কমলগঞ্জের কালীপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয় ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী পলির পড়ালেখার দায়িত্ব নিলেন ইউএনও

প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ॥ কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার কালীপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষার ফি দিতে না পেরে পলি মালাকার নামের ৮ম শ্রেণির ছাত্রীর কান্নার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর দরিদ্র ওই ছাত্রীর পড়ালেখার দায়িত্ব নিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাহমুদুল হক। পলি মুন্সীবাজার ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের গাড়িচালক নিতাই মালাকারের মেয়ে।
পলি মালাকার ৮ম শ্রেণির মডেল টেস্ট পরীক্ষার ফি পরিশোধ করতে না পেরে কান্নাকাটি করছে এমন একটি ভিডিও সোমবার ১ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়। ভিডিওটি দেখে মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় কমলগঞ্জের শিক্ষাবান্ধব ইউএনও মোহাম্মদ মাহমুদুল হক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামসুন্নাহার পারভীনকে সাথে নিয়ে সেই বিদ্যালয়ে ছুটে যান। বিষয়টির সার্বিক খোঁজ নিয়ে পলি মালাকারের ১০ শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়ের যাবতীয় বেতন-ফি পরিশোধ করেন তিনি এবং পড়ালেখার সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
জানা যায়,সোমবার ১ অক্টোবর কালীপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির মডেল টেস্ট পরীক্ষার নির্ধারিত ফি ও নিয়মিত বিদ্যালয়ের বেতন পরিশোধ না করা ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষা দিতে দেওয়া হবে না বলে ফি পরিশোধ করতে বলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বেতন দিতে না পেরে পরীক্ষা শুরুর আগে পলি মালাকার তার বাবার কাছ থেকে টাকা আনতে যায়। এসময় তারা বাবা টাকা দিতে পারবে না বলায় সে পরীক্ষা থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার ভয়ে কান্না করতে থাকে। এসময় মোবাইল ফোনে বিষয়টি ধারণ করে আব্দুল হাদি জুমন আহমদ নামের এক যুবক তা ফেসবুকে প্রচার করে। খবর পেয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামসুন্নাহার পারভীন, কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান, জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহের হোসেন জাকির ওই ছাত্রীর সার্বিক খোঁজ নেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সত্যেন্দ্র কুমার পাল জানান, আমরা সাধারণত পরীক্ষার আগে ছাত্র-ছাত্রীদের বেতন পরিশোধের জন্য নোটিশ দিয়ে থাকি। মেয়েটি কয়েক মাসের বেতন ও পরীক্ষার ফি দিতে পারেনি। বেতন দিতে না পারলে পরীক্ষা দিতে পারবে না এমন একটি গুজব শুনে সে পরীক্ষা শুরুর আগে বাবার কাছ থেকে বেতন আনতে যায়। এ সময় আব্দুল হাদি জুমন নামের এক যুবক তাকে থামিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করে ‘বেতন না দিলে স্যাররা পরীক্ষা দিতে দিচ্ছে না’ এমন স্বীকারোক্তি আদায় করে একটি ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করে। কিন্তু মেয়েটি তার পরে এসে পরীক্ষা দিয়েছে এবং নিয়মিত পরীক্ষা দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে আব্দুল হাদি জুমন বলেন, বিদ্যালয়ের সামনে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। সেখানে সোমবার কয়েক ছাত্রী গিয়ে আমাকে বলেছে তাদের বাড়িতে ফোন করতে হবে ফি না দিলে স্যার পরীক্ষা দিতে দেবে না। এসময় আমি তাদের কান্না ও কথা রেকর্ড করেছি। বিদ্যালয় নিশ্চয় বাচ্চাদের চাপ দিয়েছে নইলে তারা কাঁদবে কেন? এখন সব দোষ আমাকে দেওয়া হচ্ছে।
কালীপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জুনেল আহমদ তরফদার ও শিক্ষাদরদী সদস্য হামিদুল হক চৌধুরী (বাবর) জানান, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাপারে কোন কিছু সম্পূর্ণ না জেনে অথবা একপক্ষের বক্তব্য শুনে প্রকাশ করা সঠিক নয়। গত ১ অক্টোবর সোমবার এই বিদ্যালয়ের তিনজন ছাত্রীর পরীক্ষা দিতে না পারার যে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করে গুজব ছড়ানো হয়েছে তা মিথ্যা ভিত্তিহীন। মঙ্গলবার কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সাংবাদিকবৃন্দ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে অপপ্রচারের প্রমাণ মিলে এবং তিন ছাত্রীসহ সকল ছাত্রীদের কাছ থেকে বক্তব্য পাওয়া যায় কোন শিক্ষক বেতন না দিতে পারায় কাউকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেন নাই।
এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, ফি না দেয়ায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না এমন খবরটি মিথ্যা ছিলো। তবে পরীক্ষার ফি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সে ভয় পেয়েছিলো। পরে সে স্বাভাবিকভাবে পরীক্ষা দিয়েছে। তার পরিবারে অস্বচ্ছলতার কথা জেনে আমি তার বেতন ও ফি পরিশোধ করে দিয়েছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য একটি শিক্ষা তহবিল করেছি যার থেকে তার ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখার দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন