এখনও পুলিশ পাহারায় মৌলীবাজারের দুই জঙ্গি আস্তানা ১ মাসেও ২ জঙ্গির পরিচয় মিলেনী ধান ক্ষেতের বোমাটি এখনও অক্ষত

May 2, 2017,

হোসাইন আহমদ॥ দীর্ঘ একমাস পর নিরাপত্তার জন্য এখনও পুলিশি পাহারায় রয়েছে নাসিরপুর ও বড়হাটের জঙ্গি আস্তানার বাড়ি দুটি। তবে আতংক কাটছেনা এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে। দুটি আস্তানায় নিহত শিশুসহ ১০ জনের মধ্যে ৮ জনের পরিচয় পাওয়া গেলেও ২জনের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি প্রশাসন। বড়হাটের আস্তানায় জঙ্গিদের নিক্ষিপ্ত বোমা ১ মাস ধরে এখনও অক্ষত অবস্থায় রয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
সরেজমনি ৩০ এপ্রিল  রবিবার মৌলভীবাজার পৌর শহরের জঙ্গি আস্তানা বড়হাটের সেই বাড়িটির পাশে গেলে দেখা হয় পুলিশ কনস্টেবল আব্দুল কুদ্দুসের সাথে। এসময় তিনি বলেন, পুলিশ অভিযানের পর থেকে অদ্যবধি ২৪ ঘন্টা পাহারায় রয়েছে বাড়িটি। এখন পর্যন্ত ওই বাড়িতে কোন সাধারণ লোককে ডুকতে দেয়া হয়নি। মালিক অথবা তার কোন আত্মীয়ও বাড়িতে আসেননি। কর্তব্যরত পুলিশ বলেন, আজ প্রধানমন্ত্রী সুনামগঞ্জ আসছেন যার কারণে আমারা ৩জন দায়িত্বে আছি। তা না হলে পাহারায় আরও বেশি লোক থাকেন। সদর উপজেলা খলিলপুর ইউনিয়নের নাসিরপুরের বাড়িতেও ৩জন পুলিশ সদস্য পাহারায় রয়েছেন।
এসময় জয়তুন বিবির সাথে দেখা হলে তিনি বলেন, ভয়ে সন্ধ্যার পর একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কোন লোক বাসার বাহিরে জাননি। বিশেষ করে শিশু ও নারীদের মধ্যে ভয় কাজ করছে।
সদর উপজেলার নাসিরপুরে “অপারেশন হিট ব্যাক” এ নিহত চার শিশুসহ ৭ জনের লাশ সনাক্ত করতে গত ৩ এপ্রিল দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ৩নং সিংরাই ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রাম থেকে জঙ্গি লোকমানের স্ত্রী শিরিন আক্তারের বাবা আবু বক্কর, বোনের জামাই আনোয়ার হোসেন এবং ইউপি সদস্য মোফাজ্জল হোসেন মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে এসে লাশ সনাক্ত করেন। পুলিশের পক্ষ থেকে লাশ নিতে অনুরোধ জানালেও তারা প্রত্যাখান করেন।
মৌলভীবাজার পৌর শহরের বড়হাটে অভিযান “মাক্সিমাস” এ নিহত ৩ জঙ্গি মধ্যে আশরাফুল আলম নাজিমের মৃতদেহ সনাক্ত করে তার পরিবার। কিন্তু ওই পরিবারও লাশ নিতে রাজি নয়। তবে ওই ঘটনায় নিহত আরও এক পুরুষ জঙ্গি ও এক নারী জঙ্গির পরিচয় এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।
লাশ না নেয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে মৌলভীবাজার পৌর কর্তৃপক্ষ কবরস্থ করে ৮জনকে। তবে সে দুই জঙ্গির ডিএনএ পুলিশের সংগ্রহে আছে বলে জানা গেছে। দুই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানায় মামলা করেছে।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ জালাল বলেন, অন্য কোন আলামত আছে কিনা তা দেখার জন্য আমরা বাড়িটি পাহারায় রেখেছি। পরিচয়হীন ২জনের পরিচয় শনাক্ত করার জন্য ডিএনএ টেস্ট করা হচ্ছে। অক্ষত বোমার বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, পানি না শুকালে এটা উদ্ধার করা যাবে না।
প্রসঙ্গত, ২৯ মার্চ মঙ্গলবার রাত থেকে বড়হাট ও নাসিরপুর দুইটি জঙ্গি আস্তানা ঘিরে রাখেছিলো পুলিশ ও র‌্যাব। পৃথক দুটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় আশপাশের দুই কিলোমিটার জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। ওইদিন সন্ধ্যায় অভিযান চালায় (সর্বাধুনিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্পেশাল উইপন্স অ্যান্ড ট্যাক্টিকস) সোয়াট দল। নাসিরপুরে সোয়াত টিমের প্রধান মরিরুল ইসলামের নেতৃত্বে “অপারেশন হিটব্যাক” পরিচালনা করা হয়। অপারেশন হিটব্যাক চলা কালে আত্মঘাতি বোম বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ওই আস্তানায় দুই শিশুসহ একই পরিবারের ৭জন নিহত হয়। নাসিরপুর অপারেশন হিট ব্যাক চলা কলে মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট জঙ্গি আস্তানা ঘিরে রাখে পুলিশ ও র‌্যাব।  পরের দিন ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় বড়হাটের জঙ্গি আস্তানা রেকি করার পর রাতে অভিযানে নামে সোয়াট টিম। অভিযানের নাম দেওয়া হয় “অপারেশন ম্যাক্সিমাস”। এতে নিহত হয় নারীসহ তিন জঙ্গি।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com