কুলাউড়ায় সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ গাছ, ঘটছে দুর্ঘটনা, প্রতিবাদে মানববন্ধন
মাহফুজ শাকিল॥ কুলাউড়া উপজেলায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার গাছ। আবার এই সড়কে গাছের পাশে রয়েছে ১১ কেভি বিদ্যুতের লাইন। তারমধ্যে অনেক গাছ পরিপক্ক ও গাছের ডালপালা শুকিয়ে গেছে। এ অবস্থায় ওই সড়কের ওপর গাছগুলো বিপদজনকভাবে ঝুঁকে রয়েছে। সম্প্রতি ঝড়ে গাছ ভেঙ্গে পরে আব্দুল মতিন নামের এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
সোমবার ১০ জুন বিকেল পাঁচটায় ব্রাহ্মণবাজার পূবালী ব্যাংকের সামনে সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে কুলাউড়া-মৌলভীবাজার সড়ক ও ব্রাহ্মণবাজার-ভাটেরা সড়কের দুই পাশে মরা ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণ ও ডালপালা ছাটাইয়ের দাবীতে বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে ক্রীড়া সংগঠক মাসুদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও মোজাম্মেল হক অপুর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন নজরুল ইসলাম কদর, সাংবাদিক জসিম চৌধুরী, মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন, নাহিদ হোসেন, ইন্দ্রজিৎ ভট্টাচার্য, ইশতিয়াক হোসেন তানভীর, মিজাজুর রহমান পারভেজ, ফয়জুল ইসলাম ছোটই, আব্দুল মুক্তাদির মনা, আবুল কাশেম উসমানী, রাসেল আহমদ, মাসুদ হোসেন প্রমুখ। মানববন্ধনে ইউনিয়নের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার প্রায় দুই শতাধিক লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, গত ২ জুন সন্ধ্যায় উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের মিশন নামক এলাকায় ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে আব্দুল মতিন (৩২) নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। নিহত মতিন ওই ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং ওই বাজারের ব্যবসায়ী ছিলেন। রবিবার সন্ধ্যার দিকে বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল যোগে নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সময় আকস্মিকভাবে ঝড় তুফান শুরু হলে মিশন এলাকায় তিনি পৌঁছামাত্র একটি গাছ তার মাথার উপর ভেঙে পড়ে। পরে দ্রুত স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মুসলিম এইড হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মতিনকে মৃত ঘোষণা করেন। এই মৃত্যুর ঘটনার পর ব্রাহ্মণবাজার ইউপিসহ উপজেলার সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে মৃত্যু আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। ভবিষ্যতে গাছ ভেঙে যেকোনো সময় আরো বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঝড়-তুফান এমনকি হালকা বাতাসে অনেক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে যানবাহনসহ সাধারণ মানুষদের। ঝড়-তুফানের কারণে সড়কগুলো দিন দিন ‘মহাবিপজ্জনক’ হয়ে উঠে যাত্রীদের কাছে রূপ নিচ্ছে চরম আতঙ্কে।
গত কয়েকদিনের ঝড়-তুফানে কুলাউড়া-মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাজার-ভাটেরা-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে প্রায় অর্ধ শতাধিক শতাধিক গাছ ভেঙ্গে পড়েছে। এতে দীর্ঘসময় যান চলাচল বন্ধ থাকে। এসময় অনেক গাছ বিদ্যুৎ লাইনের উপর ভেঙ্গে পড়লে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গিয়ে গাছগুলো সড়ক থেকে অপসারণ করলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনার কবল থেকে রক্ষার্থে সড়কটিকে নিরাপদ করে তোলার জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন যাত্রী সাধারণ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে বনবিভাগের বাস্তবায়নাধীন হাজার হাজার বনায়নের গাছ রয়েছে। আর এই সড়কে গাছের পাশে রয়েছে পিডিবির ১১ কেভি বিদ্যুতের লাইন। সড়কে শত শত গাছ ও ডালপালা প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কুলাউড়া- মৌলভীবাজার সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ছোট-বড় কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে। উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহরের অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, হাসপাতালে যাতায়াত করে থাকেন। এছাড়া ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাস কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, বিয়ানীবাজারে প্রতিনিয়ত চলাচল করে। অন্যদিকে এসকল উপজেলা থেকে মৌলভীবাজার ও সিলেটে প্রতিদিন বাস, মিনিবাসসহ অন্যান্য গাড়ি চলাচল করে। শুকিয়ে যাওয়া গাছ এবং পরিপক্ক ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণ না করায় মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিন দিন আতঙ্ক বাড়ছেই। সর্বশেষ গত ২ জুন ঝুঁকিপূর্ণ গাছ ভেঙ্গে পরে আব্দুল মতিনের মৃত্যু হয়। ফলে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে আরো বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশংকা করছেন পরিবহন চালক ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের বাসিন্দা জসিম চৌধুরী ও আবুল কাশেম উসমানী বলেন, কুলাউড়া-মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাজার-ভাটেরা সড়ক দিয়ে চলাচল করতে এখন অনেক ভয় লাগে। রাস্তার পাশে থাক ঝুঁকিপূর্ণ গাছ আমাদের জন্য আতঙ্কের। গাছ ও ডালপালার কারণে কখন যে নতুন করে দুর্ঘটনা ঘটে বলা যায় না। এই ঝুঁকিপূর্ণ গাছের কারণে আমাদের বাজারে তরুণ ব্যবসায়ী মতিনকে হারিয়েছি। আর যাতে কোন মৃত্যুর ঘটনা না ঘটে সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি যাতে খুব অচিরেই ঝুঁকিপূর্ণ গাছ যেন কাটা হয়।
এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচলকারী সিএনজি অটোরিকশাচালক মসুদ মিয়া, রাজু আহমদ, তায়েফ আহমদ, পাবেল আহমদ, রুকন আহমদ, রহমান মিয়া, পিকলু আহমদ, রুয়েল আহমদ, সজল দাস, ফারুক মিয়াসহ অন্তত অর্ধ শতাধিক চালক বলেন, পরিবারের জীবিকা নির্বাহের জন্য এই রাস্তা দিয়ে সবসময় গাড়ি চালাই। প্রতিদিন গাড়িতে গ্যাস নেয়ার জন্য ব্রাহ্মণবাজার সিএনজি পাম্পে যেতে হয়। গাড়ি নিয়ে গ্যাসের জন্য সড়কের পাশে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। এই সড়কের পাশে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ গাছ রয়েছে। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় আছি। ঝড়ের সময় কখন যে গাছ ভেঙ্গে আমাদের ওপর পড়ে সেই ভয়ে অস্থির থাকি।
মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কায়ছার হামিদ সোমবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বলেন, সড়কের পাশে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো চিহ্নিত করে কর্তনের জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারণ মানুষের জীবনটা সবার আগে দেখতে হবে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে আলোচনার মাধ্যমে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।
সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবির সোমবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বলেন, গাছ পরে ব্যবসায়ীর মৃত্যুর ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। ওই সড়কের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ গাছ কুলাউড়া রেঞ্জ কর্মকর্তার মাধ্যমে শনাক্ত করে তা অপসারণের ব্যবস্থা করবো। এছাড়া যে গাছের ডালপালা ছাটাইয়ের প্রয়োজন সেগুলো কর্তনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।
মন্তব্য করুন