শ্রীমঙ্গলে ২৮টি ছড়া ইজারার সিদ্ধান্ত ভেঙে যাবে অবৈধ বালু উত্তোলনের সিন্ডিকেট

তোফায়েল পাপ্পু॥ শ্রীমঙ্গল উপজেলার ২৮ টি ছড়া ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো। বিদ্যুৎ,জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানা যায়।
জানা যায়, ২ নভেম্বর বিদ্যুৎ,জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোল্লা মিজানুর রহমান এক পত্রে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো কে নির্দেশনা প্রদান করেন মৌলভীবাজার জেলার ৫২টি সিলিকাবালু মহালের ইজারা কার্যত্রুমে ২ খাম পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করার। এতে ইজারাদার ১টি খামে ইনভাইরনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট এসেসমেন্ট (ইআইএ) ও ইনভাইরনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট প্লান (ইএমপি) এবং অন্য খামে ইজারা মূল্য দাখিল করতে হবে। এসব পরিবেশগত ছাড়পত্র যথাযত কর্তৃপক্ষের নিকট বিবেচিত হতে হবে এবং ২০১২ সালের সিলিকা বালু মহাল ইজারা প্রত্রিুয়া বিধিমালা অনুসরণ করতে হবে।
এ প্রেক্ষিতে গত ২২ নভেম্বর খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) একে এম ফজলুল হক এক পত্রে জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজারকে জানান যে,অগ্রায়ন মাসের মধ্যে জেলার ৫২টি সিলিকা বালু কোয়ারি ২ বছর মেয়াদের জন্য ইজারা প্রদানের নিমিত্তে কোয়ারি এলাকা সনাক্তকরণ,স্থানীয় বাজারদর অনুযায়ী কোয়ারি ইজারা মূল্য নির্ধারণের জন্য একজন প্রতিনিধি নিয়োগ করতে।
জানা যায়, দীর্ঘ চার বছর থেকে জেলার ৫২ টি ছড়ার মধ্যে উপজেলার ২৮ টি বালু ইজারা বন্ধ ছিল। এর ফলে প্রতি বছর এ খাত থেকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছিল। বিগত ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় এনে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে একটি রিট পিটিশন-২৯৪৮/১৬ দায়ের করেন। এতে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ২৮টি সহ জেলার অন্যান্য উপজেলার আরও ২৩টি মোট ৫২টি ছড়ার সিলিকা বালু উত্তোলন বন্ধে আবেদন জানানো হয়েছিল। আদালত এসব ছড়ার কোয়ারী ইজারা কেবলমাত্র পরিবেশ অধিদফতর সম্পর্কিত কমিটির পরিবেশগত প্রভাব নিরূপন করে আইন অনুযায়ী পরিবেশের উপর প্রভাব বিবেচনায় এনে লীজ প্রক্রিয়ায় পরিবেশগত ছাড়পত্র ইনভাইরনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট এসেসমেন্ট (ইআইএ) প্রাপ্তি সাপেক্ষে অনুমোদন দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু নানা অজুহাতে পরিবেশ অধিদপ্তর ও খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো গত কয়েক বছর থেকে চিঠি চালাচালি করে সময়ক্ষেপন করে যাচ্ছিলেন। এদিকে এসব ছড়া থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছিল না। বালু কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছিল অবৈধ সিন্ডিকেট ব্যবসা।
জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজার মীর নাহিদ আহসান জেলার ৭ টি উপজেলার মধ্যে ৬টি উপজেলায় ৫২টি সিলিকাবালু কোয়ারি ইজারা প্রদানের মতামত চান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিকট। গত ৩ সেপ্টেম্বর তিনি ওই ৬ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মতামত নিয়ে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে পত্রে উল্লেখ করেন সিলিকা বালু গ্লাস, টাইলস, সিরামিকসসহ শিল্পকারখাানায় ব্যবহৃত হওয়ায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কোয়ারিসমূহের ইজারা কার্যত্রুম বন্ধ থাকায় একশ্রেণীর লোকজন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিত্রিু করছে। তাছাড়া এসব বালু ও পলি মাটি উজান থেকে পাহাড়ী ঢলে হাইল হাওরে পতিত হয়ে হাওর ভরাট,মাছের প্রজনন নষ্টসহ জলজ উদ্ভিদের জীব বৈচিত্র হুমকির মূখে পড়েছে।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গলের সচেতন মহল মনে করেন বালু কোয়ারি ইজারা দেয়া হলে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের পাশাপাশি বালু কেন্দ্রীক গড়ে উঠা সিন্ডিকেট ভেঙ্গে যাবে। এদিকে অবৈধ বালু উত্তোলন,পরিবেশ অধিদপ্তর ও খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মধ্যে গত কয়েক বছর থেকে চিঠি চালাচালি করে সময়ক্ষেপন এবং সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হওয়া নিয়ে দৈনিক যুগান্তর কয়েকটি সরেজমিন সচিত্র প্রতিবেদন করেছিল।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মৌলভীবাজার মল্লীকা দে জানান, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক জেলার ৫২টি সিলিকা বালু কোয়ারির ইজারা বন্ধোবস্তের জন্য একজন প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কাজ চলমান রয়েছে,শীঘ্রই দরপত্র আহ্বান করা হবে বলে তিনি জানান।
মন্তব্য করুন