে ক্ষেত গৃহস্থী করে খাচ্ছেন। এর মধ্যে নফল মিয়া তাদের ছেলেদের মিথ্যা মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে তাদের জমি দখলের চেষ্ঠা করছে। এ নিয়ে এলাকার মুরুব্বীগণ বসে সিদ্ধান্ত দেন আদালতের রায় পেলে ওই জমি নফেল কে বুঝিয়ে দেয়া হবে। এর আগে তারা তাদের জমিতে ভোগদখল করবে। তবুও সে মিথ্যা মামলা মোকদ্দমা ও গায়ের জোরে জমি দখলে নেওয়ার চেষ্ঠা করছে। তিনি বলেন, গত চার পাঁচ দিন আগে তাদের জমিতে ফলানো ফসল নফেলও ও তার সহযোগীরা সমুলে কেটে ফেলেছে। এ নিয়ে থানা পুলিশের কাছে,লিখিত অভিযোগও দেয়া হয়েছে। অথচ রহস্যজনক কারণে পুলিশ তদন্ত কিংবা আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে অভিযোগের তদন্তকারী শ্রীমঙ্গল থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক সুমন হাজরা বলেন,ছুটি ও ট্রেনিংয়ের কারণে থানায় চারজন দারোগা থাকায় সময়মতো এ অভিযোগের বিষয়ে তদন্তে যাওয়া হয়নি। আজই সরেজমিনে যাবো, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।
মন্তব্য করুন