কমলগঞ্জের লাউয়াছড়ায় ২৫ হাজার গাছ কাটা নিয়ে পরিবেশবাদীরা ক্ষুদ্ধ গাছ কাটতে বন্যপ্রাণী বিভাগকে সম্পৃক্ত করেই কাজ করতে চায় রেলওয়ে

June 23, 2016,

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ নির্বিঘেœ ট্রেন চলাচলের জন্য ও দুর্ঘটনা এড়াতে কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকায় রেলপথের দু’পাশের ২৫ হাজার গাছ কাটার রেলওয়ের এই উদ্যোগে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের মারাত্মক হুমকিতে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছেন পরিবেশবাদীরা। বাংলাদেশ রেলওয়ে সর্বশেষ ১৮ মে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগকে লাউয়াছড়া উদ্যান এলাকায় গাছ কাটার জন্য সময় বেঁধে চিঠি দিলেও এখন বন্যপ্রাণী বিভাগকে সম্পৃক্ত করেই গাছ কাটতে চায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের রেললাইনের দু’পাশের গাছ কাটতে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। এতে উদ্যানের ২৫ হাজারের বেশি গাছ কাটা পড়ার সংবাদে পরিবেশবাদী ও সচেতন নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে মানুষ। গত রোববার সিলেটে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), ভূমি সন্তান বাংলাদেশ ও গ্রীন এক্সপ্লোর সোসাইটির পক্ষ থেকে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে রেল ও সড়কপথ বনের বাইরে নেয়ার দাবি জানানো হয়। পরিবেশবাদীদের মতে, জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ অঞ্চল সমূহের মধ্যে যে সকল অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বন্যপ্রাণী বেঁচে আছে তাদের অন্যতম স্থান হচ্ছে লাউয়াছড়া উদ্যান। এই উদ্যানের নির্ঝন পরিবেশে লতাপাতা, ঝোপজঙ্গল, ফলজ, বনজ, ঔষধি ও অজস্র ছোট ছোট গাছের অকাল মৃত্যুর মধ্যদিয়ে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট বিভাগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, লাউয়াছড়া প্রাণবৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ একটি বন । যেখানে বন সুরক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে যুগোপযোগী উদ্যোগ গ্রহন করা জরুরী ছিল সেখানে বাংলাদেশ রেলওয়ে গাছ কাটতে নজিরবিহীন আবেদন জমা দিয়েছে । যা এই বনকে সম্পূর্ণরুপে বিরান করে দেবে । প্রাণবৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ লাউয়াছড়া বনে বাংলাদেশ রেলওয়ে গাছ কাটতে নজিরবিহীন আবেদন জমা দিয়েছে। যা এই বনকে সম্পূর্ণরূপে বিরান করে দেবে। তিনি বলেন, বন সংরক্ষনে বন বিভাগের উচিত বাংলাদেশ রেলওয়েকে চিঠি দিয়ে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত রেললাইন স্থানান্তর করার নোটিশ দেয়া। বনের বাইরে দিয়ে বিকল্প রেলপথ তৈরি করার মাধ্যমে রেল চলাচলে উদ্ভূত বিপত্তি দূর করা সম্ভব। একই সাথে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়ক অবিলম্বে বন্ধ করে বিকল্প সড়ক নির্মাণ করারও দাবি জানান তিনি।
পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল মোহামিন মিল্টন প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, গাছচুরদের কারণে এমনিতেই লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বিরানভূমিতে পরিণত হচ্ছে। তার উপর রেল ও সড়কপথ, বৈদ্যুতিক লাইন এসব কারণে বণ্যপ্রাণী মরা যাচ্ছে। সম্প্রতি সময়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ লাউয়াছড়ায় ২৫ হাজার গাছ কাটার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা বন ধ্বংস ও বনের মধ্যে বসবাসরত সকল প্রকার বণ্যপ্রাণী মারাতœক হুমকির মধ্যে ফেলবে। কমলগঞ্জ উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি এম, এ, ওয়াহিদ রুলু বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে নির্বিঘেœ ট্রেন চলাচলের জন্য ও দুর্ঘটনা এড়ানোর অজুহাতে বন ধ্বংসকারী চক্রান্ত শুরু করেছে । যা এ বনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করবে। ক্ষতিগ্রস্থ করবে জীব-বৈচিত্র্য। লাউয়াছড়া বিপন্ন করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ গাছ কাটলে প্রয়োজনে পরিবেশবাদী সহ সচেতন কমলগঞ্জবাসীকে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সামাজিক বনায়নের আওতায় ইতিপূবে সিলেট-আখাউড়া রেলপথের দু’পাশে বিভিন্ন স্থানে গাছ লাগানো হয়। ঝড়-বাদলের সময় গাছ ও ডাল ভেঙ্গে রেলপথের উপর পড়ে ট্রেন চলাচলে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। ফলে রেলপথের দু’পাশের গাছ কেটে ফেলার উদ্যোগ গ্রহণ করে বনবিভাগ, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে অবহিত করে রেলওয়ে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল থাকায় গাছ কাটার বিষয়টি ষ্পর্স্পকাতর হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ আরমান হোসেন বলেন, লাউয়াছড়ায় গাছ কাটার বিষয়ে এখনও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নিরাপদ দূরত্বে ঝুঁকিপূর্ণ গাছ কাটতে বণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগকে বলা হলেও বন্যপ্রাণী বিভাগ এককভাবে সার্ভে করে ২৫ হাজার গাছের কথা বলছেন। তিনি বলেন, বৃষ্টি-বাদল হলে গাছ রেলপথে পড়ে দুর্ঘটনা কবলিত হবে। এজন্য রেলপথের দু’পাশে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে প্রয়োজনীয় ঝোপ-জঙ্গল কাটার জন্য বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগকে সম্পৃক্ত করেই যৌথ উদ্যোগে কাজ করবে। এজন্য কোন জোর জবরদস্তি করা হবে না।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সিলেট বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মিহির কুমার দেব বলেন, রেলওয়ে যেভাবে ৫০ ফুটের কথা বলেছে সেই হিসাবে ২৫ হাজার গাছের হিসাব এসেছে। যৌথ উদ্যোগেও গাছ কাটতে হলে উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিসহ বিধি মোতাবেক সবকিছু করা হবে। তিনি বলেন, রেলপথ জাতীয় উদ্যানের বাইরে নেয়ার বিষয়ে তিনি দাবি জানাচ্ছেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com