কুলাউড়ায় অফিস করছেন না হাজীপুর ইউপি চেয়ারম্যান, সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন জনগণ

মাহফুজ শাকিল : প্রায় তিন সপ্তাহ সময় ধরে ইউনিয়ন পরিষদে যাচ্ছেন না কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রভাবশালী চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্স। তিনি অফিসে না আসায় এলাকার সাধারণ লোকজন মনে করছেন তিনি এলাকা ছেড়ে লাপাত্তা রয়েছেন। আত্মগোপনে থাকায় অফিস না করায় নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ইউনিয়নের সাধারণ জনগণ। এদিকে চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা চেয়ারম্যানের কার্যালয় তালাবদ্ধ করে দেয়। এরআগে চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্সের পদত্যাগ দাবিতে গত ১৮ আগস্ট রবিবার দুপুর একটায় স্থানীয় কটারকোনা বাজারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা ও সর্বস্তরের জনগণ। এসময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বলেন, চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্স কর্তৃক সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ বন্ধ করতে হবে, চেয়ারম্যান কর্তৃক জন্ম নিবন্ধনসহ বিভিন্ন সনদে অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধ করতে হবে, বিচারের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে, নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা বন্ধ করতে হবে। তারা আরো বলেন, হাজীপুর ইউনিয়নে বিভিন্ন সনদে স্বাক্ষর নিতে চেয়ারম্যানকে ৫০০-১০০০ টাকা দিতে হয়। ৫০০ টাকার ট্রেড লাইসেন্সের জন্য ৫-১০ হাজার টাকা দিতে হয়। তিনি বিভিন্ন সময়ে মিথ্যা মামলায় অনেককে জেল খাটিয়েছেন। এসময় চেয়ারম্যানের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট, সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, অসদাচরণের বিরুদ্ধে তাঁর অপসারণ দাবি করে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ও শতাধিক মানুষ গণস্বাক্ষর নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি স্মারকলিপি প্রেরণ করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র তারেক আহমদ, নাজমুল ইসলাম, জয়নুল ইসলাম, রাহিন রহমান, রায়হান আহমদ, ফাহমিদা ইয়াছমিন, সুলেমান আহমদ, তানজিদ আহমদ, জালালুর রহমান, জীবন দাস, রোহান আহমদ প্রমুখ। এলাকাবাসীর পক্ষে বক্তব্য দেন ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান রুমেন, কটারকোনা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ইয়াকুব আলী, বিএনপি নেতা মফজ্জিল হোসেন, সমাজসেবক হারুনুর রশীদ, বীরজিৎ দেবনাথ প্রমুখ।
এদিকে ২০ আগস্ট মঙ্গলবার চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। তারা সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়ে গত ২১ আগস্ট বুধবার ইউপি অফিস ঘেরাও করে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালা মেরে দেয়। চলমান পরিস্থিতিতে সরকার পতনের পর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামলীগ পন্থী চেয়ারম্যানরা আত্মগোপনে কিছুদিন থাকার পর তারা অনেকেই এখন অফিস করছেন। কিন্তু সেই দিক থেকে ভিন্ন হলেন হাজীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ বক্স। তিনি নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে পরিষদে আসছেন না। এতে তাঁর প্রতি সাধারণ জনগণের ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ বক্স গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়ে এলাকায় নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেন। এতদিন তার ভয়ে সাধারণ জনগণ মুখ না খুললেও সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর থেকে চেয়ারম্যান আত্মগোপনে চলে যান।
সরেজমিন হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদে গেলে দেখা যায় চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্স কার্যালয়ে নেই। তাঁর কক্ষ তালাবদ্ধ। শুধু সচিব অফিস করছেন। চেয়ারম্যান না থাকায় তাঁর কার্যালয়ের সামনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে সেবাগ্রহিতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নাগরিক সনদ নিতে আসেন ইউনিয়নের বাসিন্দা ফুল মিয়া, মোঃ এরশাদ আলী, সুরমান আহমদ, মোশাহিদ আলী, ইয়াছমিন আক্তার সুমাইয়া, জাবেদ মিয়া সাহেনা আক্তার। তারা সবাই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিজের বিভিন্ন অপকর্ম ঢাকতে আওয়ামীলীগের লেবাসধারী চেয়ারম্যান অফিসে না এসে গা ঢাকা দিয়েছেন। বিভিন্ন সনদে স্বাক্ষর নিতে চেয়ারম্যানের কার্যালয়, বাড়ি কিংবা মোবাইল ফোনে খোঁজ করে পাওয়া যাচ্ছে না। দায়িত্ব পালনে ভয় পেলে চেয়ারম্যানের পদ থেকে তাকে ইস্তফা দেওয়া হোক।
হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, গত ৫ আগস্টের পর চেয়ারম্যান একদিনও অফিস করেননি। চেয়ারম্যানের কক্ষ তালা মেরেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। চেয়ারম্যান সাহেব কেন অফিসে আসতেছেন না সেটি তিনি ভালো বলতে পারবেন। সেবা নিতে আসা বেশ কয়েকজন নাগরিকদের আবেদন আমি জমা রাখছি। সার্বিক বিষয়টি ইউএনও মহোদয়কে অবগত করেছি।
হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্সের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন কেটে দেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মহি উদ্দিন বলেন, হাজীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চেয়ে শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপি দিলে বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করি। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখা থেকে একটি পরিপত্র জারি করা হয়। পরিপত্রে বলা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে যেসকল ইউনিয়নে চেয়ারম্যানরা অনুপস্থিত রয়েছেন তাদের পরিবর্তে জনসেবা অব্যাহত রাখার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ নীতিমালা অনুযায়ী পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানগণকে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করা হলো। এছাড়া এই নির্দেশনা অনুসরণ করতে সবাইকে বলা হয়েছে।
মন্তব্য করুন