কুলাউড়ায় মসজিদ ও মাদ্রাসার ওয়াকফ সম্পত্তি দখলের পায়তারা, গ্রামবাসীর বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

June 29, 2024,

কুলাউড়া প্রতিনিধি॥ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের মনসুর গ্রামে মসজিদ ও মাদরাসার নামে ওয়াকফকৃত প্রায় ৩ একর ৭৭ শতাংশ সম্পত্তি হঠাৎ ৭৮ বছর পর অবৈধ দখলের চেষ্টার প্রতিবাদে গ্রামবাসী বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে ।

২৮ জুন শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর শত শত মুসল্লিরা মনসুর মোহাম্মদিয়া সিনিয়র মাদরাসার সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কমসূচী পালন করে । এসময় গ্রামের সাধারণ মানুষ ও মসজিদের মুসল্লীরা মানববন্ধনে অংশ নেয়।

মাদরাসার গভর্নিং বডির সদস্য ও মসজিদ কমিটির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমানের পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মাদরাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি ও ইউপি সদস্য মো: সাতির মিয়া, মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম জহির, সহ-সভাপতি হারুন মিয়া, মাদরাসার গভর্নিং বডির সদস্য আব্দুল মোহিত বাবলু সহগণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি সাতির মিয়া অবৈধ দখলের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ভুমি দস্যু আকদ্দছ আলীর মূলবাড়ী জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের বটুলি গ্রামে। সে আমাদের মসজিদ ও মাদরাসার নামে ওয়াকফকৃত  প্রায় ৩ একর ৭৭ শতাংশ সম্পত্তি অবৈধ দখলের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে । ১৯৪৬ সালে কটু মিয়া, মজর উদ্দিন, আবেজা বিবি এই তিন জন তাদের ইহকালীন ও পরকালীন কল্যান মুক্তির জন্য দলিলমুলে ওয়াকফে লিল্লাহ করে যান।

দলিলে উল্লেখ করা হয়, এই দলিল পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংশোধন ও সংযোজন করা যাবে না। এই সম্পতির মালিকানা কখনো কেউ দাবী করতে পারবে না। অথচ আজ ভুমি দস্যু আকদ্দছ আলী এই সম্পত্তি তার মৌরশী স্বত্ব দাবী করছে । তিনি আরও বলেন- সে আমাদের এলাকার শান্তি শৃংঙ্খলা বিনষ্ট করে যাচ্ছে। এলাকার শান্তিপ্রিয় লোকদের ভয়ভীতি ও মামলার ভয় দেখাচ্ছে। এটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকার লোকজনদের ভয়ভীতি দেখায়। এই ব্যাপারে সংসদ সদস্য কে আমরা তার বিষয় অবগত করেছি ।

মসজিদ কমিটির সহ- সভাপতি হারুন মিয়া তাঁর বক্তব্যে বলেন, গত ২৪ এপ্রিল   আখদ্দছ আলী ওয়াকফকৃত সম্পত্তির মোতওয়াল্লী দাবী করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং ৮৪/২০২৪ ।  সেই মামলায় সে নিজেকে মিথ্যা মোতাওয়াল্লী দাবি করেছে। এখন আবার সে মৌরশী স্বত্ব দাবী করছেন কিভাবে।

মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম জহির বলেন, মসজিদ/মাদরাসার কমিটির লোকেরা সহকারী পুলিশ সুপার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে মুছলেকা দিয়েছে এমন মিথ্যা গুজব এলাকায় ছড়িয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। সে সরকারের বিরুদ্ধেও অপ্রচার চালিয়ে বলছে, ওয়াকফকৃত তৎকালীন আমাদের মক্তব সরকার নাকি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মক্তব বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ কোন সরকার আজ পযর্ন্ত কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে নি। ওয়াকফকৃত সেই মক্তব আজ সরকারী মাদরাসায় রূপান্তরিত হয়েছে। সেই মাদরাসা গভর্নিং বডি দ্বারা পরিচালিত, বডির সভাপতি এডিসি (অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক) ।

এছাড়াও বক্তারা বলেন, ভুমিদস্যূ আখদ্দছ আলী বিভিন্ন বক্তব্যে নিজে স্বীকার করেছে তার বাবার বাড়ী জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নে । এবং তার মায়ের বাড়ী মসজিদ মাদরাসা ভূমি থেকে ১ কিমি দক্ষিন পূর্বে । অথচ সে যে ওয়াকফকৃত বাড়ীতে অবস্থান করছে। যা মসজিদ মাদরাসা ভুমি থেকে অনুমান মাত্র ৫শ গজ পশ্চিম উত্তরে অবস্থিত । সেখানে সে হাইকোর্টের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ওয়াকফকৃত সম্পত্তিতে নতুন বাড়ী ও সীমানা প্রাচীর নির্মান করে জবরদখলর করে আছে । ওয়াকফকৃত বাড়ী সহ প্রায় ৩ একর ৭৭ শতাংশ সম্পত্তি উদ্ধাের স্থানীয় প্রশাসন সহ সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার ২৭ জুন কুলাউড়ার পশ্চিম মনসুরস্থ নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে আখদ্দছ আলী বলেন, কুলাউড়ার মনসুর নিজ মৌজায় বিভিন্ন দাগে ৪২৩ শতক ভূমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ চলছে। বিরোধপূর্ণ ওই ভূমির মধ্যে আমাদের দখলে ৭০ শতক রয়েছে। সেই ৭০ শতক ভূমিতে আমরা বসবাস করছি। প্রায় ৪০ বছর ধরে ওই ভূমি নিয়ে আইনি লড়াই করে যাচ্ছি । আমরা কোনো সংঘাত চাই না, সামাজিকভাবে সুশীল সমাজ,  জনপ্রতিনিধি, গণমান্যব্যক্তি- বর্গের উপস্থিতিতে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিষয়টির সুন্দর সমাধান চাই। সঠিক কাগজাদির ভিত্তিতে আমরা যদি ভূমির মালিক হই তাহলে আমরা মালিক। কাগজাদি সঠিক না হলে আমরা ভূমির মালিক হিসেবে দাবি করবো না।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com