গ্যাস-বিদ্যুত-জ্বালানিসহ অব্যাহত দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতিতে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠছে : এনডিএফ
![](https://i0.wp.com/www.patakuri.com/wp-content/uploads/2023/03/National-Democratic-Fornt-NDF.jpg?fit=800%2C450)
স্টাফ রিপোর্টার॥ জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার শাখার সম্মেলনোত্তর নবনির্বাচিত জেলা কমিটির এক সভায় বক্তারা অব্যাহত লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন গ্যাস-বিদ্যুত-জ্বালানিতেলসহ অব্যাহত দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতিতে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠছে।
সভায় বক্তারা বলেন সরকার সাম্রাজ্যবাদী সংস্থা আইএমএফ’র নির্দেশে নজিরবিহীনভাবে মূল্যসমন্বয়ের কথা বলে প্রতি মাসে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করছে। এর পাশাপাশি ইতোমধ্যে সকল ধরনের জ্বালানিতেলের রেকর্ড পরিমান মূল্যবৃদ্ধি ও গণপরিবহণের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। এছাড়া চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ ঔষুধপত্র ও কাগজের লাগামহীন ঊর্দ্ধগতি অব্যাহত রয়েছে। কারণ ছাড়াই প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে দ্রব্য মূল্য বাড়ছে।
যেমন এখন প্রতিদিনই ব্রয়লার মুরগীর দাম বাড়তে বাড়তে প্রতি কেজির দাম প্রায় ৩০০ টাকায় ছুয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার সরকার জাতীয় ও জনস্বার্থ উপেক্ষা করে প্রভূ সাম্রাজ্যবাদের সার্থে দেশী-বিদেশী ঋণ গ্রহণ করে মেগা প্রকল্পের নামে অবাধ লুটপাটের মাধ্যমে জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। অন্যদিকে দেশকে ঋণগ্রস্থ করে দেউলিয়াত্বে ঝুঁকিতে ফেলছে।
মূলত আইএমএফের ঋণের শর্ত মেনে দেশ পরিচালনার মধ্যেই নিহিত আছে নয়াউপনিবেশিক দেশের রাষ্ট্রের চরিত্র। বাংলাদেশ একটি নয়াউপনিবেশিক আধাসামন্ততান্ত্রিক দেশ। এদেশের শাসন ক্ষমতায় এযাবত যারা অধিষ্ঠিত হয়েছে তারা সকলেই কোন না কোন সাম্রাজ্যবাদের দালাল সরকার। তাই রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক পরিবর্তন ছাড়া আগামীতেও যারা ক্ষমতাসীন হবে তারা সাম্রাজ্যবাদের আর্শীবাদ নিয়ে ক্ষমতাশীন হবে।
নির্বাচন গণতন্ত্রের পূর্ব শর্ত নয়, বরং গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাই সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি। বিশ্বরাজনীতির পট পরিবর্তনের এই সময়ে নয়াউপনিবেশিক দেশগুলোতে যেমন দালালদের সাম্রাজ্যবাদী প্রভূ পরিবর্তনের দিকটি সামনে আসছে তেমনি আমাদের দেশেও এমনটা হওয়ার সম্ভবনা থাকছে।
তাই এক সাম্রাজ্যবাদের পরিবর্তে আরেক সাম্রাজ্যবাদ নয়, এক দালালের পরিবর্তে আরেক দালাল নয়, সকল সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম তীব্রতর করে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনগণ ও জাতীয় জীবনের জরুরী দাবি-দাওয়া নিয়ে দূর্বার আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলার আহবান জানানো হয়।
সোমবার ২০ মার্চ সন্ধ্যা ৬ টায় শহরের চৌমুহনাস্থ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির এক সভা থেকে এই আহবান জানানো হয়। সভায় ষভাপতিত্ব করেন জেলা এনডিএফ’র সভাপতি শহীদ সাগ্নিক।
জেলা এনডিএফ’র সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাসের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক অবনী শর্ম্মা, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামাল, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়া, মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া, চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক হরিনারায়ন হাজরা, জেলা এনডিএফের কোষাধ্যক্ষ মোঃ গিয়াস মিয়া, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোঃ সুবেল মিয়া, সদস্য মোঃ জমিম উদ্দিন, তাজুল ইসলাম, মোঃ শাহজাহান আলী।
সভায় বক্তারা আরও বলেন চলমান বৈশ্বিক মন্দা তীব্রতর হয়ে মহামন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে। অসম বিকাশের নিয়মানুযায়ী পুঁজি ও শক্তির অনুপাত পরিবর্তিত হওয়ায় বাজার ও প্রভাব বলয় পুনর্বণ্টন নিয়ে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাণিজ্যযুদ্ধ, মুদ্রাযুদ্ধ, স্থানিক ও আঞ্চলিক যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় সামনে আসে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ তথা ইউক্রেন যুদ্ধ যা বছর পেরিয়ে দীর্ঘস্থায়ী সম্প্রসারিত হয়ে পারমাণবিক যুদ্ধ ও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপদকে তরান্বিত করছে।
আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী এ যুদ্ধের প্রেক্ষিতে একপক্ষে রয়েছে মার্কিনের নেতৃত্বে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো তথা ন্যাটো, অপরপক্ষে রয়েছে সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়া ও বৃহৎ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিতে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে অগ্রসরমান পুঁজিবাদী চীন। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থল সংযোগ সেতু এবং প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরের সংযোগকারী মালাক্কা বঙ্গোপসাগরীয় দেশ হিসাবে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক ও রণনীতিগত গুরুত্বের প্রেক্ষিতে এ দেশকে নিয়ে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্রতর হচ্ছে।
বাংলাদেশে মার্কিন প্রাধান্য থাকায় একক পরাশক্তি এদেশকে যেমন কোয়াড-প্লাসে যুক্ত করতে চায় তেমনি পুঁজিবাদী চীন এর বিরোধিতা করে এদেশকে বিআরআই-বিসিম এর ধারাবাহিকতায় এআইআইবি, এসসিও- ব্রিকস এ যুক্ত করার প্রক্রিয়ায় অগ্রসর করে চলেছে। এভাবে সাম্রাজ্যবাদীরা বাংলাদেশকে যুদ্ধে সম্পৃক্ত করার ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে চলেছে। তাই বাজার ও প্রভাব বলয় পুনর্বণ্টন নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও যুদ্ধ তথা বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতির সাথে ভূ-রাজনৈতিক ও রণনীতিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করার বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।
মন্তব্য করুন