গৃহবন্দী

May 17, 2020,

তাহিরা কামাল॥

আমি পড়ি বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয়ে। চতুর্থ শ্রেণিতে। আমার বাসাও এই স্কুল ক্যাম্পাসে। চারদিকে সারি সারি চা বাগান, রাবার বাগান, ছড়া ও বিল-ঝিলে ঘিরে আছে এই ক্যাম্পাস। তাই  নানান পাখির কিচিরমিচির ও বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ছাত্রছাত্রীদের শোরগোল শুনে আমার ঘুম ভাঙ্গে।

কিন্তু ১৭ মার্চ কী হলো? আমার ঘুম ভাঙ্গছে না। চারদিকে কোনো শব্দ নেই। নিস্তব্ধতার চাদরে যেন সব কিছু ঢাকা। ধীরে  ধীরে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখি স্কুল প্রাঙ্গনে কেউ নেই। মা বললেন যে করোনা ভাইরাসের কারণে আজ থেকে স্কুল বন্ধ। সেদিন থেকে বন্ধুদের সাথে আমার আর দেখা হয়না। মাহি, মুমু, মায়মুনা, সাদিকা, আতিকা, রুহি তাদেরকে প্রায়ই স্মরণ করি। সারা বিশ্বজুড়ে মহামারির কথা শুনার পর থেকেই আমার ঘরের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। মাঝে মধ্যে বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিশ্চুপ হয়ে ভাবি, আমি কি আর ঘর থেকে বের হতে পারব না? বিদ্যালয়ে আমার প্রিয় শিক্ষকদের সামনে বসে ক্লাস করতে পারব না? বন্ধুদের সাথে খেলতে পারব না?

কিন্তু আমার বাসার পেছনের মাঠে বিকাল হতে না হতেই ছোট বড় ছেলে মেয়েদের খেলাধুলা দেখে আমার আর ঘরে মন বসে না। তখন মন খারাপ করে বসে থাকলে মা বলেন, ‘তারা দৃশ্যমান হলেও জীবাণু অদৃশ্যমান। আর এই জীবাণু তাদেরকে আক্রমণ করলে তারা এই পৃথিবী থেকেই অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। তাই আমাদের নিজেদের অবস্থানে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রত্যেকে প্রত্যেকের প্রতি দায়িত্ব পালন করার এখনই সময়। শোননি সেই বিখ্যাত গান, ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য..’

আমার আম্মুও একজন শিক্ষক। তিনি আমাকে খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলেন যে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাটাই সবচেয়ে বড় কাজ। তাই আমি এবং আমার ছোট বোন দুজনই প্রতিজ্ঞা করলাম, করোনা ভাইরাস পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমরা আর বাসা থেকে বের হব না। আমার ভুলেও করোনা ভাইরাসকে আমাদের বাসায় আমন্ত্রণ জানাবো না।

বন্ধুরা, এসো সবাই সচেতন হই। বাসায় থাকি। নিরাপদ থাকি। নিজে বাঁচি। অন্যকেও বাঁচাই। সামাজিক দায়িত্ব পালন করি। সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে এখন থেকেই গড়ে তুলি।

(তাহিরা কামাল, চতুর্থ শ্রেণি,  বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয়।)

 

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com