অদম্য মেধাবীদের গল্প: অন্যের বই পড়ে এপ্লাস পেল রাবেয়া

হোসাইন আহমদ॥ বাবা দিনমজুর আব্দুর রাজ্জাক। তৃতীয় শ্রেণীতে লেখাপড়া করার সময় ২ বোন ও ১ ভাই রেখে মা হাজেরা বেগম মারা যান। পরে বাবা আরেক বিয়ে করেন। এখন ঘরে সৎ মা। সৎ মায়ের ঔরসে আর ৩ ভাইয়ের জন্ম।
৮ সদস্যের পরিবারের খরচ ও ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া চালানো সম্ভব নয় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রামেসশরপুর গ্রামের দিনমজুর আব্দুর রাজ্জাক এর পক্ষে। নুন আনতে পানতা পুড়ায় এমন অবস্থা। তার পরেও হাল ছাড়েননি রাবেয়া। খেয়ে না খেয়ে চালিয়ে গেছেন লেখাপড়া। দারিদ্রতার কাছে হার মানেনি রাবেয়।
অদম্য মেধাবী রাবেয়া বেগম আব্দুর রাজ্জাক এর বড় মেয়ে। সে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় কমলগঞ্জ উপজেলার পতনউষার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগ থেকে এপ্লাস পেয়ে উপজেলা জুড়ে চমক সৃষ্টি করেছে। রাবেয়ার সাথে কথা হলে সে বলে, বাবার অর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় গাইড বই কিনে দেয়া সম্ভব হয়নি। প্রতিবেশি চাচাতো বোন সহপাঠি তাহেরা ইয়াসমিন এর বই এনে পড়তাম আবার মাঝে মধ্যে তাদের বাড়িতে গিয়ে লেখাপড়া করি। সহপাঠিরা খাতা, কলম ও বই সময় মতো পেলেও এগুলো আমার ভাঙ্গে ঝুটেনি। অনেক সময় অন্যের খাতা দার করে লিখেছি। মাঝে মধ্যে টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে খাতা কলম কিনতাম। সহপাঠিরা সারা বছর স্কুলের স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়লেও টাকার অভাবে রাবেয়ার পক্ষে পড়া সম্ভব হয়নি।
রাবেয়াদের বাড়ি থেকে ৫ কিঃ মিঃ দূরে পতনঊষার উচ্চ বিদ্যালয়। ২ কিঃ মিঃ যাওয়ার পরে সিএনজিতে ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও রাবেয়া টাকার অভাবে প্রতিদিন ৫ কিঃ মিঃ পায়ে হেটে স্কুলে যেত।
মেধাবী রাবেয়া পিএসসি পরীক্ষায় ৩.৭৬ এবং জেএসসি পরীক্ষায় ৩.২৮ পেয়ে উক্তীর্ণ হয়েছে। পিএসসি এবং জেএসসির তুলনায় এসএসসিতে ভালো ফলাফল করার কারণ জানতে চাইলে রাবেয়া বলে, জেএসসি পরীক্ষার সময় আমি অসুস্থ থাকায় ভালো ফলাফল করতে পারিনি। তখন প্রতিজ্ঞা করে ছিলাম এসএসসি পরীক্ষায় আমাকে ভালো ফলাফল করতে হবে। তখন থেকেই আমি নিয়মীত লেখাপড়া শুরু করি।
হত দরিদ্র অদম্য মেধাবী রাবেয়া আরোও বলে, আমার দিনমজুর বাবা, মা এবং প্রতিবেশিদের মুখে হাসি ফুটানোই ছিল আমার লক্ষ। এজন্য আমি সময় নষ্ট না করে নিয়মীত লেখাপড়া করেছি।
তোমার এ ফলাফলের পিছনে কার বেশি অবদান। এমন প্রশ্নের জবাবে রাবেয়া বলে, আমার মা-বাব এবং প্রতিবেশিরা আমাকে অনেক সহযোগীতা করছেন। বিশেষ করে আমার স্কুলের শিক্ষক আবু সুফিয়ান স্যার আমাকে এপ্লাস পাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন।
রাবেয়া বলেন, এইচএসসিতে ভর্তি হওয়ার জন্য আমার বাবার কাছে কোন টাকা নেই। কিন্তু আমার এ ফলাফলে আনন্দিত হয়ে প্রতিবেশিরা এগিয়ে আসতেছেন। লেখাপড়ার শেষে কি হতে চাও এমন প্রশ্নের জবাবে রাবেয়া বলে আমি একজন আদর্শ শিক্ষক হয়ে দেশ ও জাতি গড়ার কাজে এগিয়ে আসতে চাই।
মন্তব্য করুন