কমলগঞ্জে সরকারী কালভার্ট ভেঙে দিলো চা বাগান কর্তৃপক্ষ ॥ বিপাকে খাসিয়া আদিবাসীরা

May 15, 2017,

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী পাত্রখোলা চা বাগান সংলগ্ন খাসিয়া পান পুঞ্জির একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম  সরকারী অর্থায়নে নির্মিত কালভার্ট সেতু ভেঙে দিয়েছে স্থানীয় শ্রী গোবিন্দপুর চা বাগান কর্তৃপক্ষ।
১৪মে রোববার সকাল ১০টায় এই অমানবিক ঘটনাটি ঘটে।
জানা যায়, মাধবপুর ইউনিয়নের শ্রীগোবিন্দপুর চা বাগানের ভিতর দিয়ে পাত্রখোলা খাসিয়া পুঞ্জিসহ বনাঞ্চলে যাতায়াতের একমাত্র কাঁচা রাস্তার পাশে ছড়ার উপর গত বছর নির্মিত ১০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ও ৫ ফুট প্রস্থের কালাভার্টি সেতুটি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়। এ সেতু ব্যবহার করে পাত্রখোলা খাসিয়া পুঞ্জির ৪২টি পরিবার সদস্যসহ অসংখ্য লেবু ব্যবসায়ী জিপ গাড়ি নিয়ে চলাচল করতেন। খাসিয়া পুঞ্জির  সদস্যদের সুবিধার্থে গত বছর কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে প্রায় দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে কালভার্ট সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। পাত্রখোলা খাসিয়া পুঞ্জির হেডম্যান ভয়ে মুখ খুলে কোন কথা বলতে না চাইলেও নাম প্রকাশ না করে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চা বাগানের ভূমি শ্রীগোবিন্দপুর চা বাগান মালিক কর্তৃপক্ষের দাবি করে ও তাদের কোন অনুমতি না নিয়ে কেন সরকারী উদ্যোগে কাল ভার্ট সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ জন্য চা বাগানের ব্যবস্থাপকের নির্দেশে চা শ্রমিক মোহাম্মদ আলী, আবুল মিয়া, বীর সিংহ ও মাঈন উদ্দীনের নেতৃত্বে একদল লোক রোববার সকালে শাবল, খুন্তি দিয়ে কালভার্ট সেতুটি ভেঙ্গে দেয়।
এ ঘটনার পর থেকে পাত্রখোলা খাসিয়া পুঞ্জির ৪২টি পরিবার উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সাথে সাথে প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ বার যাতায়াতকারী লেবু পরিবহনের জিপ গাড়ির চলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পাত্রখোলা খাসিয়া পুঞ্জির খাসিয়া সদস্য ও লেবু ব্যবসায়ীরা।
এলজিইডি’র কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী কিরন চন্দ্র দেবনাথ এ প্রতিনিধিকে বলেন, ২০১৫-২০১৬ অর্থ  বছরে উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্তে পাত্রখোলা খাসিয়া পুঞ্জির সড়রের প্যাচা ছড়ার উপর ছোট কালভার্ট সেতু নির্মিত হয়েছিল। সেতু ভেঙ্গে ফেলার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা এলজিইইড প্রকৌশলী আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে গতকাল সোমবার সরেজমিন তদন্তের জন্য একজন উপ সহকারী প্রকৌশলীকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, চা বাগানের সকল জমির মূলত মালিক সরকার। চা বাগান মালিক বন্দোবস্ত নিয়ে সেখানে চা বাগান করেছেন। জনসাধারনের চলাচলের সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় স্থানে সরকারী অর্থায়নে সেতু বা কালভার্ট সেতু নির্মিত হবে। চা বাগান কর্তৃপক্ষ যে কাজটি করেছে তা সম্পূর্ণরুপে বেআইনী কাজ করেছে। এ নিয়ে তদন্ত হবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, চা বাগান কর্তৃপক্ষ এখানে পেশী শক্তি প্রদর্শন করেছে। তদন্তক্রমে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ ব্যাপারে শ্রীগোবিন্দপুর চা বাগান ব্যবস্থাপক প্রশান্ত রায় সাংবাদিকদের বলেন, রাস্তটি সম্পূর্ণরুপে চা বাগানের নিজস্ব জমির উপর। এখানে কালভার্ট সেতু নির্মাণের আগে সরকারী কোন মহল অনুমতি নেয়নি বলে চা বাগান মালিকের নির্দেশে সেতুটি ভাঙ্গা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com