জুড়ীর কমলা বাগানে পানির হাহাকার

December 25, 2020,

সাইফুল্লাহ হাসান॥ মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের রূপাছড়া, লালছড়া, হায়াছড়া, শুকনাছড়া ও কচুরগুল এলাকা কমলার জন্য বিখ্যাত।
তবে এবার মৌসুমের শুরুতেই কমলা বাগানে পানির হাহাকার পড়ে গেছে। এ বছর নির্দিষ্ট সময় বৃষ্টিও হয়নি। এতে কমলার ফলনও ভালো হয়নি। ফলে বিপাকে পড়েছেন কমলা চাষিরা।
এলাকার মানুষ ও কমলা চাষিরা বলছেন, দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চল হওয়ায় ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা ও উন্নত প্রযুক্তি নেই। বিভিন্ন প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করে কমলাচাষিরা কোন মতে টিকে আছে। সরকারের সহযোগিতা পেলে জুড়ী উপজেলা তথা বৃহত্তর সিলেটে উৎপাদিত কমলা দেশের চাহিদা মিঠিয়ে বিদেশে রপ্তানি করার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিন এসব এলাকা ঘুরে চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় দীর্ঘদিন থেকে কমলাচাষিরা পিছিয়ে রয়েছেন। বিশেষ করে সেচ ব্যবস্তা না থাকায় অনেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কমলা চাষ থেকে।
এ বছর চাষি মোরাশেদ মিয়ার বাগানে অন্যান্যদের তুলনায় অনেক ভালো ফলন হয়েছে। তবু উদ্বিগ্ন তিনি। গত তিন বছরে পানির অভাবে তার বাগানে ৪০০ গাছ মারা গেছে।
তিনি বলেন, ‘যখন গাছে কমলার মুকুল আসে, ফুল দেয় বা কমলা মটর দানার মতো হয়- তখন সেচের খুব প্রয়োজন হয়। সেসময় আমরা সেচ দিতে পারি না। সেজন্য কমলার আকার ছোট হয়। আবার ছোট ছোট কমলাগুলো ঝরে পড়ে। আমরা বাগানে নিয়মিত দুজন শ্রমিক কাজ করেন। আবার কমলার সিজনে ৭/৮ জন শ্রমিক মিলে বাগানে গাছগুলোর পরিচর্যা করেন। সরকারের কাছে অনুরোধ আমাদের যদি পানির সুবিধা করে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা আরও বেশি বেশি চাষ করতে পারব।’
বিশেষ করে এক ধরনের পোকার জন্য কমলা ঝরে পড়ে। এবছর প্রচুর কমলা নষ্ট হয়েছে। একদিনে ঝরে পড়েছে সাড়ে ৩০০ কমলা। এরকম প্রতিদিনই পড়ছে বলে জানালেন মোরাশেদ মিয়া।
পরিবেশ কর্মী খোরশেদ আলম বলেন, ‘কমলা চাষের জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়। পরিশেষে দেখা যায়, কমলা চাষে শুধুই ক্ষতি। অনেক কৃষক আছে, শুধু কমলার দিকে থাকিয়ে আছে তার পরিবার। বছর শেষে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে তাদের অভাব কোনোভাবে দূর হচ্ছে না। সঠিক যাতায়াতের ব্যবস্থা না থাকা, বিভিন্ন রোগের আক্রমণ, গাছ মরে যাওয়া এসব কারণকেই দূষছেন চাষিরা। ইদানিং বিশেষ করে সেচের অভাবে ভালো ফল আসে না।’
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১৪২ হেক্টর জমিতে ১৯৩টি কমলাবাগান আছে। সবচেয়ে বেশি ৯১ হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হয় জুড়ী উপজেলায়। বড়লেখায় ২৫ হেক্টর, কুলাউড়ায় ১৭ হেক্টর, সদরে ১.৫, শ্রীমঙ্গলে ৬, কমলগঞ্জে ১ ও রাজনগরে ০ দশমিক ৫০ হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হয়।
আরেক চাষি জয়নুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর যেরকম ফল এসেছে, এবার তা নেই। যখন ফুল আসে, তখন মেঘ নেই, পরে খরায় আরও জ্বালিয়ে দিয়েছে বাগান। তারপরও যদি সেচের ব্যবস্থা থাকতো, সঠিক সময়ে পানি দেওয়া যেত, তাহলে মুটামুটি ভালো ফলন হতো।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী বলেন, ‘বৃষ্টি কম হলে, গরমের মৌসুমে সেচের সমস্যা হয়। কীভাবে সেচ দিতে হবে, সে ব্যাপারে আমরা তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। যারা সেটা অনুসরণ করছেন, তারা গাছগুলো রক্ষা করতে পারছেন। তারপরও কীভাবে সেচ সুবিধা দেয়া যায়, সেটাও আমাদের প্রকল্প থেকে চিন্তা ভাবনা চলছে। ভবিষ্যতে হয়তো সেচ যন্ত্রের সরবরাহ করা যেতে পারে।’

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com