কমলগঞ্জে জবর দখলকৃত জমি উদ্ধারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ : কমলগঞ্জে জবর দখলকৃত জমি উদ্ধারের দাবিতে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন কমলগঞ্জ পৌরসভার নছরতপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মওদুদ আহমেদ চৌধুরীর ছেলে ব্যবসায়ী মো: মাহমুদুল হাসান চৌধুরী পলাশ।
বুধবার, ২৮ আগস্ট দুপুর ১২টায় উপজেলার কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে দখলকৃত জমি উদ্ধারের দাবিতে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন সাংবাদিকদের কাছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ব্যবসায়ী মো: মাহমুদুল হাসান চৌধুরী পলাশ বলেন, কমলগঞ্জ উপজেলার কলেজ রোডস্থ নছরতপুর গ্রামে শাহ মঞ্জিল নামের বাড়িটি বিগত ২০০০ সালে ৪৪৪৮ নাম্বার দলিলে আমার নানা মোতাহির আলী চৌধুরী আমার আম্মাকে হেবা দলিলে দানপত্র করে দিয়েছেন। একই উপজেলার বড়গাছ গ্রামের বাসিন্দা আমার মেজো খালা জুমারা ইসলাম শিরিন (৫০) স্থানীয় লোকজনদের নিয়ে গত ২০১৫ সালের ৭ জুলাই জমি নিজ দখলে নেয়। তিনি আরো বলেন, ২০০৭ সালের ২৩ আগস্ট আমার মা শামীমা আক্তার চৌধুরী ইন্তেকাল করেন। রাতেই মায়ের লাশ নিয়ে কলেজ রোডে অবস্থিত নানার বাড়িতে দাফনের উদ্দেশ্যে আসি। তখন আমার খালা সেলিনা আক্তার (৩৫) লাশ দাফনে বাধা দেন। অবশেষে সকাল বেলা ঘরের সামনের অংশে প্রশাসনের সহযোগিতায় লাশ দাফন করা হয়। রমজান মাসে মায়ের চেহলাম অনুষ্টান করতে গেলে তখন খালা জুমারা ইসলাম শিরিন, সেলিনা আক্তার, আব্দুল হক ও সুমন মিয়া গংরা হঠাৎ করেই প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। প্রতিবেশী এবং পুলিশ এসে উদ্ধার করেন। এঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে কমলগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি ২০০৭ সালে। এছাড়া বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে আমি কমলগঞ্জে গেলে আমার উপর হামলা চালানো হয়। এরপর থানায় সাধারণ ডায়েরি এবং অভিযোগ দায়ের করি।
তিনি বলেন, ২০১৫ সালের ৭ জুলাই আমি এবং আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে কমলগঞ্জের বাসায় থাকার জন্য আসি। তখন আমার ও আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর উপর নানারকম সন্ত্রাসী আক্রমণ করা হয়। তখন পুলিশের সহযোগিতা চাইলে তৎকালীন কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) বদরুল হাসানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ বাসায় এসে আমাকে জোরপূর্বক দুইটি রুমের মধ্যে থাকার জন্য বলেন এবং বিষয়টা মিমাংসা করার আশ্বাস দেন। কিন্তু সেদিন রাতেই উল্লেখিত আসামীরা জোরপূর্বক অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাসার অন্য ৩টি রুম দখল করে নেয়। আমার উপর হামলার বিচার দাবি করে বিভিন্ন স্থানে বিচার প্রার্থনা করি। কিন্তু কোথাও কাঙ্খিত মীমাংসা করা সম্ভব হয়নি তাদের অশুভ শক্তির কারণে। আমার স্ত্রী অন্তঃসত্তা থাকা অবস্থার মধ্যেও আমার বাসার বিদ্যুৎ গ্যাস এবং পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়। আমার ছেলে জন্মগ্রহণ করে। তাকে নিয়ে দীর্ঘ ৯ মাস বিভিন্ন হামলা মামলার শিকার হয়ে ও বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানিবিহীন এক অমানবিক জীবন যাপন করি। তারা আমার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে জিআর ৩/১৬ বিভিন্ন ফৌজদারি মামলা করেন। ঢাকায় থেকে ব্যবসা বাণিজ্য করেছিলাম সবকিছুই হামলা মামলার বিচার সালিশের এবং আদালতে দৌড়াতে দৌড়াতে দেউলিয়া হয়ে যাই। তখন পুনরায় শূন্য হাতে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে ঢাকা চলে আসি।
এদিকে ২০১৯ সালেও তারা আমার বাসায় ব্যাপক হামলা ভাঙচুর লুটপাট করে। তখন বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ পুলিশের সদর দপ্তরে গিয়ে অভিযোগ জানালে পুলিশের একজন উপ মহাপরিদর্শক কমলগঞ্জ থানাকে নির্দেশ দিলে তাৎক্ষণিক তৎকালীন এসপি সার্কেল আশফাকুজ্জামান এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুল হক আদালতের রায় হওয়ার আগ পর্যন্ত হামলা ভাংচুর না করার নির্দেশ প্রদান করে। বর্তমানে বাসায় পাঁচটি রুমের মধ্যে দুইটি রুমে আমার ভাড়াটিয়া রয়েছে। এরই মধ্যে ৫ই আগস্ট আমাকে প্রকাশ্যে ফেসবুকে প্রাননাশের হুমকি দিয়ে ৬ আগস্ট অস্থির পরিস্থিতিতে আমার বসতবাড়ীতে গিয়ে আমার খালাসহ ৪০-৫০ জন সন্ত্রাসী বাহিনী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমার ভাড়াটিয়াকে বাসা ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়ে আমার বাড়ি ঘরের উপর হামলা ও ভাঙচুর এবং লুটপাট করে নিয়ে যায়। ৭ই আগস্ট কমলগঞ্জ থানার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিকট সাহায্য চাইলে শ্রীমঙ্গল ক্যাম্প থেকে দুই গাড়ি সেনাবাহিনীর সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে সুমন মিয়াকে আটক করে।
এ বিষয়ে বুধবার, ২৮ আগস্ট কমলগঞ্জ থানায় লিখিত আভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানান মো: মাহমুদুল হাসান চৌধুরী পলাশ।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত জুমারা ইসলাম শিরিন বলেন, আমার উপর আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এটা আমার ক্রয়কৃত জায়গা। আমার কাগজপত্র আছে।
মন্তব্য করুন