কমলগঞ্জে সফল জননী “জয়িতা” মঞ্জুশ্রী সিনহা

প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ॥ কমলগঞ্জের একজন সফল জননী নারী মঞ্জুশ্রী সিনহা। এক মেয়ে ও দুই ছেলে সন্তান তার। এক মণিপুরী গরীব কৃষক পরিবারের বাবা সূর্যমণি সিংহ ও মাতা কুঞ্জ রানী সিনহার ঘর আলোকিত করে ১৯৬১ সালের ৫ মে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
একজন মা হিসেবে সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করতে তিনি যে অক্লান্ত পরিশ্রম এবং ত্যাগ শিকার করেছেন তার স্বীকৃতি হিসেবে কমলগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় তাকে ২০২০ সালে “সফল জননী নারী” ক্যাটগরীতে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা প্রদান করেন।
একমাত্র তার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং অদম্য প্রচেষ্টায় বড় ছেলে বিসিএস পাশ করে সহকারী কাস্টমস কমিশনার পদে এবং ছোট ছেলেও বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী পুলিশ কমিশনার পদে কর্মরত আছেন।
অভাব অনটনের মধ্যে নিজেকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার মনস্থির করে মঞ্জুশ্রী সিনহা বর্ণনাতীত বাধা বিপত্তিতে পড়লেও স্বপ্ন বাস্তবায়নে পিছ পা না হওয়ায় মামার বাড়িতে স্থানান্তর হতে বাধ্য হন। সেখানে থেকেই ১৯৭৮ সালে তিনি এস.এস.সি পরীক্ষায় বিজ্ঞান শাখা থেকে দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেন। তারপর নার্সিং এ ভর্তি হলেও নানা সমস্যার কারণে অসমাপ্ত রেখে বাবার বাড়িতে ফিরে আসলে কিছুদিন পর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের পাথারী গাঁও গ্রামের হাইস্কুল শিক্ষক প্রফুল্ল কুমার সিংহ এর সাথে তার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর তিনি পিটিআই ট্রেনিং এ ১৯৭৯-১৯৮০ ট্রেনিং বর্ষে ভর্তি হয়ে সফলতার সাথে সমাপ্ত করেন। তারপর ১৯৮২ সালের ১৬ আগষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহ-শিক্ষিকা পদে চাকরীতে যোগদান করেন।
সন্তানদের জন্ম হওয়ার পর তার স্বপ্নগুলো অন্যধারায় প্রবাহিত হয়। স্বামী-স্ত্রীর অল্প আয়ে সংসার সামাল দেওয়া যেখানে কষ্টকর হয়ে পড়ে, সেখানে তিনি সন্তানদের সুশিক্ষিত এবং উচ্চ শিক্ষা প্রদানের মনস্থির করে বিভিন্ন সময় ধার কর্জ করেছেন, নিজের সোনার গহনা বন্ধক দিয়েছেন, এমনকি নিজের নামীয় ভূ-সম্পত্তি বিক্রি করতেও বাধ্য হয়েছেন।
সর্বপুরি তৎকালীন সময়ে গ্রামাঞ্চলে মহিলাদের চাকরী এবং সন্তানদের নিয়ে এমন উচ্চাকাক্সক্ষাকে অন্য দৃষ্টিতে দেখা হতো বলে তার প্রতি বিভিন্ন কুটোক্তি করা হলেও তিনি না থেমে লক্ষ্য পুরণে এগিয়ে যান।
মন্তব্য করুন