আনোয়ার চৌধুরীর মেঘের দেশে পাহাড়ের দেশে বইটি বাংলা সাহিত্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন
এম. মছব্বির আলী॥ বাংলাদেশ সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব লেখক আনোয়ার চৌধুরীর মেঘের দেশে পাহাড়ের দেশে গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠান ও পাঠপর্বে বক্তারা বলেছেন, ভ্রমণ সাহিত্য বিশ্ব সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। ইতিহাস আশ্রয়ী স্থান-কাল-পাত্রের সরস ও সাবলীল বর্ণনার মাধ্যমে একটি ভ্রমণ কাহিনী কালোত্তীর্ণ ক্লাসিক সাহিত্যের মর্যাদা পেতে পারে। এদিক দিয়ে আনোয়ার চৌধুরীর মেঘের দেশে পাহাড়ের দেশে বইটি বাংলা সাহিত্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।
১৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিকেলে এক্সেলসিয়র সিলেট হোটেল এন্ড রিসোর্টে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক লেঃ কর্নেল (অবঃ) সৈয়দ আলী আহমদ। এক্সেলসিয়র সিলেটের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও সময় সম্পাদক সাঈদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অলোচক ছিলেন ডেইলী নিউ নেশনের ন্যাশনাল ডেস্ক এডিটর হেমায়েত হোসেইন।
বিশেষ অতিথি ছিলেন এক্সেলসিয়র সিলেটের ডাইরেক্টর ও বিলেতে বৈশাখী মেলা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সিরাজ হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন দৈনিক জালালাবাদের সহকারী সম্পাদক কবি নিজাম উদ্দীন সালেহ।
মেঘের দেশে পাহাড়ের দেশে গ্রন্থের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন দৈনিক সিলেটের ডাকের সাহিত্য সম্পাদক এডভোকেট কবি আব্দুল মুকিত অপি ও ডেইলী নিউ নেশনের সিলেট প্রতিনিধি শফিক আহমদ শফি।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন এক্সেলসিয়র সিলেটের ডাইরেক্টর মার্কেটিং আহমদ আলী, ডাইরেক্টর এম এ কাইয়ুম, জিএম শিব্বির আহমদ চৌধুরী প্রমুখ।
লেখকের জীবনাচার, সরকারী দায়িত্বপালন, সংসার চেতনা ও লেখালেখি নিয়ে প্রাণবন্ত বক্তব্য রাখেন তার সহধর্মিণী কেমব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক ইশরাত চৌধুরী। স্বামীর প্রত্যেকটি লেখার প্রথম পাঠক হিসেবে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে ইশরাত চৌধুরী বলেন, এখানে এসে আমার ভাল লাগছে। আয়োজকদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তবে মনে হচ্ছে, লেখককে পারিবারিক কাজে কম ব্যস্ত রাখলে আরো বেশী সৃজনশীল লেখা তিনি উপহার দিতে পারতেন।
বিভিন্ন দেশে ভ্রমণকালীন অভিজ্ঞতা, সেসব দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, জনগণের আচার-আচরণ ও নৃতাত্ত্বিক পরিচয় উদঘাটনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে লেখক আনোয়ার চৌধুরী নিজের সহজাত সীমবদ্ধতার কথাও প্রকাশ করেন। তিনি নিজেকে একজন ভাল পাঠক হিসেবেই পরিচয় দিতে চেয়েছেন। উপস্থিত সকলে তার বিনয় প্রকাশের এই মহৎগুনে মুগ্ধ হন। তবে লেখক জানান, সিলেট তথা সুরমা ও বরাক ভ্যালির সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করছেন এবং শীঘ্রই তা প্রকাশিত হবে বলে প্রত্যাশা করেন।
সৈয়দ আলী আহমদ বাংলা ভাষায় ভ্রমণ সাহিত্যের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, মেঘের দেশে পাহাড়ের দেশে বইটি আমাদের সাহিত্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। বইটি পড়ার জন্য তিনি নবীণ লেখক সহ সর্বস্তরের পাঠকদের প্রতি আহ্বান জানান।
সাঈদ চৌধুরী বলেন, মেঘের দেশে পাহাড়ের দেশে বইটির লেখক আনোয়ার চৌধুরী একজন সুন্দর মনের মানুষ। বাংলাদেশ সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আনোয়ার চৌধুরী চাকরি জীবনে স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ে অভিজ্ঞতা লাভের জন্য বিদেশ সফরের উপর ভিত্তি করে বইটি লিখেছেন। তিনি পেশাগত ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ লাভের জন্য থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, চীন, মায়ানমার ও ভারত সফর করেছেন। যেখানে যা দেখেছেন, উপলব্ধি করেছেন সে বিষয়গুলোকেই তার লেখায় এনেছেন সরল সহজ ভাষায় বেশ নান্দনিকতার সাথে। মেঘের দেশে পাহাড়ের দেশে, জরিমানার শহর, নিষিদ্ধ নগরে, মাহাথিরের দেশে, দিল্লী সফরে, শ্যাম দেশে-এই ছয়টি শীরোনামে পৌনে দু’শো পৃষ্ঠার বইটি সত্যিই অসাধারণ। ভ্রমণ কাহিনীর আদলে রচিত বইটিতে রয়েছে সুনিপুণ প্রাকৃতিক বর্ণনা। উপন্যাসের ঢঙে লেখক মাঝে মাঝে তুলে এনেছেন চমৎকার জীবনচিত্র। রয়েছে বহু শহর-জনপদের ইতিহাস ও নৃতাত্ত্বিক বর্ণনা। এটা তার জ্ঞান ও লেখনীর শক্তিমত্তার পরিচায়ক।
হেমায়েত হোসেইন বলেন, ভ্রমণ সাহিত্য বিশ্ব সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। মেঘের দেশে পাহাড়ের দেশে বইটি বাংলা সাহিত্যে নতুন মাত্রা সৃষ্টি করবে। লেখক এ বিষয়ে তথ্য সমৃদ্ধ আরো বই উপহার দেবেন এমনটা প্রত্যাশা করি।
সিরাজ হক বলেন, যারা লেখালেখি করেন, তারা গুণী লোক। যে দেশে গুণীলোকের কদর নেই, সেদেশে গুণীর জন্ম হয়না। তিনি আনোয়ার চৌধুরীর মতো লেখকদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান ও অনুপ্রাণিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
নিজাম উদ্দীন সালেহ তার বক্তব্যে বাংলা ভাষায় ভ্রমণ সাহিত্যের ইতিবৃত্ত তুলে বলেন, মানসম্পন্ন ভ্রমণ সাহিত্য পাঠক সমাজকে বিভিন্ন দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য ও কৃষ্টির সাথে পরিচিত হতে সাহায্য করে। স্থান-কাল-পাত্রের সরস ও সাবলীল বর্ণনার মাধ্যমে একটি ভ্রমণ কাহিনী কালোত্তীর্ণ ক্লাসিক সাহিত্যের মর্যাদা পেতে পারে।
কবি আব্দুল মুকিত অপি ভ্রমণ কাহিনীসহ সাহিত্যের অন্যান্য শাখায় সিলেটের প্রবীণ ও নবীন লেখকদের অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, সিলেট অঞ্চলে সৈয়দ মুজতবা আলী, হাসন রাজা, রাধা রমনের মতো বিশ্ব বরেণ্য সৃষ্টিশীল মানুষের জন্ম হয়েছে, এদিক দিয়ে সিলেট সত্যিই রতœগর্ভা। সিলেটের সন্তান আনোয়ার চৌধুরী আমাদেরকে একটি ভাল বই উপহার দিয়েছেন। আগামীতে আরো দিগন্ত বিস্তৃত লেখা তার কাছে প্রত্যাশা করি।
শিব্বির আহমদ চৌধুরী একটি তথ্য সমৃদ্ধ ভ্রমণ কাহিনী উপহার দেওয়ার জন্য লেখক, প্রকাশক সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানান।
মন্তব্য করুন