কুলাউড়ায় পশুর হাট ইজারাদারদের মাথায় হাত

July 26, 2020,

কুলাউড়া প্রতিনিধি॥ কুলাউড়ায় করুনার ভয়াল থাবায় উপজেলার বিভিন্ন পশুর হাট ইজারদাররা দিশেহারা হয়ে উঠেছেন। তাদের চোখে মুখে দেখা যাচ্ছে যেনো রাজ্যর বিশাল চাপঁ। কুরবানির ঈদের সময় ঘনিয়ে আসলেও এখনো অধিকাংশ পশুর হাটে ক্রেতা বিক্রেতা ও পশু শূন্য রয়েছে। এসব পশুরহাটে নিয়মিত সাপ্তাহিক হাট ছাড়াও কুরবানির ঈদ উপলক্ষে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে পশুর হাট বসতো প্রতি কুরবানীর ঈদে। কিন্তু (কোভিড ১৯) করুনা ভাইরাসের কারনে এবার পশুর হাটের ব্যতিক্রম চিত্র।
মৌসুমী হাট তো নেই তার উপর নিয়মিত সাপ্তাহিক হাটগুলোতে গুটি কয়েক বিক্রেতা পশু নিয়ে অবস্থান করছেন। এনিয়ে দারুন দুশ্চিন্তায় পড়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব দিয়ে সরকার থেকে পশুর হাট নেওয়া ইজারাদাররা। ইতিমধ্যে কয়েকজন ইজারাদার করুনার কারনে কয়েক মাস হাটবাজার বন্ধ থাকায় ও বর্তমানে ঈদের সময়ও গরুর হাটে ক্রয়বিক্রয় মন্দাভাব থাকায় আর্থিক ক্ষতিপূরণ চেয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি),কুলাউড়ার ইউএনও এবং পৌরসভার মেয়র বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সিলেট বিভাগ ও মৌলভীবাজার জেলার মধ্যে বৃহত্তম গরু-মহিষ ও ছাগলের হাট কুলাউড়ার ব্রাহ্মনবাজার এবং পৌরসভার উদোগে নির্মিত একমাত্র পশুর হাটটি এখন পর্যন্ত ফাকাঁ পড়ে আছে। অনান্য বছরের মতো নেই কোনো ক্রেতা-বিক্রেতাদের জমজমাট পদচারণ।
ব্রাহ্মনবাজার পশুর হাটের ইজারাদার নাহিদ হোসেন জানান, করোনা ভাইরাসের কারনে গত বছর (১৪২৬) বাংলা সনের ইজারা থাকার সময় সরকারী নির্দেশনায় মেয়াদের শেষদিকে ৪ সপ্তাহ বাজার বন্ধ রাখতে হয়েছিলো। এবং এবছর (১৪২৭) বাংলা সনের পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত এক বছরের জন্য এ পশুর হাট সরকার থেকে ভ্যাট, আয়কর ও জামানত সহ মোট ১ কোটি ৬৩ লক্ষ্য ২০ হাজার ৯ শত ৮৬ টাকা রাজস্ব দিয়ে ইজারা নিয়েছেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারনে এ বছরও ৮ টি সপ্তাহ বাজারের সাপ্তাহিক হাট একবারে বন্ধ রাখতে হয়েছিলো। পরবর্তীতে সরকারী বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সীমিত আকারে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হাট আবার চালুর নির্দেশনা আসলেও আগের মতো আর বাজার জমে উটেনি। পরে পশুর হাট বাজার চালু করলেও করোনা ভাইরাসের কারনে বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি একবারে কম থাকায় টুল স্বল্প পরিমানে আদায় হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, কুরবানির ঈদে হয়তো বাজার জমে উঠলে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে উঠতে পারবে তারা কিন্তু করোনার কারনে ক্রেতা-বিক্রেতা বাজারে উল্লেখযোগ্য না থাকায় চরমভাবে মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির সমুখীন হতে হচ্ছে তাদেরকে। যার কারনে ক্ষতিপূরন চেয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক বরাবরে গত ১৮ জুন একটি লিখিত আবেদন করেছেন ইজারাদার নাহিদ হোসেন।
কুলাউড়া পৌরসভার পশুর হাটের ইজারাদার মিজাজুর রহমান জানান, (১৪২৭) বাংলার পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত ভ্যাট,আয়কর ও জামানত চার্জ সহ মোট ৩১ লক্ষ ৯৫ হাজার ৯শত ৯৬ টাকা রাজস্ব পৌরসভার কোষাগারে জমা দিয়ে এ বাজার ইজারা নেন। কিন্তু করোনার কারনে তিনিও ১০ সপ্তাহ এ হাটটি বন্ধ রাখতে হয়েছে। পরবর্তীতে সরকারী বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সীমিত আকারে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হাট আবার চালু করলেও এখনো আগের মতো জমে উঠেনি এই হাট। তিনি আরো জানান, করোনার কারনে সকল জায়গায় বিয়ে,সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় সকল আচার অনুষ্টান বন্ধ থাকায় পশু ক্রয়-বিক্রয় একদম নেই, যার কারনে এবার তাদেরকে মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির সমুখীন হতে হচ্ছে, আর এই ক্ষতি পুষিয়ে উটা তাদের জন্য দুঃস্কর হয়ে উঠেছে। তিনিও ক্ষতি পূরণ চেয়ে পৌরসভার মেয়র এবং সংশ্লিষ্ট কৃতপক্ষেরর কাছে গত ৯ জুলাই একটি লিখিত আবেদন করেছেন।
ইজারাদাররা ছাড়াও উপজেলায় অনেক খামারিরা তাদের কুরবানির পশু নিয়ে পড়েছেন মহা সমস্যায়। সারা বছর এসব পশু গুলোকে কস্ট করে লালনপালন করেছিলেন আসন্ন কুরবানির ঈদে সেগুলো বিক্রি করে মুনফা পাবেন। কিন্তু তাদের কপালেও দুশ্চিন্তার ভাঁজ। কয়েক সপ্তাহ থেকে কোনো ক্রেতার মুখ দেখছেন না খামারি ও বেপারীরা। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর মুটেও জমছে না উপজেলার বিভিন্ন কোরবানির পশুর হাট। ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতি একবারে নাই বললেই চলে। ব্রাহ্মণবাজার ও পৌরসভা ছাড়াও উপজেলার রবিরবাজার,ভাটেরা বাজার, বরমচাল ফুলেরতল বাজার ও ভুকশিমইল বাজারে সাপ্তাহিক ও ঈদের জন্য পশুর হাট বসে, কিন্তু সেই বাজার গুলোতেও ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি একবারে নেই। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে প্রতি বছর ঈদের ১০/১২ দিন আগে থেকেই সাপ্তাহিক হাটের পাশাপাশি মৌসুমী কোরবানির গরু, ছাগলসহ কোরবানির বিভিন্ন পশু বেচাকেনার ধুম পড়ে গেলেও করোনার কারনে অর্থনীতিক মন্দায় এবার সম্পুন বিপরীত। একদিকে চলমান করোনার আতঙ্ক, অন্যদিকে নতুন একটি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গরু। এছাড়া বিভিন্ন কারনে পরিবারকে টাকা দিতে পারছেন না প্রবাসীরা। দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থাও তেমন ভালো না থাকায় সব মিলিয়ে এ বছরের কোরবানির ঈদে বিভিন্ন হাট-বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি অন্যান্য বছরের তুলনায় প্রায় শূণ্যের কোটায়।
এ ছাড়াও জেলার জুড়ী, বড়লেখা, রাজনগর,কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় ক্রেতাদের সাথে আলাপ হলে তারা জানান, এবার ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে গরু তেমন না আসার সুযোগ থাকায় ব্যাবসায়ী ও খামারিরা দেশী গরু-মহিষ বিক্রি করে লাভবান হওয়ার একটা সুযোগ ছিলো কিন্তু করোনার ভয়াল থাবায় অন্যান্য বছরের তুলনায় প্রায় ৫ ভাগের এক ভাগও গুরু, ছাগল নিয়ে হাটে আসছেন না ব্যবসায়ীরা। ক্রেতাদেরও কুরবানিতে চাহিদা নেই অন্যান্য বছরের মত।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা এটি এম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, পশুর হাটের ইজারাদাররা করোনার কারনে হাট বন্ধ থাকায় তারা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করেছেন, কিন্তু যেহেতু সেটা রাষ্ট্রিয় বিষয় তাই সরকার থেকে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসলে আমরা তাদের বিষয়টি দেখবো।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মীর নাহিদ আহসান জানান, আর্থিক ভাবে ক্ষতির সম্মূখীন বিভিন্ন পশুর হাটের ইজারাদারদের ব্যাপারে উপর থেকে কোনো নির্দেশনা আমাদের কাছে এখনো আসেনি। তবে আমরা তাদের সুবিধার্থে এবার যত্রতত্র ভাবে বিভিন্ন জায়গায় পশুর হাট বসতে দিবোনা। এছাড়াও ইজারাদারদের ব্যাপারে পরবর্তী কোনো সিদ্ধান্ত আসলে আমরা তাদেরকে জানিয়ে দিবো।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com