কবি আব্দুল হান্নান সেলিম এর নান্দনিক-বিয়োগান্তক প্রকাশনা “বেলা শেষে ফিরে দেখা” গ্রন্তের বহুল প্রচার-গ্রহ্ণকারের মাগফিরাত কামনা

September 8, 2021,

মুজিবুর রহমান মুজিব॥ বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প সাধারনতঃ একুশের বই মেলা কেন্দ্রীক। বাংলা একাডেমী আয়োজিত অমর একুশের বই মেলায় লেখক-প্রকাশক-পাঠক-দর্শকের মিলন মেলা বসে। প্রাণের মেলা একুশের বই মেলায় সভা-সমাবেশ-মোড়ক উন্মেচনানুষ্ঠান-সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বই মেলার আবেগ আমেজ ও আবেদন শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারী মাসেই সীমাবদ্ধ না রাখা এবং মুক্ত বুদ্ধির চর্চাও পাঠাগার আন্দোলনকে সাংবাৎসরিক ভাবে চর্চাও বেগবান রাখার অঙ্গীঁকার ব্যক্ত করা হয়। মফস্বল পর্য্যায়ে প্রকাশনা শিল্পের সমস্যা ও সংকটের মাঝেও পীরানে পীর ইয়েমেনী বীর হযরত শাহ জালালের স্মৃতি ধন্য পূন্যভূমি সিলেট ও পাঠাভ্যাস-পাঠাগার আন্দোলন এবং প্রকাশনা শিল্পে পিছিয়ে নেই। বৃটিশ ভারতের শেষ এবং পাক আমলের প্রথম ভাগে মাদ্রাসা পড়ুয়া এক নুরুল হক দশ ঘরি কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ এবং সংসদের মুখপত্র ‘আল ইসলাহ’-তে আজীবন খেদমত করে সিলেট নয় সমগ্র দেশব্যাপী পাঠাগার আন্দোলনের পথিকৃত হিসাবে খ্যাত স্বীকৃত-সমাদৃত। মুক্তিযুদ্ধের সংঘটক বহু মাত্রীক প্রতিভার অধিকারি সিলেট বন্ধু শ্রদ্ধেয় আমিনুর রশীদ চৌধুরীর দৈনিক যুগভেরী দেশের প্রাচীনতম সংবাদ পত্র হিসাবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
সিলেটের বর্ত্তমান মেধাবী প্রজন্মও সাংবাদিকতায়-সম্পাদনায়-প্রকাশনায় প্রতিভার ছাপ রাখছেন। সিলেটের বিশিষ্ট লেখক আব্দুল হান্নান সেলিম রচিত-বেলা শেষে ফিরে দেখা গ্রহ্ণ খানি সম্প্রতি উপহার পেয়েছি সিলেটের বিশিষ্ট সাংবাদিক কলামিষ্ট বৃক্ষরোপনে জাতীয় পুরষ্কার-স্বর্ণপদক প্রাপ্ত মানব প্রেমিক বহু গ্রহ্ণ প্রণেতা বন্ধুবর আফতাব চৌধুরী মারফত, যিনি আব্দুল হান্নান সেলিমের সহপাঠি, বাল্যবন্ধুও বটেন। বুক রিভিউ গ্রহ্ণালোচনা আমার প্রিয় বিষয়। এক উছিলায় এক খানি গ্রহ্ণের আদ্যপান্ত-পড়তে হয়-শানে নুযুল বুঝতে হয়। বিশ্ব সাহিত্যের মাষ্টার পিস-লিও টলষ্টয় এর ক্লাসিক গ্রহ্ণ “ওয়ার এন্ড পিস”, শ্রদ্ধেয় শিক্ষা গুরু কবিও কলামিষ্ট সাবেক সচিব ও হাই কমিশনার এ.এইচ.মোফাজ্জল করিম, বৃহত্তর সিলেটের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইংরেজী সাহিত্যের খ্যাতিমান পন্ডিত শ্রদ্ধেয় কে.কে.পাল চৌধুরী মহাশয় এর গ্রহ্ণ রিভিউর নামে “হাতালাবড়ি” করে দূঃ সাহসের পরিচয় দিয়ে বিদগ্ধ পাঠক পাঠিকা কুলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলাম। এই গ্রহ্ণ পাওয়া পাঠ করার পর তাৎক্ষনিক ভাবে পাঠ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত কিংবা রিভিউর নামে দু’কলম লিখতে মর্মাহত-আবেগ আপ্লুত ও বিব্রতবোধ করছি। গ্রহ্ণ সমালোচনায় আলোচ্য গ্রহ্ণের চুলচেরা বিশ্লেষন করতঃ ত্রুুটি বিচে্যুতি-অসম্পূর্ণতা-ব্যর্থতা বের করা হয়, ছাপা খানার ভূতের নিকুচি করে পরবর্তী সংস্করনে শোধরানোর বারোয়ারী উপদেশ খয়রাত করা হয়, ভদ্রতা দেখিয়ে গ্রহ্ণকারের সুস্ব্যাস্থ, দীর্ঘায়ূ ও কল্যান কামনা করা হয়। কিন্তু হায় এই গ্রহ্ণ যখন ছাপা খানায় তখন বর্ণাঢ্য ও বর্নীল কর্ম জীবনের অধিকারি কর্মবীর গ্রহ্ণকার কবি আব্দুল হান্নান সেলিম বৈশ্বিক ব্যাধি ভয়াবহ করনায় আক্রান্ত হয়ে তাঁর জীবন সংগ্রামের অবসান ঘটান-মহান মালিক তাঁর গোনাহ খাতা মাফ করুন-বেহেশত নসীব করুন শুরুতেই এই মোনাজাত করছি। ¬¬সাদা অফসেট কাগজের ডিমাই ওয়ান এইট সাইজের অষ্টাসি পৃষ্ঠার গ্রহ্ণে গ্রহ্ণকার আব্দুল হান্নান সেলিমের নয়টি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে। গ্রহ্ণের শুরুতে গ্রহ্ণ তোরন-শিরোনামে কবি অনুবাদক ও সাহিত্য সমালোচক অধ্যাপক বাছিত ইবনে হাব্বি সারগর্ভ বয়ানে গ্রহ্ণের মান মর্য্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন-প্রাসঙ্গিঁক তথ্যাদি উপস্থাপন করেছেন। গ্রহ্ণকারের নয়টি নিবন্ধের শিরোনাম ও আকর্ষনীয় ব্যতিক্রমী। বোম্বাইয়া কসম, গরু চোরদের সাথে রাত্রি যাপন, আয়নায় মাস্তান, দিন এক দেনা অনেক এবং তটিনী এক তরঙ্গঁ অনেক-এর ভাষা, সহজ, সরল, ঝরঝরে ও সুখ পাঠ্য। ঘটনার ঘনঘটা ও সত্য প্রকাশে গ্রহ্ণকার কোন রাখ ঢাক করেন নি। সহজ সরল ভাবে বর্ণনা করে গেছেন। বাল্য কৈশোর কাল থেকে দূরন্ত দুষ্টু ও দারুন ডান পিটে ছিলেন গ্রহ্ণকার আব্দুল হান্নান সেলিম। তটিনী এক তরঙ্গঁ অনেক নিবন্ধে গ্রহ্ণকারের সহজ সরল উক্তি “৪/৫ জন ছাত্র মিলে রাস্তায় যত বেশি দুষ্টুমি করা যায় তাই সেরে পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতাম। স্কুলটি শহরের (রাজাস্কুল) অধিকাংশ দুষ্টুদের ঠিকানা হিসাবে চিহ্নিত ছিল। বড় হতে হতে পাড়ায় ফুটবল, ক্রিকেট খেলারও গোড়া পত্তন হল মূলতঃ আমারই প্রচেষ্টায়। তবে যত বাঁদরামি করি না কেন মসজিদে ফজরের আজান আমিই দিতাম”- সিলেট শহরের এক অভিজাত খান্দানি শিক্ষিত সম্ভান্ত বিত্তবান ধর্ম প্রাণ মুসলমান পরিবারের সু-সন্তান আব্দুল হান্নান সেলিম মহাজন পট্টির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সিলেটের বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগি আব্দুছ ছত্তার এর সুপুত্র হিসাবে তাঁর কোন অহংকার কিংবা অহংবোধ ছিল না ডান পিটে ও জেদী হলেও তিনি ছিলেন সহজ সরল সাদা মনের মানুষ মহত মানুষ। সৎ মানুষ। এম.সি.কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্র আব্দুল হান্নান সেলিম ইংরেজী সাহিত্যে কৃতিত্বের সাথে মাষ্টার্স ডিগ্রী অর্জন করে শিক্ষা জীবনের অবসান ঘটান। বঙ্গঁবীর জেনারেল অবঃ এম.এ.জি ওসমানীর একান্ত অনুরোধে ফেঞ্চুগঞ্জ কলেজ ইংরেজীর অধ্যাপক হিসাবে যোগ দিয়ে কর্ম জীবনের শুভ সূচনা করেন। বছর কয়েক এর মধ্যেই বৃহত্তর সিলেটে চা শিল্প বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এস.এম.উদ্দীন সাহেবের সুপরামর্শে ব্যবসায়ে যোগ দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামে ব্যবসা বানিজ্যে বিপুল খ্যাতি অর্জন করতঃ ব্যবসায়ী সমাজের শীর্ষ সংঘটন এফ,বি,সি,সি,আই, এর পরিচালক নির্বাচিত হয়ে নেতৃত্ব প্রদান করেন। নব্বইর দশকে চট্টগ্রামে প্রলংকরি ঘুর্ণিঝড়ে চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নান সেলিম এর দোকান গোদামে রক্ষিত কোটি কোটি টাকার সিমেন্ট ও মালামাল বিনষ্ট হয়ে গেলে দারুন অর্থ সংকটের সম্মুখীন হন ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নান সেলিম। মহান আল্লাহ্ ঈমান আমলের উপর ভরসা করে আত্ববিশ্বাস ও আত্বপ্রত্য য়ের সাথে সংকট মোকাবিলা করেন। ব্যাংক ঋণ এর টাকা আত্বসাত করে ঋণ খেলাপী হন নি, কিংবা কানাডায় ব্যাংক ঋণ এর টাকা পাচার করে বেগমপাড়ায় বাড়ি ক্রয় করেন নি, বরং দেশে থেকে বিভিন্ন ভাবে অর্থ সংগ্রহ করে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করে চট্টগ্রামের বিশাল ব্যবসা বানিজ্যের পাট চুকিয়ে ঘরের ছেলে ঘরৈ ফিরে আসেন-স্ব-পরিবারে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন পুন্যভূমি জন্মভূমি প্রিয় শহর শাহ্ জালালের সিলেটে। এতদিনে কর্ণফুলি, কুশিয়ারা আর সুরমা নদীতে অনেক পানি গড়িয়ে গেছে। কর্ম বীর আব্দুল হান্নান সেলিম জীবন সংগ্রামে ক্লান্ত না হলেও পরিনত বয়সে-জীবন সায়াহ্ণে শেষ বেলায়।
সিলেটে ব্যবসা বানিজ্য-জীবন জীবিকার সঙ্গেঁ সঙ্গেঁ শিল্প সাহিত্য-শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নে আত্ম নিয়োগ করেন তিনি। কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ-কে মুসাসের সাহিত্য বাসরে সক্রিয় হন সাহিত্য সেবী আব্দুল হান্নান সেলিম। কবিতায় পরিপক্কতা, কেমুসাস এর প্রতি তাঁর ভালোভাষা এবং স্নেহ ভাজন সহকর্মিদের প্রতি তাঁর সহ মর্মিতার প্রমান পাওয়া যায় “কেমুসাস” এ আমরা কজন কবিতায়ঃ
“বীথি বিনা কেমুসাস ফুল বিনাগাছ, অপি বিনা কেমুসাস জল বিনা মাছ, সেলিম আওয়াল এক নিবেদিত প্রাণ সর্ব কর্মে স্বিদ্ধ হস্ত অজেয় অম্লান। বাছিত হাবিব ছাড়া আলোচনা নয় কখন ধরবে কারে সদা থাকে ভয়। মুয়াজ এনাম ছড়ায় ছড়ার সুবাস, মুক্তদার মুক্ত কন্ঠ বাজে ঠাস ঠাস। পক্ক কেশি সিরাজ ভাই জ্ঞানের আধার বিজ্ঞান কবিতা সব যেন একাকার। সঙ্গীঁতে সুর দেন দাদন বাহার তৃষ্ণার্থ কবিদের সন্ধ্যার আহার। আরো কত গুণীজন কালে ভদ্রে আসে, সৌরভ ছড়িয়ে দিতে বিষাক্ত বাতাসে”। গ্রহ্ণে গল্পকার ও সাংবাদিক তাসলিমা খানম বীথি তার লেখা “তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর কবিতায়” এ-ভাবেই লিখেছেন।
গ্রহ্ণকার আব্দুল হান্নান সেলিম পরিনত বয়সে সিলেটে এসে স্থায়ী ভাবে বসবাস, ব্যবসা, সমাজ ও সাহিত্য কর্ম চালাতে থাকেন, তাঁর সকল সুহৃদ-শুভাকাংখীদের দাবীর প্রেক্ষিতে বক্ষমান গ্রহ্ণ প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিলে-পাপড়ি প্রকাশনির পক্ষ থেকে গ্রহ্ণ খানি মুদ্রন কাজের সময় বৈশ্বিক ব্যাধি করনায় আক্রান্ত হন গ্রহ্ণকার আব্দুল হান্নান সেলিম। ছাপার কাজ সাময়ীক ভাবে বন্ধ থাকে। গ্রহ্ণকারের ইচ্ছা ছিল তিনি সুস্থ হলে গ্রহ্ণখানি প্রকাশ করবেন কিন্তু দূঃখ ও দূর্ভাগ্য জনক ভাবে ২৮ শে আগস্ট ২০ সালে তিনি ইন্তিকাল করেন। তাঁর মৃত্যোর পর প্রকাশক, তাঁর পরিবার বর্গ ও সুহৃদ দের সদিচ্ছায় গ্রহ্ণখানি প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয় এবং গ্রহ্ণে সুচীপত্র শেষে পরিশিষ্টাংশে গুনীজনের স্মৃতি চারন ও অন্যান্য শিরোনামে সদ্য প্রয়াত মরহুম গ্রহ্ণকারের সুহৃদ-সু-সম্পর্ক যুক্ত কবি ও অধ্যক্ষ কালাম আজাদ, প্রবীন লেখক গবেষক রফিকুর রহমান লজু, সাংবাদিক কলামিষ্ট আফতাব চৌধুরী, কেমুসাস সহ সভাপতি কবি ও লেখক কর্নেল অবঃ সৈয়দ আলী আহমদ, অবঃ পুলিশ সুপার কাওছার আহমদ হায়দরী, কেমুসাস সহ সভাপতি গল্পকার সেলিম আওয়াল, ভিন্ন ধারা সম্পাদক জাহেদুর রহমান চৌধুরী, শিশু সাহিত্যিক ও প্রকাশক কামরুল আলম, গ্রহ্ণারের এক মাত্র কন্যা নাবিলা খানম গল্পকার ও সাংবাদিক তাসলিমা খাঁনম বীথি এর দশটি প্রাসঙ্গিঁক মূল্যবান, রচনা স্থান পেয়েছে। পরিশিষ্ট-সংযোজিত হয়ে গ্রহ্ণখানি পূর্নতা পেয়েছে, লেখক গণ গ্রহ্ণকারের কর্ম ও জীবন দর্শন এর ব্যাপক-বিস্তৃত আলোচনা করেছেন। সিলেট শহর-সদর নয়-বিভাগের প্রবীন লেখক-গবেষক রফিকুর রহমান লজুর-সমাজ হিতৈষী আব্দুল হান্নান সেলিম-শিরোনামের মূল্যবান রচনায় কিছু তথ্যগত ভ্রান্তি ও অসম্পূর্নতা আছে। গ্রহ্ণের ৫৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে একবার কোথা থেকে ফিরতে আমরা শ্রীমঙ্গঁলে ফিরতি বিরতি করলাম। শ্রীমঙ্গঁলের বিখ্যাত মিষ্টির দোকানের মালিক তাঁর ভগ্নিপতি। আমরা দোকান ঘরের তৃতীয় তলায় এশার নামাজ পড়লাম। সেলিম ইমামতি করলেন। ফেরার সময় তার ভগ্নিপতি আমাদের সবার হাতে একটি করে মিষ্টির বাক্স ধরিয়ে দেন। প্রকৃত তথ্য ও সত্য হল স্থানটি শ্রীমঙ্গঁল নয়, মৌলভীবাজার পৌরসভা এলাকাধীন শ্রীমঙ্গল সড়ক এলাকা। শ্রীমঙ্গল উপজেলা সদর কিংবা শ্রীমঙ্গলে পৌর এলাকা এখান থেকে প্রায় পনেরো কিলোমিটার দক্ষিনে। এই শ্রীমঙ্গল রোডে-আব্দুল হান্নান সেলিমের ভগ্নিপতি আলহাজ্ব সৈয়দ ফারুক আহমদ এর মালিকানাধীন বেঙ্গঁল সুইট ফুড, বেঙ্গঁল ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর, বেঙ্গঁল কাবাব হাউস এবং বর্তমানে বৃহত্তর সিলেটের মধ্যে বৃহত্তম বেঙ্গঁল কনভেনশন হল এবং এর সামনেই আলহাজ্ব সৈয়দ ফারুক আহমদ এর বিশাল বসত বাড়ি। সেলিমের ভগ্নিপতি জেলা সদরের একজন শিক্ষিত সম্ভান্ত ও সম্মানিত ব্যক্তি। আব্দুল হান্নান সেলিমের বোন বড় ঘরে ভালোবরে পাত্রস্থ। তিনি জেলা সদরে কমিউনিটি সেন্টার ও ফাষ্ট ফুড ব্যবসার পথ প্রদর্শক। জনাব রফিকুর রহমান লজু একজন প্রবীন লেখক-গবেষক আমি নিজে তাঁর অনুরাগি পাঠক। তাঁর রচনায় তথ্য বিভ্রাট ও অসম্পূর্ণতা থাকা অনুচিত বিধায় বিনয়ের সাথে সংশোধনীও সংযোজনী দিলাম। মূল গ্রহ্ণে গ্রহ্ণকারের রচনায় কিঞ্চিত মুদ্রন ভ্রান্তি আছে-থাকাটাই স্বাভাবিক-সহনীয় ও বটে। তবে গ্রহ্ণকারের “তটিনী এক তরঙ্গঁ অনেক” শিরোনামের রচনায় পঞ্চাশ পৃষ্ঠায় একটি তথ্য গত ভ্রান্তি আছে। গ্রহ্ণকার বলেছেন “সিলেটের সভাপতির দায়িত্ব পড়ল অত্যন্ত সৎ ও সম্বৃদ্ধ ব্যক্তিত্ব ডা.চঞ্চল চৌধুরীর উপর। তিনি শফিককে সেক্রেটারি ও আমাকে অর্গে নাইজিং সেক্রেটারির দায়িত্ব দিলেন”। তথ্য হল, স্বাধীনতা উত্তর কালে মুক্তিযুদ্ধের সংঘটক, মুজিব বাহিনীর আঞ্চলিক অধিনায়ক শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ গঠিত হলে, বৃহত্তর সিলেটে মুজিব বাহিনীর সংঘটক সৎ মহত ও জনপ্রিয় যুব নেতা ডা. দেওয়ান নূরুল হোসেন চঞ্চলকে সিলেট জেলা যবলীগ গঠনের দায়িত্বভার অর্পন করেন। তিনি কৃতিত্বের সাথে সে দায়িত্ব ভার পালন করে পরবর্তীতে যুব লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসীন হয়েছিলেন। বিগত একুশের বই মেলায় প্রকাশিত বৃহত্তর সিলেটের উপর আমার গবেষনা গ্রহ্ণ “আমার দেখা একাত্তোরে” অকাল প্রয়াত আমার প্রিয় চঞ্চল ভাইর সচিত্র বর্ণণা দিয়েছি। অমায়িক বিনয়ী নম্র ভদ্র দেওয়ান নূরুল হোসেন এর পারিবারিক নাম চঞ্চল। তিনি আমাদের কাছে চঞ্চল ভাই হিসাবে পরিচিত ও জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁদের পারিবারিক পদবি দেওয়ান। তাঁকে কোনদিন চৌধুরী পদবি ধারন করতে দেখিনি। এটাও অসাবধানতা বসত হতে পারে। পান্ডুলিপি কিংবা প্রুফ দেখার সময় একটু সতকর্তা অবলম্বন করলে হয়ত এমন হত না। এতসব সামান্য ত্রুুটি অসম্পূর্ণতা উল্লেখ করলাম, দ্বিতীয় সংস্করন বের হলে কাজে লাগতে পারে বলে।
গ্রহ্ণে বাড়তি পাওনা ও সংযোজন তৃতীয় প্রচ্ছদে গ্রহ্ণকারের সচিত্র পরিচিতি এবং সাত খানা আলোক চিত্র। ব্যক্তিগত জীবনে গ্রহ্ণকার বিবাহিত, এক পুত্র, এক কন্যা সন্তানের জনক। সহধর্মিনী সু-কন্যা নাজমুন্নেছা খাতুন তাঁর সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনা হাসি কান্নার চীর সাথী হয়ে সহমর্মিতা দিয়ে দাম্পত্য জীবনকে সার্থক সুখময় প্রেমময় করে তুলেছেন। এই দম্পতির দুই সন্তান আব্দুল্লাহ আল মোইমিন এবং নাবিলা খাঁনম উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মানুষের মত মানুষ হয়েছেন।
গ্রহ্ণ খানির প্রকাশক পাপড়ি, ২০১ রংমহল টাওয়ার, বন্দর বাজার সিলেট। গ্রহ্ণ স্বত্ব মোহাইমিন ও নাবিলা। মুদ্রনে পাপড়ি পৃন্টার্স, রংহীন, সাদা মাটা, রুচীশীল সুন্দর প্রচ্ছদ শিল্পী কামরুল আলম পরিবেষক পাতা প্রকাশনী ঢাকা। অনলাইন পরিবেশক রকমারি ডট.কম। সুন্দর নামাকরনে বাছিত ইবনে হাবিব, মূল্য আড়াইশ টাকা। বোর্ড বাঁধাই আকর্ষনীয়। উৎসর্গ স্ত্রী পুত্র ও কন্যাকে যথাযথ ভাবেই। এই গ্রহ্ণের প্রকাশক গ্রহ্ণকার এর পরিবারবর্গকে ধন্যবাদ গ্রহ্ণকারের মৃত্যোর পরও সেপ্টেম্বর বিশ সালে গ্রহ্ণ প্রকাশ করে একটি প্রশংসনীয় শিক্ষনীয় কাজ সু-সমাপ্ত করেছেন, গ্রহ্ণকার নিজ চোখে দেখে না গেলেও তাঁর রুহ খুশী হবে-তৃপ্তি পাবে।
প্রয়াত গ্রহ্ণকার আব্দুল হান্নান সেলিম আমার সম-সাময়ীক। তিনি এম.সি.কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছেন।, মহসিন হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন-কাকতলীয় ভাবে আমিও তাই ছিলাম।
জীবনসায়াহ্ণে এই পড়ন্ত বেলায় তাঁর করনা আক্রান্তি, অসুস্থতা এবং মৃত্যো শোকে শোকাবি ভূত হয়েছি। তাঁর জীবনের শেষ সময়েও সেলিম ছিলেন আমার ও আমাদের অন্তরে। অনুভবে। বিগত দিনের লকডাউন, আমাদের বার্ধক্য জনিত ব্যাধিও দূর্বলতায় আমরা অনেকেই স্বেচ্ছা গৃহ বন্দী। গ্রহ্ণকার সেলিমের ভগ্নিপতি সৈয়দ ফারুক আহমদ তাঁর বিশাল বসত বাড়ির একাংশে স্থায়ী ইমাম নিয়োগ দিয়ে জামাতে নামাজের ব্যবস্থা করেছেন। সরকারি কলেজের অবসর প্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর সৈয়দ ফজলুল্লাহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার কফিল উদ্দিন, বিশিষ্টটি কনসালটেন্ট শহিদুর রাজা এবং এই অধম আমি, সৈয়দ ফারুক আহমদ এর বাল্য বন্ধু হিসাবে এখন মেহনতে ও ছুন্নতে সেই বাল্য কৈশরের ভালোবাসাও বন্ধুত্বকে আরো মজবুত করেছি। আমরা পাঁচ বন্ধু প্রায়ই সৈয়দ ফারুক আহমদ এর বাসায় জামাতে এশার নামাজ আদায় করি। ধর্মালোচনা হয়, বয়ান শুনি। এশার নামাজ শেষে আমাদের নৈশ ভোজ নিয়মিত। গ্রহ্ণকার আব্দুল হান্নান সেলিম এর ভগ্নি, বন্ধুবর সৈয়দ ফারুক আহমদ এর পত্নী এ ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। কাজেই অসুস্থ করনাক্রান্ত আব্দুল হান্নান সেলিম এবং তাঁর ইন্তিকালের পর মরহুম আব্দুল হান্নান সেলিম আমাদের অন্তরে অনুভবে ছিলেন-আছেন। তাঁকে আমরা ভূলিনি। ভূলব না।
গ্রহ্ণকার আব্দুল হান্নান সেলিমের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি, তাঁর পরিবার বর্গের জন্য গভীর সমবেদনা ও সহানুভূতি এবং এই গ্রহ্ণের বহুল প্রচার কামনা করি।
[ষাটের দশকের লেখক-সাংবাদিক। মুক্তিযোদ্ধা। আইনজীবী। সাবেক সভাপতি, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব।]

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com