কুলাউড়ায় জীবন সংগ্রামে হার না মানা একজন পবিত্র দাস (৬৫) এর বাস্তবতার গল্প

December 7, 2016,

কুলাউড়া অফিস॥ হালের বলদ নেই, হালের ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করবেন সেই সামর্থ্যও নেই। পরিবার পরিজনের মুখে দু’বেলার অন্নের সংস্থান করতেই হবে। তাইতো বাতিজার সহযোগিতা নিয়ে নিজেই হালের বলদ হয়ে নেমে গেলেন জমি চাষে। তাতে যদি দুমুটো অন্নের সংস্থান হয় নিজের এবং পরিবারের মুখে ফুঁটবে তৃপ্তির হাসি। হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিইল ইউনিয়নে জীবন সংগ্রামে হার না মানা একজন পবিত্র দাস (৬৫) এর বাস্তবতার গল্প।
এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি তীরের বোরো ধানের বীজতলা প্রস্তুতের সরেজমিন চিত্র দেখতে গিয়ে চোখে পড়ে পবিত্র দাসের হালচাষের এই দৃশ্য। পবিত্র দাসের বাড়ি হাওর তীরের ভুকশিমইল ইউনিয়নের বড়দল গ্রামে। হালের লাঙল টানতে টানতে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন পবিত্র দাস। তার এ দীর্ঘশ্বাসে মিশে ছিলো অনেক কষ্টের লুকানো ব্যথা। কিন্তু সেই রাশ টেনে মুখে মুচকি হেসে লাঙল শক্ত হাতে ধরা ছেলেটা তার ভাতিজা বলে জানান। ওর নাম শান্ত কুমার দাস (১১)। কানেহাত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা শেষ করেছে। এই সুযোগে কাকার সাথে সাহায্য করতে নির্ধিদায় মাঠে নেমেছে শান্ত কুমার দাস। হাকালুকি হাওর তীরের ভুকশিমইল ইউনিয়ন থেকে পবিত্র দাসের এই ছবিটি ক্যামেরাবন্দি করা হয়েছে।
লাঙল টানার ফাঁকে ফাঁকে কথা হয় পবিত্র দাসের সাথে। তিনি জানান, আশপাশের সবাই বোরো ধানের বীজতলা প্রস্তুতের কাজ শেষ করেছে। নিজের হালের বলদ নেই। ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করবেন, সেই অর্থও নেই। বোরো বীজ বপন না করলে, এবছর না খেয়ে থাকতে হবে। তাই আর উপায় নেই। লাঙল কাঁধে তুলে নিতে হলো।
পবিত্র এবার দেড় একর জমিতে বোরো আবাদ করতে চান। তাই শেষ মুহুর্তে বীজতলা প্রস্তুত করছেন। হাওর পাড়ের মানুষের সারাবছরে এক ক্ষেত, আর তা হলো বোরো। যদি ক্ষেত না করেন তাহলে না খেয়ে থাকতে হবে। পবিত্র দাসের এমন কষ্টের বীজতলা প্রস্তুতের দৃশ্য দেখে কবির সেই কবিতার লাইন মনে পড়ে- সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা। পবিত্র দাসকে কুলাউড়ার বড় সাধক বললে অত্যুক্তি হবে না।
আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি কিংবা সরকারের কৃষি অনুদান কোন কিছুরই পরশ পাননি পবিত্র দাস। তারপরও থেমে থাকেনি তার জীবন সংগ্রাম। বরং অদম্য সাহস নিয়ে নিজের এবং পরিবারে খাদ্য সংস্থান করছেন।
ইতোমধ্যে এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকি তীরে বিলম্বে হলেও মানুষ বীজতলা প্রস্তুতের কাজ শেষ করে বীজ বপন করেছেন। ধানের চারাও বড় হতে শুরু করেছে। এবার স্মরণকালের দীর্ঘ (৭ মাসের) মেয়াদী বন্যার কারণে হাকালুকি হাওর তীরে বোরো ধানের বীজতলা প্রস্তুত করতে কৃষকদের বেগ পেতে হয়।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com