গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারা ও লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির প্রতিবাদে মৌলভীবাজার এনডিএফ’র বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার॥ গ্যাস-বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তার ও চাল, ডাল তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অব্যাহত সীমাহীন মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটি ২৩ মে সোমবার শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিল পরবর্তীতে সন্ধ্যায় শহরের চৌমহনীস্থ কার্যালয়ে অনুষ্টিত প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা এনডিএফ’র সভাপতি কবি শহীদ সাগ্নিক। সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মো: মোস্তফা কামাল, জেলা এনডিএফ’র সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস, জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তারেশ চন্দ্র দাশ, জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো: সোহেল মিয়া, চা-শ্রমিক সংঘের নেতা হেমরাজ লোহার, এনডিএফ নেতা মো: শাহিন মিয়া ও শ্রমিকনেতা মো: গিয়াস মিয়া প্রমূখ।
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা সাম্প্রতিক সময়ে লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন চাল-ডাল, তেল-লবন-চিনি, মাছ-মাংস, ডিম-দুধ, শাক-সবজিসহ দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে জর্জরিত জনগণের জীবনে নাভিশ্বাস উঠছে।
তার উপর সাম্প্রতিক অকাল বন্যার কারণে সিলেট-সুনামগঞ্জের সাধারণ মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। সরকার কথায় কথায় পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি টানেল, এক্সপ্রেস হাইওয়েসহ বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পের কথা তুলে ধরে উন্নয়নের সাফাই গাইলেও বন্যা নিয়ন্ত্রণে হাওর রক্ষায় সাধারণ বাঁধ নির্মাণ ও নদী-নদী, খাল-বিল খনন করেনি। সরকারের তথাকিথত উন্নয়ন হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে এসডিজি কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে অবাধ লুটপাটের মেগা প্রকল্প। সরকারের মন্ত্রীরা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়ে ব্যবসায়ীদের পক্ষে সাফাই গাইছেন। সরকারে পশ্রয়েই সোয়াবিন তেলের লিটার প্রতি মূল্যবৃদ্ধি হয় ৩৮-৪৪ টাকা। সরকার ডিজেল, কেরোসিন, সিলিন্ডার গ্যাস, গাড়িভাড়া বৃদ্ধির পর এখন গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিরও পাঁয়তারা করছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের দফায় দফায় গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেলের মূল্য ও নিত্যপণ্যের অব্যাহত মূল্য বৃদ্ধি করে শ্রমিক, শ্রমজীবী, স্বল্প আয়ের মানুষ ও ব্যাপক জনগণের জীবন ও জীবিকাকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রেই লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি ঘটলেও শ্রমিক-কৃষক-জনগণের আয় বাড়েনি। করোনাকালে যখন নতুন করে ৩ কোটি ২৪ লাখ মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে চলে গেছেন তখন সরকার জনগণের জীবন ও জীবিকাকে উপেক্ষা গ্যাস-বিদ্যুত-জ্বালানিসহ সকল ক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রত্যাহার করতে চাচ্ছে। অথচ সরকার কালোটাকা ও বিদেশে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। সম্প্রতি অর্থনীতি সমিতির প্রকাশিত তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে দেশে কালোটাকা প্রায় ৮৯ লাখ কোটি টাকা এবং বিদেশে পাচার হয়েছে ৮ লাখ কোটি টাকা। বক্তারা সরকারের ভর্তুকি প্রত্যাহারের নীতির সমালোচনা করে বলেন ভর্তুকি প্রত্যাহার নয়, বরং খেলাপি ঋণ আদায়, বিদেশে পাচার কৃত অর্থ ফিরিয়ে এনে এবং ভ্যাটের আওতা কমিয়ে উচ্চ বিত্তের উপর প্রত্যক্ষ করের হার বৃদ্ধি করে ভর্তুকির পরিমান বৃদ্ধি করতে হবে, জনগণের জন্য স্বল্প মূল্যে সার্বজনীন রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন সমগ্র পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থা এক গভীর ও সামগ্রিক সংকট, দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ, মুদ্রাযুদ্ধ, আঞ্চলিক ও স্থানিক যুদ্ধের প্রক্রিয়ায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে। বিশ্ব বাজার বন্টন পুনর্বন্টন নিয়ে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো যে যুদ্ধ প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা নিয়ে ধারাবাহিক তৎপরতা চালাচ্ছে তারই অংশ হচ্ছে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ। তাই এই যুদ্ধ হচ্ছে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ। এই যুদ্ধের লক্ষ্য হচ্ছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্ব গঠিত সামরিক জোট ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণ নীতি মোকাবেলা করে রাশিয়ার স্বীয় লক্ষ্য হাসিল করা। অন্যদিকে তাইওয়ান স্বাধীনতার ইস্যু নিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও বৃহত সাম্রাজ্যবাদের লক্ষ্যে অগ্রসরমান পুঁজিবাদী চীনের মুখোমুখি অবস্থান ও তাইওয়ান স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে তাকে চীনের রেড লাইন ঘোষণা বিশ্ব পরিস্থিতিকে উত্তেজনাকর করে তুলেছে। আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে বিশ্বযুদ্ধের সম্ভবনা মূর্ত হয়ে উঠেছে। সাম্রাজ্যবাদীরা জোরদার করছে সর্বাত্মক যুদ্ধ প্রস্তুতিকে। তাদের এই যুদ্ধ প্রস্তুতি থেকে আমাদের দেশও মুক্ত নয়। ভূ-রাজনৈতিক ও রণনীতিগত গুরুত্বের প্রেক্ষিতে ভারতীয় উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশকে নিয়েও আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব সুতীব্র। বক্তারা বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, যুদ্ধ উন্মদনার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং জাতীয়-জনস্বার্থ বিরোধী সকল অপতৎপরতার বিরুদ্ধে জাতীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন-সংগ্রাম লক্ষ্যে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ, আমলা দালালপুঁজি বিরোধী সকল দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তির প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। –প্রেসবিজ্ঞপ্তি
মন্তব্য করুন