কমলগঞ্জ কলেজের পরীক্ষা কক্ষে বখাটেদের হামলায় একাদশ শ্রেণির ছাত্র গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ গণ-মহাবিদ্যালয়ে কলেজের ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা কক্ষে শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে কিছু সংখ্যক ছাত্র হাল্লা চিৎকার করছিল। পরবর্তীতে শিক্ষকের কাছে হাল্লা চিৎকার কারীর নাম প্রকাশ করায় বখাটে সহযোগীদের নিয়ে পরীক্ষা কক্ষে একাদশ শ্রেণির মাসুম মিয়া নামের এক ছাত্রকে বেদড়ক মারপিট করে গুরুতর আহত করেছিল হাল্লা চিৎকারকারী ছাত্ররা।
রোববার সকালে এ ঘটনাটি ঘটেছিল। ঘটনার পর আহত ছাত্রের পক্ষে কমলগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে ও শনিবার ২০ মে সকালে থানায় ছাত্রের বোন সাধারন ডায়েরী করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ কোনটিই গ্রহন করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার ছয় দিন পরও কলেজ কর্তৃপক্ষ ও থানা কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় উল্টো বখাটেদের হুমকিতে আতঙ্কিত এখন নির্যাতিত পরিবার।
কমলগঞ্জ গণ-মহাবিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৪ মে রোববার একাদশ শ্রেণির ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষার যুক্তিবিদ্যা বিষয়ে পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা চলাকালে কক্ষের দায়িত্ব প্রাপ্ত শিক্ষক কিছুক্ষণের জন্য বাইরে গেলে কক্ষের ভিতর হাল্লা চিৎকার শুরু হয়। এ ঘটনায় একজন শিক্ষক দ্রুত এ কক্ষে ফিরে এসে হাল্লা চিৎকারকারীর নাম জানতে চান। এসময় একাদশ শ্রেণির ছাত্র মাসুম মিয়া ছাত্রদের নাম প্রকাশ করে। হাল্লা চিৎকারকারী ছাত্রদের নাম প্রকাশ করায় একই শ্রেণির ছাত্র কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের কুমড়াকাপন গ্রামের হুসন মিয়ার ছেলে স্বপন মিয়া মাসুম মিয়াকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে ১০ মিনিট পর বহিরাগত আরও কয়েকজন সহযোগী বখাটেদের ডেকে এনে পরীক্ষা কক্ষেই মাসুম মিয়াকে বেদড়কভাবে পিটায়। ঘটনার খবর পেয়ে কলেজ অধ্যক্ষ আহত মাসুমকে উদ্ধার করে প্রথমে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। তার অবস্থা গুরুতর হলে দ্রুত সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। আহত ছাত্রের মা তাজ নাহার জানান বেদড়ক পিটানোয় মাসুমের দুই চোখসহ সারা দেহে আঘাত রয়েছে। এর মাঝে তার চোখের অবস্থা গুরুতর।
ঘটনার পর দিন আহত ছাত্র মাসুমের পরিবারের পক্ষে কমলগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছিল। এ অভিযোগর পর এখন পর্যন্ত শনিবার- ২০ মে বিকাল তিনটা পর্যন্ত) কমলগঞ্জ থানা কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি বলে আহত ছাত্রের ভঅই শব্দর মিয়া জানান। অন্যদিকে কলেজ কর্তৃপক্ষও কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় মারপিটকারী প্রধান অভিযুক্ত ছাত্র স্বপন একই কলেজে ডিগ্রী ৩য় বর্ষে অধ্যয়নরতা নাজনিন বেগম( আহত ছাত্রের বোন)কে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। এ ঘটনার পর গতকাল শনিবার নাজনিন বেগম কমলগঞ্জ থানায় গিয়ে একটি সাধারন ডায়েরী করতে চাইলে থানা কর্তৃপক্ষ তাও গ্রহন করেনি।
আহত ছাত্রের বোন কলেজ ছাত্রী নাজনিন, ভাই শব্দর আলী ও মা তাজ নেহার শনিবার দুপুরে মুঠোফোনে এ প্রতিনিধিকে বলেন, রহস্যজনক কারণে কমলগঞ্জ থানা গত ছয় দিনেও অভিযোগ গ্রহন করেনি। এমনকি গতকাল শনিবার সাধারন ডায়েরীও গ্রহন করেনি। তারা সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের কানাইদাশী গ্রামের দরিদ্র পরিবারের বলে বিচার পাচ্ছেন না। উল্টো নতুন করে বখাটেদের হুমকির মুখে পড়েছেন।
কমলগঞ্জ গণ-মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো: কামরুজ্জামান মিঞা গত ১৪ মে কলেজ পরীক্ষা কক্ষে এ হামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কলেজ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তিনি আরও বলেন, থানা কেন সাধারন ডায়েরী নিচ্ছে না তা তিনি বুঝতে পারছেন না।
কমলগঞ্জ থানার ওসি বদরুল হাসান অভিযোগ গ্রহনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি তদন্তক্রমে একটি নিয়মিত মামলা হিসাবে গ্রহন করা হবে।
মন্তব্য করুন